Editorial

মোদীর পুলিশ চরম ব্যর্থ

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত এক দশক ধরেই ভক্তরা বলে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর হাতে নাকি দেশ এবং দেশের মানুষ সুরক্ষিত। কিন্তু কেমন সুরক্ষিত সেটা জানান দিয়েছে দিল্লির লালকেল্লা চত্বর। কেল্লা এবং মেট্রো স্টেশনের অদূরে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পুড়ে গেছে অনেকগুলি গাড়ি। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে এবং আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯ জনের। আহতের সংখ্যাও অনেক। গত কয়েক মাস ধরে অপারেশন সিঁদুরের গৌরব গাঁথা, কয়েক বছর ধরে দেশকে মাওবাদী মুক্ত করার গর্বিত প্রতিশ্রুতি, পাঁচ বছর ধরে কাশ্মীরকে সন্ত্রাসবাদ মুক্ত শান্তির উর্বর ভূমিতে পরিণত করার দাবি শুনতে শুনতে কিছু মানুষ নিজের অজান্তেই মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। ভাবছিলেন সত্যিই বোধহয় দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ বা বিস্ফোরণের ঘটনা নির্মূল হয়ে গেছে। দেশের নিরাপত্তাহীনতার কোনও ঝুঁকি নেই। মানুষ এখন নিরাপদ। খোদ রাজধানীর লালকেল্লার কাছে সোমবার সন্ধ্যার বিস্ফোরণের ঘটনা তাদের ঘোর কাটিয়ে দিয়েছে। মোদী-শাহ শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা যে শহরে বাস করেন সেই দিল্লির লালকেল্লার মতো হাই সিকিউরিটি জোনে এমন বিস্ফোরণের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে ‍‌দেশের কোনও জায়গায়ই আর নিরাপদ নয়। মোদী-শাহ-দের দৌড় শেষ। দেশ ও দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া তাদের কর্ম নয়।
মনে রাখা দরকার দিল্লির পৌরসভা চালায় মোদী-শাহ‍‌র দল। দিল্লির সরকার চালায় মোদী-শাহর দল। রাজধানী দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা-নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের হাতে সেই দিল্লি পুলিশ চালান মোদীর ডান হাত অমিত শাহ। আর এই দিল্লিতে বসেই দেশ চালায় মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ আরএসএস-বিজেপি’র ত্রিপল ইঞ্জিনে চলে দিল্লি। তার পরও ভর সন্ধ্যায় লালকেল্লার মতো জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরও শুনতে হবে অমিত শাহর পুলিশ দারুণ দক্ষতার সঙ্গে দিল্লির দেখভাল করছে! বিশ্বাস করতে হবে এদের হাতে দিল্লি তথা দেশ নিরাপদ!
বিহারে নির্বাচন চলছে। ভোটে জেতার জন্য মোদী-শাহরা কার্যত সেখানে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন। শাহ তো ৩৪টি নির্বাচনী জনসভা করেছেন। বিহার ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবার সুযোগই তাঁর নেই। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীর, গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বিপুল বিস্ফোরক, অস্ত্র, বিস্ফোরণ ঘটানোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। সোমবার সকালেও দিল্লির পাশে ফরিদাবাদে উদ্ধার হয়েছে অনেক বিস্ফোরক ও অস্ত্র। তারপরও দিল্লির পুলিশের টনক নড়েনি। মোদী জমানায় উরি, পাঠানকোট, পুলওয়ামা, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। মোদী-শাহরা বার বার কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার দাবি করার পরও। তার অর্থ নিরাপত্তায় বিস্তর গদল থাকবে। নিরাপত্তায় নজর না দিয়ে সরকার ফাঁকা ও মিথ্যা সাফল্যের প্রচার করছে আর আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছে। সরকারের নজর যদি থাকে শুধু ভোটে জেতার দিকে, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর যদি সময় কাটে ভোট ময়দানে ভোট যুদ্ধের কৌশল ঠিক করতে তাহলে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথা থেকে উবে যায়। দিল্লিতে সেটাই হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment