Sandip Asish R G Kar

সন্দীপ-আশিস জুটিতেই চলতো আর জি করে তোলার সিন্ডিকেট

রাজ্য

আর জি করে সন্দীপ ঘোষের সহযোগী হিসাবেই তোলাবাজি-হুমকির সিন্ডিকেট চালাতো ধৃত তৃণমূল নেতা আশিস পান্ডে, আদালতে জানালো সিবিআই।
অন্যদিকে খুন-ধর্ষণের মামলায় সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসিকে পেশ করে আদালতে সিবিআই’র বিস্ফোরক অভিযোগ - দু’জনের কল রেকর্ডের ফরেনসিকে স্পষ্ট যে পরিকল্পিতভাবে সেদিন সকাল (৯ আগস্ট) থেকে গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল দু’জনেই।
আর জি কর-এর দুটি মামলাতেই শুক্রবার আদালতে একের পর এক যে গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে তাতে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে থ্রেট সিন্ডিকেটের ভয়াবহ চেহারার পাশাপাশি হাসপাতালেরই পড়ুয়া চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনাকেও ধামাচাপা দিতে কীভাবে তৎপর হয়েছিল সংশ্লিষ্ট মহল, পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দল।
আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের মোবাইলের কল রেকর্ডের ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে এসেছে সিবিআই’র। সেই রিপোর্ট উল্লেখ করেই সিবিআই’র দাবি, ফরেনসিকে স্পষ্ট হয়েছে সেদিন সকাল থেকে ওই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যেই একাধিক ফোন করেন তাঁরা। তাঁদের কাছেও আসে একাধিক ফোন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে এদিন শিয়ালদহ কোর্টে ধৃত দু’জনের জামিনের আরজিতে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, ৯ আগস্ট সকাল থেকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে দু’জনেই চেষ্টা চালায়। তাঁদের ফোনের ডিসিআরের যে রিপোর্ট সিএফএসএল থেকে এসেছে তাতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপ ঘোষ তাঁর হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পরে স্বাভাবিকভাবে যা যা করতে হয়, তা করেননি। সন্দীপ ঘোষ ও থানার ওসির ফোনের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখে জানা গেছে তাদের মধ্যে একাধিকবার কথা হয়েছিল। শুধু তাই নয় সন্দীপ ঘোষের ফোনে সেদিন একাধিক রহস্যময় ফোন এসেছিল। শুধু সন্দীপ নয়, ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের মোবাইলেও সেদিন একাধিক রহস্যময় ফোন এসেছিল। 
এদিন আদালতে সিবিআই জানায়, ধামাচাপা দিতে ওদের দু’জনের মধ্যে কথোপকথন এবং ওদের কাছে যে ফোন আসে বা ওরা যাদের ফোন করেছে, তা এবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এই দু’জনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। দু’জনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী, জামিন পেলে ক্ষতি হবে তদন্তের। দু’জনেরই ১৪ দিনের জেল হেপাজতের আবেদন জানায় সিবিআই।
অন্যদিকে আবার এদিনই আর জি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তৃণমূলের ইউনিট সভাপতি, অবৈধভাবে হাউসস্টাফশিপ পাওয়া আশিস পান্ডেকে আলিপুরে সিবিআই’র বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র তরফে এদিন আদালতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়— আর জি করে থ্রেট সিন্ডিকেটের অন্যতম মাথা এই আশিস পান্ডে। রীতিমত তোলাবাজির চক্র চলতো। এমনকি অপছন্দের বা বিরোধী সিনিয়র ডাক্তারদের অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। তাদের কথা যারা শুনতো না, সেই জুনিয়র ডাক্তারদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও চলতো। হাসপাতালে টেন্ডার সহ একাধিক দুর্নীতিতে সরাসরি এই অভিযুক্ত যুক্ত। ইতিমধ্যে একাধিক তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে। ধৃত সন্দীপ ঘোষের বয়ান ধরেই এবার আরও জেরার প্রয়োজন। আদালতে সিবিআই’র তরফে জানানো হয়, আর্থিক দুর্নীতি মামলার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত আশিস। তার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, ডাক্তারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকদেরও প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। মোটা টাকা নিয়ে হাউস স্টাফ নিয়োগ করত এই আশিস পান্ডে। এর আগে একাধিক জেরা থেকেও তার বিরুদ্ধে তথ্য সামনে এসেছে। সন্দীপ ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল সে। এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কার্যত সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তোলা হয়েছিল। আদালত আশিস পান্ডেকে তিনদিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দেয়। 
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন ধর্ষণ ও খুনের মামলায় শিয়ালদহ কোর্টে সিবিআই’র তরফে জানানো হয় ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে তার নির্দেশে জানিয়েছিল, আর জি করকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি এবং খুন-ধর্ষণের যে মামলা চলছে সেই দুটি মামলার মধ্যে আদৌ কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, থাকলে কী আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা সেটিও খতিয়ে দেখছি’। ফলে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আশিস পান্ডের ভূমিকা খুন-ধর্ষণের মামলাতেও এবার দেখা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment