ঘৃণা আর বিদ্বেষ প্রচারের উপর ভর করে বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে কুৎসিত ক্ষমতা লোভের তাড়নায় বেপরোয়া হয়ে উঠলে তার পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে মোদী জমানায় মণিপুরই তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ। ঘৃণা ও বিদ্বেষ নির্ভর এই বিভাজনের রাজনীতিই যে মোদী-শাহদের ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধানতম অবলম্বন সেটা আর নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। যখনই জাতীয় স্তরে বা রাজ্য স্তরে নির্বাচন আসুক আরএসএস-বিজেপি নেতারা সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিন্দুত্বের বিষাক্ত প্রচার নিয়ে ধর্ম-সম্প্রদায় ও জাতপাতের বিভাজন তৈরি করতে। তারা জানেন এছাড়া ভোট কুড়োবার আর কোনও উপায় তাদের হাতে নেই। কয়েকদিন আগে হরিয়ানায় এমনটাই করেছে। এখন মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে উন্মাদের মতো সেই প্রয়াসই চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা যদি চলতে থাকে তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারত মণিপুর হতে বেশি সময় লাগবে না।
বহু বছর ধরে আরএসএস’র নীরব সক্রিয়তায় মণিপুরে বিভাজনের উর্বর জমি তৈরি চলছে। সেই জমিতে বিভাজনের রাজনৈতিক বীজ পুঁতেছে বিজেপি। তারই ফসল মণিপুরের বিজেপি সরকার। মণিপুরের বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান ও জনবিন্যাসকে আরএসএস-বিজেপি দক্ষতার সঙ্গে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করেছে। রাজধানী ইম্ফলকে ঘিরে সমতল ভূখণ্ডে প্রধানত সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের বাস। সমতলকে ঘিরে চারদিকে পাহাড়ী অঞ্চলে বাস সংখ্যালঘু কুকি-জো-নাগা উপজাতিদের বাস। সেইতেইরা হিন্দু আর কুকিরা খ্রিস্টান। আরএসএস-বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে মেইতেই-কুকিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করে মণিপুরে। এই ঘৃণা রাজনীতি বিজেপি-কে ক্ষমতায় বসিয়েছে ঠিকই কিন্তু সর্বনাশ ডেকে এনেছে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে সম্পর্কে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে দুই জাতি গোষ্ঠী পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে চলে গিয়ে একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। গত ১৯ মাস ধরে হিংসায় জ্বলছে গোটা রাজ্য। সমতল থেকে সব কুকি জনজাতি উচ্ছেদ হয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তেমনি পাহাড় থেকে সব মেইতেই পালিয়ে সমতলে আশ্রয় নিয়েছে। কুকি সরকারি কর্মী, শিক্ষক, পুলিশ, ব্যবসায়ী সমতল ছেড়ে পাহাড়ে চলে গেছে। একই ঘটনা মেইতেইদের ক্ষেত্রেও। এমনকি শাসক দলের কুকি বিধায়ক-মন্ত্রীরাও রাজধানী-সমতল ছেড়ে চলে গেছেন। এমন ভয়াবহ বিভাজন দেশের আর কোথাও কোনোদিন দেখা যায়নি। মণিপুরে একেবারে পরিকল্পনা করে মোদী-শোহরা সেটা করেছেন। দিল্লি থেকে কলকাঠি নেড়ে একজন কাঠের পুতুলকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে রাজ্যটাকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এমন সর্বনাশ ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী নীরব। তিনি পুরোপুরি মৌনীবাবা সেজে আছেন। মণিপুর নিয়ে তাঁর মুখে কোনও কথা নেই। মণিপুর ধ্বংস হয়ে গেলেও তার কোনও দায় নেই। আসলে মণিপুরে আগুন জ্বালিয়েছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার। এখন সেই আগুন এত বিস্তৃত ও ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে মোদীর ক্ষমতা নেই তাকে সামাল দেবার। মণিপুরে মোদী চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাঁর সরকার অপদার্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে ১৯ মাস ধরে। এমন অপদার্থতা, অযোগ্যতার পর কোন মুখে তিনি কথা বলবেন?
Manipur Modi
মণিপুরে মোদী চূড়ান্ত ব্যর্থ
×
Comments :0