প্রবন্ধ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
বিজ্ঞ খুঁজছেন নাসিরউদ্দিন
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
বাজারে বিজ্ঞ খুঁজতে বেরিয়েছেন নাসির উদ্দিন। চারপাশে যারা নিজেদেরকে বিজ্ঞ বলে পরিচয় দেয় তাদের সঙ্গে কথা বলে নাসির উদ্দিনের মনে হলো এরা কেউই বিজ্ঞ নয়। নাসির উদ্দিন এদের যথোচিত সম্মান দেখায়নি বলে রাজদরবারে তলব পড়লো। রাজা মশাইয়ের সামনে নাসির উদ্দিন বিজ্ঞদের কাছে জানতে চাইলেন রুটি কি? সবার উত্তর আলাদা আলাদা। নাসির উদ্দিনের জবাব যারা রুটি কি এই সামান্য বিষয়ে একমত হতে পারেন না তারা কি করে বিজ্ঞ হবেন? নাসিরউদ্দিনের এই গল্প আমাদের সবার জানা। আবার নাসিরউদ্দিন যাদের বিজ্ঞ বলে মনে করেছিলেন সেরকম বিজ্ঞ আমাদের চারপাশে কম নেই। আর সে কারণেই নাসিরউদ্দিন কখনো পুরনো হন না। তাঁর মোসাহেবি দেখে আমাদের একালের মোসাহেবদেরকে চিনতে খুব একটা ভুল হয় না। এক গভীর চোখ দিয়ে তিনি চিনেছিলেন মানুষজন। আর সেই কারণেই রাজাকে মুখের উপর বলতে পারেন তাকে দেখে শিকার করতে গিয়ে ২৬ টা হরিণ শিকার করার পরেও তার কপালে যখন বেত্রাঘাত জোটে তখন এটা বুঝতে অসুবিধে নেই যে কে অপয়া?
নাসির উদ্দিন কি দার্শনিক? নাকি একজন চালাক এবং বিচক্ষণ? নাকি নাসিরউদ্দিন আমরা সবাই। পরিবেশ পরিস্থিতিতে কখনো বোকা, কখনো দার্শনিক , কখনো বা চালাকির মুখোশ পরে নিজেদের অসহায়তাকে আড়াল করি। তবে যাই হোন না কেন, তিনি শুধু হাসান না, তিনি আমাদের ভাবান। দশকের পর দশক শতাব্দীর পর শতাব্দী মহাদেশ থেকে মহাদেশ ছড়িয়ে পড়ে তার গল্প কিংবা অভিজ্ঞতা। বাড়িতে চোর আসলে চুরি করবার মত কিছু না থাকার অজুহাতে স্বেচ্ছালজ্জিত আমরা সে সময় সবাই
নাসিরউদ্দিনই হতে চাই। আর নাসির উদ্দিন প্রজন্মের হাত থেকে প্রজন্মের হাতে পৌঁছে যান।
Comments :0