Editorial

সুস্থ শ্বাসের নিকৃষ্ট শহর

সম্পাদকীয় বিভাগ

যা ছিল একদা সবুজ রাজধানী, আজ সেটা বিশ্বের প্রথম সারির দূষিত ও বিষাক্ত শহর। যত দিন যাচ্ছে ততই দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির হার বাড়ছে। এবছর দেওয়ালি থেকে দূষণ বৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বৃহত্তর দিল্লি জুড়ে ৩৮ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে দিল্লির বাতাসের দূষণের মাত্রা মাপে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাতে দেখা যাচ্ছে সামগ্রিকভাবে ভারতের রাজধানীতে বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৩৯১। পরিবেশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটা অতি বিপজ্জনক হিসাবে বিবেচিত হয়। অথচ দিল্লির বেশ কিছু এলাকা আছে যেখানে বাতাস অতি বিপজ্জনক থেকেও বেশি বিপজ্জনক। অর্থাৎ বায়ুর গুণমান সূচক ৪০০’র উপরে। এমনকি ৪৫০ ছুঁইছুঁই। এমন এক শহরে বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে কোটি মানুষ। এই বিষাক্ত বাতাস মানুষের জীবনীশক্তি ক্ষয় করছে, ফুসফুসকে ঝাঁঝরা করছে, শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, গন্ডা গন্ডা রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। সর্বোপরি তাদের আয়ু দশ বছর কমিয়ে দিচ্ছে।
গত বছরই আপ কে হারিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়েছে মোদীর দল। দিল্লির পৌর কর্পোরেশনও বিজেপি’র দখলে। আর কেন্দ্রে তো সেই ২০১৪ সাল থেকে গ্যাঁট হয়ে বসে রাজত্ব চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। এক কথায় ট্রিপল ইঞ্জিনের সরকার চলছে দিল্লিতে। আর ট্রিপল ইঞ্জিনের ত্রিমুখী ধাক্কায় দিল্লিবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রমবর্ধমান দূষণের গ্রাসে। অথচ এই প্রসঙ্গে মোদীর মুখে কোনও শব্দ নেই। তাপ উত্তাপ নেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীরও। মাঝখানে অবশ্য বিস্তর আলোড়ন হয়েছিল কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বাতাসকে শুদ্ধ করার হুজুগ তুলে। আরব দুনিয়ায় এভাবে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। চীনেও হামেশাই এমনটা হয়ে থাকে। ভারতকে উন্নত দেশ বানানোর স্বপ্নবিলাসী মোদীরাও জানিয়ে দেন তারাও দিল্লিতে সেভাবে অসময়ে বৃষ্টির ব্যবস্থা করে বাতাসকে দূষণ মুক্ত করবেন। সেইমত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আকাশে রাসায়নিক ছড়িয়ে কৃত্রিম মেঘ সৃষ্টির চেষ্টা করে পুরো ব্যর্থ হলেন। একফোঁটা জলের দর্শনও মেলেনি। উলটে ছড়ানো রাসায়নিকে বাতাস আরও দূষিত হয়েছে। তারপর থেকে নেতা মন্ত্রীর আর কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না। শীর্ষ-সর্বোচ্চ আদালতে থেকে নিত্য গঞ্জনা শুনেও কোনও হেলদোল নেই।
মোদী অপারেশন সিঁদুর দিয়ে বক্তৃতার তুফান ছোটাতে পারেন, নেহরুকে সকাল-বিকাল গাল পেড়ে পরম তৃপ্তি পেতে পারেন, হিন্দু-মুসলিম নিয়ে বিদ্বেষ-বিভাজনে মুখর হতে পারেন, ভোটের জন্য দেশময় ছুটে বেড়াতে পারেন কিন্তু দিল্লির দূষণ-হ্রাসে কিছুই করতে পারেন না। আজ দিল্লির যা হাল কাল বাকি সহনগরগুলিরও সেই হাল হবে যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয় বা নীতি না বদলায়।
দিল্লির দূষিত ও বিষাক্ত পরিবেশ বদলে মানুষের বাসযোগ্য করার ও মানুষকে সুস্থ শ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ বাতাস উপহার দেবার জন্য কোনও উৎসাহ হিন্দুত্ববাদী শাসকদের না থাকলেও দিল্লির বদলে ইন্দ্রপ্রস্থ করতে তাদের উৎসাহের অন্ত নেই।

 

Comments :0

Login to leave a comment