Md Salim

তৃণমূল-বিজেপি’র লুটের রাজত্ব অবসানে বাংলার পুনর্জাগরণে ডাক রাজ্য কমিটির

রাজ্য

 

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল এবং বিজেপি যাতে আর লুটের রাজত্ব চালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য বামপন্থীরা এখনই বাংলার পুনর্জাগরণে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক শেষে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, রাজ্যজুড়ে আন্দোলন সংগ্রামের পর্যালোচনায় আমরা ইতিবাচক লক্ষণ দেখতে পেয়েছি। এই অবস্থায় বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী সংগ্রামে বামপন্থীদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে হবে। যৌবনের ইনসাফ যাত্রায় সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন, রসদ জুগিয়েছেন। রাজ্যে ন্যায় ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে পশ্চিমবঙ্গের পুনর্জাগরণে যৌবনের ডাকে ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের সমাবেশে শ্রমিক, কৃষক,কর্মচারী, ছাত্র, মহিলা সহ সব অংশের মানুষের ঢল নামবে। 

ব্রিগেড সমাবেশের জন্য অনুমতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, কারুর অনুমতি নিয়ে ভাবছি না, ওদের সুমতি হোক এটাই চাইছি। সমাবেশ কেউ রুখতে পারবে না। কলকাতা জনপ্লাবন দেখতে পাবে, কারুর অসুবিধা যাতে না হয় তার জন্যই রবিবার এই সমাবেশ ডাকা হয়েছে। 

নভেম্বরের গোড়ায় অনুষ্ঠিত রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনের পরবর্তী সময়ের পর্যালোচনা করে সিপিআই(এম)’র সিদ্ধান্ত জানিয়ে সেলিম বলেছেন, ঘরে ঘরে প্রচার, জনসংযোগ ও গণসংগ্রহের যে কর্মসূচি শুরু হয়েছিল তা জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে। রাজনৈতিক প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় সমস্যা, ভূমিস্তরের দাবিগুলিও তুলে ধরা হবে। একশো দিনের কাজ নেই। কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। সার নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে। রেশন ও আবাসের দুর্নীতিতে মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। চা বাগান ও চটকলে কর্মরতরা, স্কিম ওয়ার্কাররা চরম সঙ্কটে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গণপরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতিতে ধ্বংস করে সরকারি পরিকাঠামো  বেসরকারি কর্পোরেট হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এসবের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন তীব্র করা হবে। 

লড়াইয়ের পথে এই ঐক্যের রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে সেলিমের সাফ মন্তব্য, বিজেপি এবং তৃণমূল এই দুই দলের সঙ্গে সংশ্রব অথবা ওদের প্রতি কোনও দুর্বলতা যাদের আছে তাদের সঙ্গে আমরা নেই। 

বিজেপি’র বিরুদ্ধে তৃণমূল এরাজ্যে একাই লড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন সেসম্পর্কে সেলিম বলেছেন, কে ওদের ডেকেছিল? তৃণমূলকে এরাজ্যে কেউ ছুঁতেও চায় বলে আমার মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকর্মীদের বলব, ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল মহাকরণে বসার পরেই কংগ্রেসের সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেটা মনে রাখবেন। 

তৃণমূল এবং বিজেপি’র প্রকাশ্য অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দেখিয়ে সেলিম বলেছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মারামারিতে দুই দলই নাজেহাল। বিজেপি ভেঙে পড়ছে বলে আরএসএস’কে সামনে আসতে হয়েছে। খেলা মেলা দেখিয়ে তৃণমূল যে আর লুটের রাজত্ব অবাধে চালাতে পারবে না সেটাও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হাওড়ায় একটি কার্নিভাল করতে গিয়ে মারামারি করছে নিজেদের মধ্যে। 

গ্রেপ্তার হওয়া মন্ত্রী ‘‘বালু অনেক কাজ করেছে’’ বলে এদিনই প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেলিম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, কী কাজ করেছেন? রেশন দুর্নীতি করে টাকা তুলেছেন এবং ৭৫ ভাগ কালীঘাটে পাঠিয়েছেন? এই জন্যই তো আমরা বলছি, কেবল ২৫ ভাগের লুটেরাদের ধরলে হবে না, ৭৫ ভাগের লুটেরাদের ধরতে হবে। এর জন্যই তো ইনসাফ র্যা লি হয়েছে, সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযান হয়েছে, আবার অভিযান হবে।

ইডি-সিবিআই’র বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর বিষোদ্গার সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, আমরা তো দেখছি উলটো। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কি বললেন, আর ইডি-সিবিআই শীতঘুমে চলে গেল। আরএসএস’র সঙ্গে তৃণমূল সমঝোতা করে ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখে যাই বলুন, আদানি থেকে নাগরিকত্ব আইন সহ সব নীতিগত বিষয়ে ওদের অবস্থান এক। সংসদ থেকে যে সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তার মধ্যে তৃণমূলেরও সাংসদ রয়েছে। কিন্তু সাসপেনশনের প্রতিবাদে অন্যরা দেশজুড়ে প্রতিবাদ করেছে, মমতা ব্যানার্জি হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশবাসীর কথা তো দূর, নিজের পরিবার ছাড়া মমতা ব্যানার্জি আর কারুর কথাই ভাবেন না। 

মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু উন্নয়নের যে দাবি করেছেন তা উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, ভোট এলেই ওঁর সংখ্যালঘুদের মনে পড়ে। ওয়াকফ সম্পত্তির চুরি ঠেকাতে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেড়ে নেওয়া আটকাতে, মাদ্রাসা বোর্ডে দুর্নীতি ঠেকাতে, সংখ্যালঘুদের স্টাইপেন্ড স্কলারশিপ চুরি ঠেকাতে, হাওড়ায় দাঙ্গা থামাতে, মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যালঘুদের প্রতি দরদ কোথায় ছিল? আনিস খান, মইদুল মিদ্যা খুন হয়ে গেলেন, তার ইনসাফ পাওয়া গেল না কেন? ধর্মীয় বিভাজন উসকাতে অনুপ্রবেশের কথা তো বাজপেয়ীর আমল থেকে মমতা ব্যানার্জিই তুলেছেন। কেবল নির্বাচন এলে বিজেপি’র বিপদ দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়ার জন্য উনি সংখ্যালঘু দরদ দেখান।

Comments :0

Login to leave a comment