গল্প
মুক্তধারা
-----------------------------
ওর নাম ছিল অর্জুন
-----------------------------
সুকান্ত পাল
এ তো মহা মুস্কিল হলো! সেই কখন বাজারে গেছে মেয়েটা এখনো আসার নাম করছে না। প্রমীলা রাগে ভিতরে ভিতরে গজগজ করছেন কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করছেন না। এতো বছর পর তার ভাই এসেছে ভাইফোঁটা নিতে, কখন কি করবেন তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। ষাটোর্ধ্ব ভাই প্রদীপ হাঁটুর ব্যথায় কাতর, তাকে তো আর বাজারে পাঠানো যায় না! যদিও প্রদীপ যেতে চেয়েছিল।
যখন জামাইবাবু বেঁচে ছিলেন তখন দিদির বাড়ি হালিশহরে এলেই জামাইবাবুর সঙ্গে প্রদীপ বাজার করতে যেত। প্রদীপের একটাই ভাগ্নে তাও সে বিদেশে থাকে। অগত্যা এই বকুল নামের মেয়েটিকে নিয়েই তার দিদি একা থাকে। বনগাঁর আগের স্টেশন গোপালনগর থেকে দিদির পরিচিত একজন এই অনাথ বকুলকে নাকি জোগাড় করে দিয়েছিল। তবে মেয়েটি যেমন কাজের তেমনি বিশ্বাসীও বটে। দিদিকে নাকি নিজের মায়ের মতোই দেখেশুনে রাখে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও বটে। প্রদীপ এসব জানে না। সবই দিদির কথা। তবুও মাঝে মাঝে ফোনে দিদির সঙ্গে যখন তার কথা হয় তখনই সে প্রমীলাকে সাবধান করে দিতে ভুলত না।
-- দেখিস দিদি, এদের কিন্তু বিশ্বাস নেই, এরা কিন্তু খুব ধুরন্ধর হয়। কখন যে কি করে পালাবে তার ঠিক নেই।
প্রমীলা তার ভাইয়ের এই কথা শুনে এড়িয়ে যেতেন। প্রদীপের কথা গুলো তার ভালো লাগত না। কথাগুলো যেন কুরুচির পোষাক পড়ে তার কানে হামলে পড়ত।
-- তোকে আগেই সাবধান করে দিয়েছিলাম, কিন্তু কথা তো শুনিস নি। এতো গুলো টাকা হাতে পেয়েছে, দ্যাখ এবার কেটে পড়ল কিনা! আলমারির চাবি গুলো খুঁজে দ্যাখ সব ঠিকঠাক আছে তো?
ভাইয়ের কথা গুলো শুনে প্রমীলার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে।
-- চলতো একটা টোটো করে তুই আর আমি বাজারের দিকে যাই।
প্রমীলা প্রদীপকে বললেন ।
টোটো বাজারের দিকে কিছুটা এগোতেই প্রমীলা দেখল একটা বড়ো অর্জুন গাছের নিচে দু' ব্যাগ ভর্তি বাজার মাটিতে রেখে বকুল অর্জুন গাছটার প্রাচীন শরীরে গভীর মমতায় হাত বোলাচ্ছে । প্রমীলা অবাক হয়ে যায়।
টোটো থেকে নেমে বকুলের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে ডাকলেন,
-- বকুল।
বকুল অবাক হয়ে প্রমীলার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে যায়।
-- কি করছিস এখানে। এদিকে বেলা হয়ে যাচ্ছে। কখন কি করব বলতো? তোর দেরি দেখে বাধ্য হয়ে আমাদের আসতে হলো। কি করছিস তুই এখানে বসে বসে?
খুব সঙ্কোচের সঙ্গে সে বলল,
-- একটু ফোঁটা দিচ্ছিলাম।
-- গাছকে!
--- আমার একটা ভাই ছিল, ছোটবেলায় জন্ডিসে মরে গেছে। ওর নাম ছিল অর্জুন।
Comments :0