Tripura Sitaram Yeachury

ত্রিপুরায় পরিত্রাণ চাইছেন মানুষ, বললেন ইয়েচুরি

জাতীয়

স্বর্ণেন্দু দত্ত: আগরতলা


শান্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন চান ত্রিপুরার জনগণ। শুক্রবার আগরতলায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেছেন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি। তিনি বলেন, আগের নির্বাচনগুলিতে রাজনৈতিক দলগুলি অ্যাজেন্ডা তৈরি করতো। এবারের ভোটে মানুষ নিজেরাই অ্যাজেন্ডা তৈরি করে নিয়েছে। একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তি। আমরা জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। 
ইয়েচুরি বলেন, নির্বাচনের প্রচারে গত তিনদিন আমি রাজ্যে রয়েছি। আমি অনুভব করছি জনগণের স্পষ্ট প্রবল মনোভাব এবার পরিবর্তনের পক্ষে। গত ৫ বছর গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর যে তীব্র আক্রমণ হয়েছে, যে ভয়াবহ অপশাসন ও দুর্নীতি চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ বলছেন আমরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই। হামলা, সন্ত্রাস, অত্যাচার, হেনস্তা থেকে পরিত্রাণ চাই, তাই আপনারা এই অপশাসনের অবসান ঘটান। তারা একটা স্বাভাবিক সরকার চান, শান্তি চান, নিজের রোজকার জীবনের সমস্যার সমাধান চান। এই নির্বাচনে আসল কথা গণতন্ত্র জয়ী হবে কি না। 
জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, কমিশন যদি চায় তবে হিংসামুক্ত ভোট হওয়া অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু যদি কমিশন সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, তবে রাজ্যের জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। ইয়েচুরি বলেন, জনগণের এই প্রবল মনোভাব টের পেয়েছে বিজেপি। সেজন্য টাকা এবং পেশি শক্তির অপব্যবহার করতে মানুষকে দমিয়ে রাখার একটা মরিয়া চেষ্টা করছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সরকারি এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আনা হয়েছে। সেই অর্থের বিতরণও শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হুমকি, হামলা শুরু হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে নির্বাচনের দু’-তিনদিন আগে থেকে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটাতে পারে বিজেপি। এটা তখনই সম্ভব হবে যদি, প্রশাসন তাদের গোপনে, অলিখিতভাবে এসব কাজ করার সমর্থন ও অনুমতি দেয়। এটা রুখতেই হবে। ভোটারদের হুমকি দেওয়া, হামলা করা এসব রুখতে সব এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীকে নামাতে হবে। এই কাজে বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলির পুলিশকে ব্যবহার করা যাবে না। সেই সঙ্গে ভোটারদের মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে, আধা সামরিক বাহিনীকে দিয়ে রুট মার্চ, এরিয়া ডমিনেশন করাতে হবে,কমিশনের উদ্যোগে এই নিবিড় প্রচার চালাতে হবে যে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন। 
ইয়েচুরি বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত করতে  ত্রিপুরার সমস্ত গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দল ও জনগণের কাছে আমরা যে আবেদন করেছি, তাতে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছেন জনগণ। 
সংকল্প পত্রের নামে বিজেপি’র ইশতেহার সম্পর্কে জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, দেউলিয়া রাজনীতি করছে। ভিশন ডকুমেন্টের ২৯৯ টি প্রতিশ্রুতির সাফল্য কী সে সম্পর্কে কিছু বলেননি জে পি নাড্ডা। বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন জীতেন্দ্র চৌধুরি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় হারে সপ্তম বেতন কমিশন রূপায়ণ করে দিয়েছে। আদৌ তা হয়নি। শিক্ষা, কৃষির উন্নয়ন সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ছাড়া আদৌ কিছুই হয়নি। 
তিপ্রা মথা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন মথার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক আসন সমঝোতা করা যায়নি। কিন্তু বিজেপি বিরোধী ভোটের বিভাজন রুখতে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। একেবারে বিধানসভা কেন্দ্রের স্তরে স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পরিস্থিতি  অনুযায়ী বোঝাপড়া হবে। কারণ তিপ্রাসা, আদিবাসী সহ সব অংশের জনগণের সবচেয়ে বড় শত্রু বিজেপি। পরে সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র প্রশ্নের জবাবেও ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ রুখতে স্থানীয় স্তরে সমঝোতা হতে পারে।

এদিন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম দুটি নির্বাচনী জনসভায় বলেন, খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, গুন্ডামি ও মিথ্যা মামলা ইত্যাদির বিরুদ্ধে ত্রিপুরার মানুষ এককাট্টা হয়ে গেছেন। আর বছর খানেক পরেই লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করতে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, মোদী সরকারের এই বাজেট দেশের মানুষকে আরো বিপন্নতার দিকে  ঠেলে দিয়েছে। কমেছে কাজের সুযোগ ও মজুরি। করোনা অতিমারীর পর সারা বিশ্বের সাথে আমাদের এই দেশেও ক্ষুধা ও  বেকারত্ব পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার গরিবের দিকে না তাকিয়ে দেশের রেল বিমান নদী পাহাড় সব আদানি আম্বানিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। বাড়ছে খাদ্যশস্য, জীবনদায়ী ওষুধ ও জ্বালানির দাম। কমছে ভরতুকি। রান্নার গ্যাসের দাম তেরোশো টাকা ছুঁয়েছে। দেশের পেট্রোল পাম্পগুলিতে মোদির ছবিসহ বিনামূল্যের গ্যাস সিলিন্ডারের বিজ্ঞাপন আর দেখা যাচ্ছে না। মানুষের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করলে ধর্ম, জাতি খাদ্যাভ্যাস ও পোশাকের নামে মানুষকে বিভক্ত করে দিচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment