পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর সমানাধিকারের লড়াই করতে হবে, অধিকার অর্জন ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি কলকাতা জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় এই আহ্বান জানান সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ।
তিনি বলেন, মাইক্রোফিনান্সের জালে মহিলাদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতার বৈচিত্রকে মাথায় রেখে লড়াই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
মহিলা সমিতির ২৯তম কলকাতা জেলা সম্মেলন লক্ষ্মীমণি ব্যানার্জি মঞ্চ ও অভয়া নগরে সংগঠিত হচ্ছে। মোট ৩২০ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
শনিবার কলকাতায় সিআইটিইউ রাজ্য দপ্তর শ্রমিক ভবনে পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদিতে মাল্যদানের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়।
পতাকা উত্তোলন করেন মহিলা সমিতির কলকাতা জেলা সভাপতি পারমিতা সেন রায়। ছিলেন জেলা সম্পাদক সমিতা হর চৌধুরী, রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা বোস ঘোষ, প্রবীণ মহিলা নেত্রী মিনতি ঘোষ, কুমকুম চক্রবর্তী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রূপা বাগচী, দীপু দাস ও মোনালিসা সিন্হা সহ নেতৃবৃন্দ।
কনীনিকা ঘোষ বলেন, দেশের ও রাজ্য সরকারের কর্মসংস্থান নিয়ে শুধুই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আদতে কিছুই হয়নি। দেশে যেমন বেকারত্ব বেড়েছে, বেড়েছে ছাঁটাই। এর প্রভাব পড়েছে মহিলাদের ওপর। পরিবারের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে মহিলাদের। তিনি বলেন, সামাজিক চাপের পাশাপাশি এসেছে অর্থনৈতিক চাপও। গার্হস্থ্য মহিলাদের যদি মজুরি দেওয়া হতো তাহলে তা দাঁড়াতো জিডিপি’র ৭.৫ শতাংশে। যাঁরা বলেন যে মহিলারা কোনও কাজ করেন না তাদের এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবগত করার প্রয়োজন আছে। গৃহবধূদের বলা হচ্ছে 'কেয়ার গিভার', মানে যাঁরা পরিচর্যা করেন। এই অংশকে মান্যতা দেওয়ার দায়িত্বও সমাজের বিভিন্ন অংশ অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বিজেপি-আরএসএস তাদের মনুবাদী ভাবনায় চায় মহিলাদের শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবেই থাকুক। মনুবাদীদের বক্তব্য, মহিলারা সাবলম্বী হতেই পারেন না। ছোট বয়সে বাবা অথবা দাদা আগলে রাখেন আর বার্ধক্যের সময় ছেলে অথবা স্বামী তাদেরকে আগলে রাখবেন। আর এখানেই আসে স্বাধীনতার প্রশ্ন, সমাধিকারের প্রশ্ন। এই ভাবনার বিরুদ্ধে লড়তে হলে মতাদর্শগতভাবেও লড়তে হবে। গোটা পৃথিবীর শ্রমশক্তিতে মহিলারা মোটেও পিছিয়ে নেই। বিশ্বে শ্রমশক্তির ৪৮.৭ শতাংশ মহিলা। দেশে সেই অনুপাত ৩৪.১ শতাংশ ও আমাদের রাজ্যে ২৭.৪ শতাংশ। অসংগঠিত ক্ষেত্রে মহিলারাই সবচেয়ে বেশি কাজ করেন। তাঁদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি তাঁরা পান না।
নেতৃবৃন্দ বলেন যে কলকাতা অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী। এখানেই ভিয়েতনাম মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে মিছিল হয়েছে, পৃথিবীর যে প্রান্তে মুক্তি কায়ে মানুষের উপর আক্রমণ নেমে এসেছে কলকাতা উদ্বেলিত হয়েছে সেই ঐতিহ্যকে বহন করেই আজও প্যালেস্তাইনের মুক্তির সংগ্রামে মহিলারা রাস্তায় নেমেছে।
সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়েছে যে আইসিডিএস ও আশা কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে। যে মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডারও পান না সেই মহিলাদের দাবি নিয়েও মহিলা সমিতি লড়াই করবে। তাই এই সম্মেলনের স্লোগান ‘বিভেদ নয় ঐক্য গড়ি, নারী সম্মান, নারী মুক্তির লড়াইকে জোরদার করি’।
AIDWA KOLKATA
বিভেদ রুখে সমানাধিকারের লড়াইয়ের আহ্বান কলকাতার মহিলা সম্মেলনে
×
Comments :0