নতুনপাতা : মণ্ডা মিঠাই
যতীন দাস এর আত্মত্যাগ
অরিত্র দাস
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান প্রমাণ করেছে যে তারা ভারত মাতার সন্তান। তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিপ্লবী যতীন দাস এর আত্মত্যাগ, যার আত্মত্যাগ শুধু ব্রিটিশ জেল কর্তৃপক্ষকে নত করেননি, ভারতের অহিংস স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের হৃদয় ও ব্যথিত করেছে।
যতীন দাস গণ আন্দোলনে সকলের নজর কেড়েছিলেন ১৯২৯ সালে । সে সময় ভগত সিং সহ বহু বিপ্লবীর বিচার চলছিল। তাদের সবাইকে লাহোর জেলে বন্দী করা হয়েছিল। সেই সময় জেল কর্তৃপক্ষ বিপ্লবীদের প্রতি খুবই খারাপ ব্যবহার করতো। এর বিরুদ্ধে বিপ্লবীরা আদালত ও জেল প্রশাসনের সামনে কিছু দাবি পেশ করলেও ব্রিটিশরা তাদের বক্তব্যে কর্ণপাত করেননি। এর ফলেই বিপ্লবীরা অনশন করার সিদ্ধান্ত নেন যার মধ্যে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন যতীন দাস।
যতীন্দ্রনাথ দাস বা যতীন দাস ১৯০৪ সালে ২৭ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবী ও পড়াশোনায় শীর্ষস্থানীয় ছাত্র। তার মা মারা যান যখন তার ন বছর বয়স। তিনি তার পিতার দ্বারা প্রতিপালিত হন। ১৭ বছর বয়সে অধ্যয়নকালে তিনি গান্ধীজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন, যার কারনে তিনি জেলেও যান।
প্রথমবারের মতো সে সময় তিনি জেলে অনশন করেন।গান্ধীজী যখন সিদ্ধান্ত নেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ করার, তখন যতীন দাস সিদ্ধান্ত নেন যে অন্যান্য যুবকদের মতো তিনি বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গী হবেন। তিনি বাংলার বিখ্যাত বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯২৫ সালের বি এ পড়ার সময় তাকে গ্রেফতার করে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠানো হয়। এখানে যতীন দাস বিপ্লবীদের প্রতি ব্রিটিশদের আচরণের বিরুদ্ধে ২০ দিনের অনশন করেছিলেন, যা শেষ করতে জেল সুপার তার কাছে এসে ক্ষমা চান।
তিনি বোমা তৈরির বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। যতীন দাস ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ ও বুদ্ধিমান বিপ্লবী। তিনি শচীন্দ্রনাথ সান্যাল এর কাছ থেকে বোমা তৈরীর কৌশল রপ্ত করেন। তার দক্ষতার কারণে রামপ্রসাদ বিসমিল , ভগৎ সিং , চন্দ্রশেখর আজাদ তাকে হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অ্যাসোসিয়েশনে অন্তর্ভুক্ত করেন।
৮ এপ্রিল ১৯২৯ সালে যতীন্দ্রনাথ দাসের তৈরি বোমাগুলি ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত কেন্দ্রীয় পরিষদে নিক্ষেপ করেছিলেন। এরপর ১৯২৯ সালের ১৪ জুন যতীন দাস গ্রেফতার হন এবং সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের অভিযোগে লাহোর ষড়যন্ত্রের জন্য তাকে বিচার করা হয়েছিল।
লাহোর জেলে বিপ্লবীদের রাজনৈতিক বন্দিদের মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তাদের সাথে দাগী অপরাধীদের চেয়েও অমানবিক আচরণ করা হতো। পচা খাবার দেওয়া হত, তাদের কাপড় ধোয়ার অনুমতি ছিল না। না তাদের বই পত্র দেওয়া হতো,না লেখাপড়ার জন্য কাগজ-কলম দেওয়া হত। বিপ্লবীরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন করেন।
জেলের কর্মকর্তারা বিপ্লবীদের দাবির কাছে মাথা নত করেননি। যতীন দাসের পূর্বে অনশনের অভিজ্ঞতা ছিল। ব্রিটিশদের সমস্ত প্রচেষ্টা স্বত্বেও তিনি অনশন ভঙ্গ করেননি এবং ৬৩ দিনের ধর্মঘটের পর ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে যতীন দাস মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সারা প্রশাসনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বিপ্লবীদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে হয়।
কিন্তু যতীন দাস এর মৃত্যুর প্রভাব শুধু তাই নয়। এর প্রমাণ শুধু সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েনি,ইউরোপেও পৌঁছেছে। এমনকি কংগ্রেসের নেতারা যারা বিপ্লবীদের সাথে একমত নন যেমন:-গান্ধীজী,মতিলাল নেহেরু,জহরলাল নেহেরু,নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। তার শেষ যাত্রায় প্রায় ৫ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের জনপ্রিয়তার প্রভাব দেখে, ব্রিটিশরা এর পরবর্তী সময়ে নীরবে ভগৎ সিং, সুখদেব এবং রাজগুরুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শেষকৃত্য করেন।
বাংলার জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে যতীন দাস এর একটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
দশম শ্রেণী
কল্যাননগর বিদ্যাপীঠ ,
খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
সারদা পল্লী উত্তর নাটাগড় পানশিলা, উত্তর ২৪ পরগনা
৮৯৮১৫৫৯৩৯৯
Comments :0