নিষিদ্ধ স্যালাইন ব্যবহার হয়েছে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবু মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতিমৃত্যুর দায় চিকিৎসকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব সরাসরি ‘ট্রেনি চিকিৎসকদের গাফিলতি’-র উল্লেখ করেছেন।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। ট্রেনি চিকিৎসকরা অপারেশন করেছেন। গাফিলতি তো রয়েছেই। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। রিপোর্ট বিশদে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মুখ্যসচিবের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা ডা: উৎপল ব্যানার্জি। গণশক্তি ডিজিটালকে তিনি বলেছেন, ‘‘অপারেশনে গাফিলতির অভিযোগ এই ঘটনায় কখনই পাওয়া যায়নি। বরং নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও ওই স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট। আসল সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’
সরকারি চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডি-র সম্পাদক বলেছেন, ‘‘অন্যায়ভাবে চিকিৎসকদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হলে তার প্রতিবাদেও নামা হবে। সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে এমন প্রয়াসের তীব্র নিন্দা করছি।’’
গত বৃহস্পতিবার থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতিদের মধ্যে সমস্যা দেখা যায়। নিষিদ্ধ স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছিল মেনে নিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি জানিয়েছেন ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। সিআইডি তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যসচিবের দাবি, ওই নির্দিষ্ট সংস্থার নির্দিষ্ট স্যালাইন নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ৭ ডিসেম্বরও ওই স্যালাইনের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কিভাবে ব্যবহার করা হলো তা দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৯ জানুয়ারি থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতিদের মধ্যে সমস্যা ধরা পড়ে। দেখা যায়, রাজ্যের নির্দেশিকার পরও ওই স্যালাইন ব্যবহার হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস নামে একটি সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাক্টেট’ স্যালাইনের একটি বিশেষ ব্যাচ নিয়ে অভিযোগ আগে থেকেই ওঠে। কর্ণাটকে এই সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞাও চাপানো হয়। পরে এ রাজ্যেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
ডা: উৎপল ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘কেবল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই এবার সমস্যা হয়েছে বিষয়টি তা নয়, প্রায় এক বছর ধরে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। এখন মুখ্যসচিব বলছেন যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা জারির পরও সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ হলো কী করে তা দেখা দায়িত্ব রাজ্যেরই। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গাফিলতি রাজ্য সরকারের। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষ রাস্তায় আছেন। আমাদের আশঙ্কা, এই স্যালাইন ঘিরেও দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রের তৎপরতা রয়েছে। তা থেকে নজর ঘোরাতে এখন চিকিৎসকদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে।’’
এদিকে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি কতটা ঠিক তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত প্রসূতিকে ‘রিঙ্গার্স ল্যাক্টেট’ স্যালাইনদেওয়া হয় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিজার্ভ স্টোর থেকে এনে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিটিক্যালস সংস্থার বেশ কয়েকটি ব্যাচ নম্বরের স্যালাইন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বহু চিকিৎসক। সেই নমুনা পাঠানো হয় ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু সব ব্যাচের রিপোর্ট আসেনি। স্বাস্থ্য ভবন তদন্তে নেমে জানতে পারে ২৩৯৬ ব্যাচ নম্বরের স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রসূতিকে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. বিভাস রায় আবার বলছেন যে রাজ্যের নির্দেশে কোথাও ওই ব্যাচের স্যালাইন সরিয়ে রাখা বা ব্যবহার না করার কথা বলা হয়নি।
Saline Manoj Panth Doctors
‘স্যালাইন থেকে নজর ঘোরাতে ডাক্তারদের দায়ী করছে রাজ্য’, ক্ষোভ চিকিৎসক নেতার
×
Comments :0