STORY — SOURISH MISHRA — RAMDHANUE — NATUNPATA — 15 NOVEMBER 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — রামধনু — নতুনপাতা — ১৫ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  RAMDHANUE  NATUNPATA  15 NOVEMBER 2025 3rd YEAR

গল্প  


রামধনু

  ------------------------ 
  সৌরীশ মিশ্র
  ------------------------ 

নতুনপাতা

 

ছোটোবেলা থেকেই বেশ ভোরে ওঠা অভ্যাস আমার। আমার মেয়ে কুঁড়িও ঘুম থেকে ওঠে ভোর-ভোর। কেয়া, মানে কুঁড়ির মা-র একটু দেরী হয় উঠতে। আমি আর কুঁড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে আসি আমাদের বাড়ির ছাদে। অল্প-বিস্তর ফুলগাছ আছে টবে। কুঁড়ি ফুলের সাজিটা নিয়ে এসে ফুল তোলে। জবা, অপরাজিতা, টগর...
আজও তেমনই আমি আর মেয়ে ছাদে গাছগুলোর মাঝে সময় কাটাচ্ছি। ক'দিন হোলো হালকা একটা ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব অনুভব করছি এই সময়টায়। কাল থেকে ঝিরঝির করে বৃষ্টিও হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। ফুল তোলা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে কুঁড়ির। সাজিটা রেখেও এসেছে সে ঘরে। এখন কুঁড়ি ছাদময় নেচে নেচে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর গুনগুন করে কি একটা যেন গান গাইছে নিজের মনে। হঠাৎই কুঁড়ি চেঁচিয়ে উঠল, "বাবা, আকাশে রামধনু, রামধনু!"
মেয়ে আকাশের যেদিকে তাকিয়ে আছে সেইদিকে তাকাই আমিও সাথে সাথে। আমাদের পাশের বাড়ির ছাদ জুড়ে টিনের শেড। আর, আমাদের বাড়ির সামনে মস্ত একটা নিম গাছ। তাই ছাদ থেকে পুরো দেখা যাচ্ছে না রামধনুটা। তবুও, এই বা কম কি! ক'জন আজকাল শহরাঞ্চলে থেকে দেখতে পায় রামধনু? দু'চোখ ভরে দেখতে থাকলাম রামধনুটাকে। 
আর এদিকে কুঁড়ি ক্রমাগত লাফাচ্ছে, হাততালি দিচ্ছে আর বলছে, "কি মজা, কি মজা, রামধনু, রামধনু..."
আমি মেয়ের পাশটায় গিয়ে দাঁড়াই। বলি, "মা, তোকে রামধনুর ইংলিশ শিখিয়েছিলাম, মনে আছে?"
আমার মুখের দিকে তাকায় কুঁড়ি। একটু ভাবে। তারপরই বলে ওঠে, "হ্যাঁ বাবা, মনে আছে।"
"বলতো দেখি?"
"রেনবৌ, তাই না বাবা?"
"রেনবৌ না মা, রেনবো।"
"ও হ্যাঁ হ্যাঁ, রেনবো রেনবো।" একটু থামে মেয়ে, কি যেন ভাবে, তারপর ফিক্ করে হেসে বলে ওঠে, "আমি কি বোকা, না বাবা, রেনবো কে রেনবৌ বলছি?"
"ভুল তো সবারই হতে পারে মা। আর তুমি তো সবে সবে শিখছো এখন। ও ঠিক হয়ে যাবে।" মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি।
"আর দেখো ভুল হবে না কক্ষনো বাবা, ঠিক দেখো।" বলে মেয়ে।
"ঠিক আছে।"
এরপরের কয়েকক্ষণ বাপ-বেটি মুগ্ধ হয়ে দেখতেই থাকি রামধনুটা। ওটার ঔজ্জ্বল্য যেন বেড়েছে বেশ কিছুটা এরই মধ্যেই। হঠাৎ কুঁড়ি ফের বলে ওঠে, "আমি এই নিয়ে সেকেন্ড টাইম রামধনু দেখছি, না বাবা? মনে আছে তোমার বাবা, আগের বার-ও দেখেছিলাম ছাদ থেকেই। তবে সেটা বিকেলবেলা ছিল। মনে আছে বাবা?"
"হ্যাঁরে মনে আছে।"
"বাবা, মা-কে ডেকে নিয়ে আসি? আমি আর তুমি দেখব রেনবৌ, না না সরি সরি, আবার ভুল বললাম, রেনবো দেখবো, মা দেখবে না, সেটা একদম ভালো হবে না, না বাবা? যাই তবে মা-কে ডেকে নিয়ে আসি?"
"ডাকবি?" বলি আমি, "কিন্তু, তোর মা কি ঘুম থেকে উঠেছে..."
"ওঠেনি তো কি! আমি ডেকে তুলব। রামধনু কি প্রতিদিন উঠবে?"
অকাট্য যুক্তি। এর পরে আর কোনো কথা চলে না। তাই বলি, "যা, ডেকে নিয়ে আয়।"
আমার বাক্যটা শেষ হওয়া মাত্রই "বন্দে ভারত"-এর গতিতে ছুট লাগায় কুঁড়ি। নিমেষের মধ্যেই ছাদের দরজা পেরিয়েও যায়। পর মুহূর্তেই কানে ভেসে আসে মেয়ের কণ্ঠস্বর, “মা, আকাশে রামধনু উঠেছে, দেখবে না...”

Comments :0

Login to leave a comment