TMC

ভাইপো নেই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভায়, পরে মমতার বাড়িতে

রাজ্য

নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বে এ‍‌ই মুহূর্তে তৃণমূলে কোণঠাসা ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। দলে প্রথম সারির নেতারা তাঁকে এড়িয়ে চলছেন। সোমবার দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায়নি। বরং প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দলের নেতাদের ভাষণে এমন কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে যাতে আরও অস্বস্তিতে ‘ভাইপো’। তবে সোমবার সন্ধ্যায় অভিষেক ব্যানার্জি গেছিলেন মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে। দুজনের কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। তবে তা নিয়ে মুখ খোলেননি অভিষেক। এদিন ফিরহাদও গেছিলেন মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে।
দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, এখন আর কেউ-ই সুবল মান্না হতে চাইছেন না। প্রসঙ্গত, কাঁথিতে এক অনুষ্ঠানে শিশির অধিকারীর পা’য়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন সেখানকার পৌরপ্রধান সুবল মান্না। তাঁকে ‘গুরুদেব’ বলে সম্মোধন করেন। তারপরেই দলের রোষে প‍‌ড়েছেন পৌরপ্রধান। তাঁকে পৌরপ্রধানের পদ থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমন দলীয় কাউন্সিলরদের তাঁর প্রতি অনাস্থা আনারও নির্দেশ দিয়েছে দল। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন দলের শীর্ষ নেতারা আর কালীঘাটে ভাইপোর অফিসমুখী হচ্ছেন না। ওই বর্ষীয়ান নেতার কথায়, কে আর যেচে ‘কোপ’ খে‍‌তে চায় বলুন।
গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় দলের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ভাইপো সম্পর্কে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘অনেক বড় হ‍‌য়ে গিয়েছি’ মনে করে কেউ কেউ অন্যদের পাত্তা দেবেন না, এটা চলতে পা‍‌রে না। পুরানো চাল ভাতে বাড়ে। আমার সাফ কথা দলের সিনিয়রদের মর্যাদা দিতে হবে। দলনেত্রী ওই সভা থেকে‍‌ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার জন্য ২০ জনের কোর কমিটি গঠন ক‍‌রে দেন। ওই কমিটিতে যে ১১জন নতুন মুখ আনা হয়েছে যাঁদের দীর্ঘদিন সেভাবে দলের কর্মসূচিতে প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, আজও তিনি জনসংযোগের প্রশ্নে দলের যে কোনও নবীন নেতার চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ। আজও তাঁকেই বলতে হয়, রাজ্যের সব কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী।
ইন্ডিয়া জোটের কমিটিতে ভাইপোকে রেখেছেন, ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। এদিন দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যা কিনা অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এলো। এদিন প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সুব্রত বক্সি, সুদীপ  বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ দলের প্রবীণ নেতাদেরই প্রাধান্য ছিল। ওই অনুষ্ঠানে দলের এই শীর্ষ নেতাদের মুখে এমন কিছু কথা শোনা গেছে যেখানে অভিষেক পন্থী নবীনদের সঙ্গে প্রবীণ নেতাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকটভাবে ধরা দিয়েছে, সুব্রত বক্সির কথায়, ‘‘অভিষেক ব্যানার্জি আমাদের সর্বস্তরের দেশের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক, স্বাভাবিকভাবেই এই নির্বাচনে যদি উনি লড়াই করেন, নিশ্চিতভাবে আমাদের ধারণা উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি উনি লড়াই করেন, তবে মমতা ব্যানার্জিকে সামনে রেখেই লড়াই করবেন উনি।’’ সুব্রত বক্সির এই ভাষণের পর দলের মধ্যেই কয়েকটি ‘শব্দবন্ধ’ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে অভিষেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সুদীপ বন্দোপাধ্যায় ছিলেন আরও আক্রমণাত্মক। তাঁর কথায় ‘‘মমতা না থাকলে তৃণমূল সারা দেশে ছাগলের তৃতীয় সন্তানে পরিণত হবে।’’ যে দুর্নীতি দায় এড়াতে ভাইপো হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাকেই টেনে এনেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেউ কেউ টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন। চুরি হয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু আমরা সবাই চুরি করিনি। দলনেত্রীর প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, মমতা ব্যানার্জি দুর্নীতি করেননি, করেন না, করতে পারেন না, তিনি সততার প্রতীক। তিনি এসব দুর্নীতি সহ্য করবেন না। অর্থাৎ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন দলনেত্রীর গায়ে যাতে দুর্নীতির কালি না লাগে তার জন্য ব্যাটন ধরেছেন। ভা‍‌ইপোকে আড়াল করার দায়িত্ব সিনিয়র নেতারা নিতে চাইছেন না। 
গত ২৪ নভেম্বর নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে সশরীরে হাজির ছিলেন না ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। সেখানে কয়েক মিনিটের জন্য তাঁর ভার্চুয়ারি উপস্থিতি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। দলের পক্ষ থেকে বলা হয় চোখের অসুবিধার জন্য তিনি আসতে পারেননি। কিন্তু ভাইপোর ছবি ইন্ডোরে না থাকাটা দৃষ্টি এড়ায়নি তাঁর অনুগামীদের। বলা যায় তারপর থেকেই তৃণমূলের মধ্যেকার গন্ডগোল সামনে আসতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠা দিবসের আগে কালীঘাটের অফিসে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদকে বোঝাতে যান নেতা। শনিবার ওই বৈঠকে ছিলেন কুনাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু, পার্থ ভৌমিক, তাপস রায়ের মতো গুটিকয়েক নেতা। যাঁদের কে ঠিক দলের প্রথম সারির নেতা বলা যায় না। তবে এঁরা ভাইপোর ঘনিষ্ঠ, এটাই মূল পরিচয়। তাঁদের বোঝানোতে কোনও কাজ হয়নি, হওয়ারও নয়। সাংসদ জানিয়ে দেন, তিনি নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবার দেখার পর দল যদি কোনও কর্মসূচি দেয়, তাই করবেন। ‘দিদি’ই নেত্রী, তিনি যা বলবেন তাই করবেন।
সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অবশ্য তৃণমূল দলের এই গন্ডগোলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর কথায় তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোল মান তো একপক্ষ তৃণমূল আর এক পক্ষ বিজেপি। ওরা ঠিকঠাক থাকুন, রোজ রোজ এই গন্ডগোল মানুষের আর ভাল লাগছে না। সুব্রত বক্সি কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি জানি না। আসলে তো মুখ্যমন্ত্রী আর ভা‍ইপোর মাঝখানে মোদীজী রয়েছেন। উনিই সব গন্ডগোল মিটিয়ে দেবেন। আসলে তো মোদীজীর কাছে সব ধরা প‍‌ড়ে গেছে। এবার রেহাই পেতে গেলে মোদীজীর পা’য়ে হাত দিয়ে বসে থাকতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment