Ram Ayodhya and independence

সে রাম আছে, অযোধ্যা আছে, স্বাধীনতা নেই

উত্তর সম্পাদকীয়​

অলকেশ দাস

২০২০ সালের ৫ আগস্ট। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমি পূজোর দিন। জমজমাট  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ছিলেন। বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন  যে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা সংগ্রামের দিন। সারা দেশ মানুষের আত্মত্যাগের প্রতিনিধিত্ব করে। আবার রামমন্দিরের ভূমি পুজোর  এই দিনটিও  প্রজন্মের পরম উৎসর্গের দিন যা অবিরাম সংগ্রামকে চিহ্নিত করে। অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে রামমন্দিরের ভূমি পুজোকে সমান উচ্চতায় মোদী দাঁড় করিয়ে দিলেন।

মোদী যে দলের নেতা হিসাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেই বিজেপি’র শিরে বসে আছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্‌ঘ। তাদেরই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন যে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা। প্রকৃত স্বাধীনতা প্রাপ্তি হয়েছে অযোধ্যায়। রামমন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে। মোদী স্বাধীনতা আর রামমন্দিরকে সমান করেছিলেন। এবার আরএসএস প্রধান মন্দিরকে এগিয়ে দিয়ে স্বাধীনতাকে পিছনে ফেলে রাখলেন। আসল স্বাধীনতা হয়ে গেল নকল, আর মন্দিরের মূর্তি স্থাপন হয়ে গেল আসল স্বাধীনতা। মুহুর্মুহু বদলে যাচ্ছে রাজনীতির গতিপথ। শিরায় শিরায় ক্ষমতার লোভ।

একটা রাজনৈতিক স্বাধীনতা। তারই একটা সংবিধান হতে হয়। সেটা তৈরিও হয়েছিল। ওই স্বাধীনতার দর্শনেই। কিন্তু সেই সময়ের দূরদর্শিতায় সেটা চলেনি।  স্বাধীনতা আর সংবিধান সম্পর্কে এই ছিল মোহন ভাগবতের বক্তব্য। স্বাধীনতার এই বিবর্ণ রূপের বর্ণনার বৈপরীত্যে রাম মন্দিরের বর্ণনা ছিল রীতিমতো ঝলমলে। রাম মন্দির নাকি ভারতের 'স্ব'কে জাগ্রত করেছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো পথ তৈরি করেছে। সেই পথ আবার সারা বিশ্বকে পথ দেখাবে। গতবছর রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন রাম মন্দির হচ্ছে জাতীয় চেতনা, জাতীয় বিশ্বাস, জাতীয় ভিত্তি, জাতীয় চিন্তন, মনন। রামকে যত এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ততই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাস্টারদা, বিনয় বাদল দীনেশ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরামেদের। অপাঙ্‌ক্তেয় করে ফেলা হচ্ছে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। 
গোটা স্বাধীনতা সংগ্রামের অস্তিত্বকে কেড়ে নেওয়া কোনও কার্যকারণের সম্পর্কে? সেটা কি এই মনস্তত্ত্বে যে অপরাধী তার অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়? স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অনস্তিত্ব বা বিশ্বাসঘাতকতার মোড়কের ইতিহাস মুছে ফেলার তাগিদ। যেমন সঙ্ঘের নেতা গোলওয়ালকার বলেছিলেন, ব্রিটিশ বিরোধীতাকেই দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদ বলা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের এটা এক ভয়ঙ্কর খারাপ প্রতিক্রিয়া। যা পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। তাই আরএসএস ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করে না। হিন্দুত্বের জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করে। মনে করে না ব্রিটিশ শত্রু। মনে করে মুসলমান শত্রু, পুঁজিবাদী শাসন নয়।

সাইমন কমিশন যখন ১৯২৮ সালে এ দেশে আসে গোটা দেশ উত্তাল হয়। বিক্ষোভ ফেটে চারদিকে। আরএসএস তার থেকে দূরে থাকে। ভগৎ সিং, শিবরাম রাজগুরু, সুখদেও কাপড়ের যখন ফাঁসি হয় লাহোরের সেন্ট্রাল জেলে। সারাদেশে সে সময় মিছিল, সভা, অরন্ধন। ক্ষোভের অভিব্যক্তি সড়ক থেকে রাজপথে। নীরব ছিল আরএসএস। বিনয় বাদল দীনেশেরা জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য করে সারা দেশের স্বাধীনতার বার্তা পাঠাচ্ছে। তার মধ্যে ভালো কিছু দেখেনি সঙ্ঘ পরিবার। সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার  অভিযান, তার দুঃসাহসী পদক্ষেপ, অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি করা, গেরিলা প্রতিরোধ, অত্যাচার সহ্য করে হাসিমুখে ফাঁসি বরণ করা। কিংবা  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সেই ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ করা যার বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল— কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। অসহযোগ আন্দোলন। ভারত ছাড়ো আন্দোলন। এ সবকিছুর থেকে দূরে ছিল মোহন ভগবতের পূর্বসূরিরা। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানিদের বিচারের সময়, নৌ বিদ্রোহের সময়, স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রত্যেকটি সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ছিল ব্রিটিশদের পক্ষে।

এর জন্য পুরস্কারও পেয়েছে তারা। ব্রিটিশ সরকারের হোম ডিপার্টমেন্ট আরএসএস’র প্রশংসা করে বলেছিল— এটা বলা খুব শক্ত যে আরএসএস আইন-শৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হয়েছে। ১৯৪৩-এ যে মন্বন্তর হয় তার পিছনে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ছিল। ছিল তাদের কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট তৈরি করবার কৌশল। প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। ভাত দাও আর ফ্যান দাও-এর সহস্র সহস্র আর্ত চিৎকার সঙ্ঘের কানে পৌঁছায়নি। বরং এটাকে স্বাভাবিক বলেছিল। বলেছিল সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। যোগ্যতমের টিকে থাকা। ব্রিটিশকে দায়ী করাটা মেনে নিতে পারেনি বলে বলেছিল অন্য কাউকে দোষারোপ করলে বুঝতে হবে তার দুর্বলতা আছে। ব্রিটিশ শাসকেরা যখন দখলদার হয় তখন তাতে কোনও দোষ দেখে না মোহন ভাগবতেরা। বলে বড় মাছ তো ছোট মাছকে খাবেই। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। স্বাভাবিকতা। 
স্বাধীনতা সংগ্রামে 'ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি' তত্ত্বে ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দেওয়া সঙ্ঘ পরিবার এবং হিন্দু মহাসভার নেতার সংখ্যা অনেক। এদের শীর্ষ দুই নাম সাভারকার, বাজপেয়ী। এর মধ্যে সাভারকারের রেকর্ড, পাঁচ-পাঁচ বার মুচলেকা আর কেউ দেয়নি। তার ভাষা কি! আমি সর্বদাই ব্রিটিশ সরকারের সাংবিধানিক ও প্রকৃতির উপর আনুগত্য দেখাবো। ব্রিটিশ সরকারের কর্তব্য সমর্থক থাকবো। সরকার যা বলবে তা করতে আমি প্রস্তুত থাকবো। এই পরিবর্তন আমার বিবেক প্রসূত। ভবিষ্যতেও আমি এই ব্যবহারেই থাকবো। এহেন সাভারকারের নামে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার এয়ারপোর্টের নামকরণ হয়েছে। সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতির উল্টো দিকে সাভারকারের চিত্র স্থাপন করা হয়েছে। এই সাভারকার অভিযুক্ত ছিলেন গান্ধী হত্যায়। প্রমাণের অভাবে কোনোমতে ছাড়া পান। সেই সাভারকারকে বীর সাজানো হয়েছে।

সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ যখন দেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তে চলে এসেছে। গোটা দেশ স্বাধীনতার সম্ভাবনায় রোমাঞ্চিত। বাংলা ভাগের নায়ক শ্যামাপ্রসাদ তখন ব্রিটিশ সরকার কে চিঠি লিখেছে— এক্ষুনি হোম কর্পস তৈরি করো। বাংলাকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সাহায্য করবো। এরা বাঁচাবে দেশ,বাংলা!

তাহলে কি শুধুই ব্রিটিশ আপসকামিতা? নেই কোনও সুনির্দিষ্ট চিত্রকল্প ? নেই অন্য কোনও ফ্রেম? যা পৌঁছে দিচ্ছে মানুষকে আর এক ভুলভুলাইয়ায়? আছে। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্বে আর এসএস’র চরিত্র ছিল মানুষকে হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে ব্রিটিশ শাসনকে একদিকে শক্তিশালী করা অন্যদিকে জমিদারি শাসনে জর্জরিত কৃষক সমাজের সামন্ততন্ত্র থেকে মুক্তির আন্দোলনে উত্তরণের পথকে বিনষ্ট করা। মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের লড়াইকে দুর্বল করা। আর এখন তাদের কাজ অর্জিত যে স্বাধীনতা তাকে আজকের ফিন্যান্স পুঁজি এবং হিন্দুত্বের যুপকাষ্ঠে বলি দেওয়া।

১৮৫৭ সিপাহীদের বিদ্রোহ যা প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে চিহ্নিত ভিত নড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ শাহির। হিন্দু মুসলিম ঐক্য সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে উপনিবেশকে বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে— এই সম্যক ধারণা ব্রিটিশদের তৈরি হয়। সেই সময় থেকেই ডিভাইড অ্যান্ড রুল। সম্প্রীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা জনগণকে ধর্ম এবং জাতি ইত্যাদিতে বিভাজিত করার কৌশল সাম্রাজ্যবাদ এদেশে গ্রহণ করতে থাকে। সাম্প্রদায়িকতায় মোড়া বিকৃত ইতিহাস তৈরি করার শুরুও তখন থেকে। হিন্দু মহাসভার পত্তন ১৯১৫ সালের কুম্ভমেলায়। তখন কংগ্রেস থেকে হিন্দু মহাসভা যাতায়াতটা স্বাভাবিক ঘটনা। যেমন মদনমোহন মালব্য। তিনবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি, তিনবার হিন্দু মহাসভার সভাপতি। ইনি হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান স্লোগানের উদ্ভাবক। গোরক্ষা আন্দোলনের নেতা। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। হিন্দু জঙ্গিত্বে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যেই মোদীর হাতে ২০১৫ সালে ভারতরত্ন পাওয়া। সুতরাং আজকের ধর্মীয় বিভাজনের শিকড় অনেক গভীরে। সাভারকার যখন ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দেন তখন ব্রিটিশরা প্রস্তাব কার্যত লুপে নেন। তারপরই সাভারকার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। জেলে বসে 'হিন্দুত্ব' নামক পুস্তিকা লিখে ফেলেন। ব্রিটিশদের বদান্যতায় জেলের কড়া আগল পেরিয়ে তা বেরিয়ে যায় বাইরে। এখানে লেখা থাকে হিন্দু জাতির ধারণা। বলা হয় হিন্দুত্ব এক সামগ্রিক ইতিহাস। হিন্দুস্থান হলো হিন্দুদের পিতৃভূমি ও পূণ্যভূমি। সেই নিরিখে ভিন্ন জাতি মুসলমান ও খ্রিস্টানদের ভারতীয় জাতীয়তার অংশ হিসাবে গণ্য করার সমস্ত সম্ভাবনা বাতিল হলো। তারা হয়ে গেল বিদেশি। ১৯৪০ সালে জিন্না যেমন দ্বিজাতি তত্ত্বের মধ্য দিয়ে পৃথক পাকিস্তানের কথা বলল, ঠিক তেমনি সাভারকারও ১৯৪৩ সালে তাতে সহমত হয়ে বলল পৃথক হিন্দু রাষ্ট্রের কথা । বললেন রাজনীতির হিন্দুত্বকরণ এবং হিন্দুদের সামরিকীকরণের কথা।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নামও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। যে হিন্দুত্বের উপর সংগঠন প্রতিষ্ঠিত তার নাম রাখা হলো না এই ধারণায় যে রাষ্ট্র এবং হিন্দু পরস্পরের পরিপূরক। এই সংগঠন জুড়ে রইলো আধ্যাত্মিকতা, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, পরজন্ম ইত্যাদি। সাভারকার বলেছিল যে দেশে চতুর্বর্ণ ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই সেই দেশকে ম্লেচ্ছদেশ বলা উচিত। গোলওয়ালকার চতুর্বর্ণ ব্যবস্থাকে এক মহত্তম এবং বৈজ্ঞানিক সামাজিক শৃঙ্খলা হিসাবে অভিহিত করেছেন। বর্ণব্যবস্থাকে এরা ব্রাহ্মণ্যবাদের নেতৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে। গণতন্ত্রের লেশমাত্র এদের নেই। এদের সরসঙ্গচালক যেমন একা নিজে পরবর্তী সরসঙ্গচালক মনোনীত করেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে অশেষ ঘৃণা ও বিদ্বেষ এবং হিন্দুদেরকে জাতি হিসাবে সংগঠিত করা, হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করার পথে এগিয়ে চলা— এই হলো চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্যই জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করতে হয়। যা পরিণতি হয় হিন্দু জাতীয়তাবাদে। দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, তথাকথিত নিম্ন বর্ণের সমতার দাবি, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, শ্রমজীবী মানুষের লড়াই, কৃষকের ছোট বড় লড়াই— এই সব কিছুতে নিপীড়ক ব্যবস্থাকে আড়াল করতে, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে দুর্বল করতে হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনের আহ্বান শাসকের এক কৌশল।
অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ৪৪ টা সিংহদ্বার ,৩৯২টা স্তম্ভ। আলোয় ঝলমল। বাল্মীকির নামে এয়ারপোর্ট । বন্দে ভারত ইত্যাদি বিলাসী ট্রেনের ছড়াছড়ি। কেউ কি একবার ভাবছে ওখানে ৫০০ বছরের মসজিদ ছিল? ৩০০ বছর ওখানে নামাজ পড়া হয়েছে। মসজিদটা ভাঙার সময় ৭৫ হাজার লোক ছিল। মসজিদ ভাঙার পর ২০০০ লোক দাঙ্গায় খুন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনায় মন্তব্য করেছিল-আইনের শাসনের জঘন্য লঙ্ঘন। আর এখন মোহন ভগবত বলছেন কারোর বিরোধিতা করে রাম জন্মভূমি আন্দোলন পরিচালিত হয়নি। পরিতাপের বিষয় এই যে সেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে মন্দির বানাতে। মসজিদ ভাঙায় অভিযুক্তদের হাতে। মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর। কেবলমাত্র বিশ্বাসের উপর ভর করে। মোদী, ভাগবত অবশ্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেননি। রাম মন্দির স্থাপনকে বলা হচ্ছে দি রিভাইভাল অব হিন্দু গোল্ডেন এজ । এটাই নাকি দেশপ্রেমের চূড়ান্ত নিদর্শন। আসলে রাম মন্দিরটা একটা বড় রাজনৈতিক প্রকল্প। একদিকে নির্বাচনী সুবিধা আরেকদিকে সংসদীয় ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পুঁজির সহযোগী ভূমিকা পালন করা। জাতীয়তাবাদকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার প্রতীক হচ্ছে রাম মন্দির। হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে এক ধাপ। এইজন্য বলা হচ্ছে বাবরি মসজিদ ছিল অসহিষ্ণুদের বিজয়। আর রাম মন্দির স্থাপন হচ্ছে সহিষ্ণুদের বিজয়! আখলাক থেকে দাভোলকর সহিষ্ণুতার কি নিদারুণ নিদর্শন! যারা শেষমেশ অধৈর্য হয়ে বলতে চাইছিল মন্দির চাইছে যখন দিয়ে দাও সব ঝামেলা মিটে যায়— তারা কি ভাবছেন? এটা কি এমন একটা ব্যাপার যে শিশু কাঁদছে তার হাতে ললিপপ তুলে দাও। রাম মন্দির হিন্দুত্ববাদী শাসকের তার শাসনের রাজনৈতিক প্রকল্প। এমন ইস্যুগুলোর সঙ্গে তা ক্রমাগত ইন্ধন জোগায় যা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরি করতে পারে। এইভাবেই তারা ক্ষমতা দখল করবার সুসংহত উপায় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। এইজন্যেই মথুরা,কাশী, আজমির শরীফ দরগা রাজস্থান, সম্বল শাহী জামা মসজিদ ইত্যাদি নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। চলতে থাকবে। বিষাক্ত হিন্দুত্ব আর নয়া উদারীকরণে সম্পৃক্ত পুঁজিবাদের মিশেল স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, বহুত্ব, বৈচিত্র ,জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণার বিরোধী। এই সবগুলো ধারণার আধার সংবিধান। আজকে সেই জন্য এদের হাতে আক্রান্ত।

Comments :0

Login to leave a comment