অরিজিৎ মণ্ডল
স্থায়ী পদে নিয়োগ বন্ধ। বিলোপ করা হচ্ছে স্থায়ী পদ। কিছু পদে নিয়োগ হচ্ছে চুক্তির ভিত্তিতে।
কলকাতা কর্পোরেশনের মাসিক অধিবেশনে এই বাস্তবতা স্বীকার করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেই। পদ যে বাতিল করা হচ্ছে মেনেছেন ফিরহাদ হাকিমই। অধিবেশনে তোলা প্রশ্নে বলা হয় যে ৩০ হাজারের বেশি শূন্য পদ রয়েছে কর্পোরেশনে। প্রতি বছর প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ অবসরও নিচ্ছেন। শেষ চার বছরে কলকাতা কর্পোরেশন স্থায়ী পদে কতজনকে নিয়োগ করেছে?
স্থায়ী পদে নিয়োগের কোনও তথ্যই কার্যত দিতে পারেননি কলকাতার মেয়র। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কর্পোরেশনে এখন বিভিন্ন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আগে হাতে ঠেলা গাড়ি করে জঞ্জাল নিয়ে যাওয়া হতো। বর্তমানে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে করে জঞ্জাল নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই ‘সুইপিং মেশিন’ আসছে কর্পোরেশনের হাতে। ফলে অনেকগুলি জায়গায় পদ বাতিল করা হচ্ছে।’’
মেয়রের ব্যাখ্যা, ‘‘শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে সেই খাতের টাকা প্রযুক্তিগত কাজে ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।"
কর্মীর পদ সম্পর্কে মেয়র বলেন, "৩৩০০টি পোস্ট তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০৪৮টি শূন্য পদে গত বছর নিয়োগ হয়েছে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে। ‘গ্রুপ ডি’ পদে মোট শূন্য পদ রয়েছে ১৬, ০৭৫টি। এই শূন্য পদে ১৪, ৫৮৪ চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। ৭,২৭০টি পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।’’
মেয়র স্বীকার করেছেন যে শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ করতে পারছে না কলকাতা কর্পোরেশন। এর প্রধান কারণ হিসেবে অর্থের অভাবকেই দায়ী করেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনে বাম পরিষদীয় দলনেতা মধুছন্দা দেব বলেন, "শূন্য পদে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী নিয়োগ নেই। কর্পোরেশন নিয়োগের কোনও প্রয়াস দেখাচ্ছে না। বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ চাই। এছাড়াও যারা ঠিকা ও ১০০ দিনের কর্মী রয়েছেন, তাঁদের শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ করার দাবি জানানো হয়েছে।’’
কর্মী সংকোচন প্রসঙ্গে মধুছন্দা দেব বলেন, ‘‘শ্রমিক সঙ্কোচন কোনও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা হতে পারে না। যন্ত্রচালিত বিভিন্ন মেশিন চালাতে গেলেও দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। কর্পোরেশন তো সেই ব্যবস্থাও করছে না। আমার নিজের ওয়ার্ডে এমএ-বিএ পাস যুবক যুবতীরা ১০০ দিনের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।’’
ডিওয়াইএফআই এর আগে তথ্যের অধিকার আইনে শূন্য পদের তথ্য চেয়েছিল। সংগঠনের কলকাতা জেলা সভাপতি সোহম মুখার্জি বলেন, ‘‘২০১৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশনে মোট শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজারের মতো। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার।’’ সোহম জানাচ্ছেন, ‘‘শেষ তিন বছরে একাধিকবার কর্পোরেশনের কাছে তথ্য চাওয়া হলেও কোনও সঠিক তথ্য দেয়নি। আমাদের আশঙ্কা এখন স্থায়ী শূন্য পদের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। রাজ্যে তথা কলকাতায় বেকার যুবক যুবতীদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। সরকারি কোনও জায়গায় স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না। সেই সময় দাঁড়িয়ে কর্পোরেশন কিভাবে পদ অবলুপ্তি করতে পারে!’’ সংগঠনের তরফে সব শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
Comments :0