Bardhaman Medical College Hospital

বিরলতম ঘটনা বর্ধমান হাসপাতালে

রাজ্য

যমজ সন্তান ছিল গর্ভে। গত জুলাই মাসে গর্ভেই মৃত্যু হয় একসন্তানের। চিকিৎসকরা বিরল অস্ত্রোপচার করে বের করে এনেছিলেন মৃত সন্তানকে। এই ঘটনার ১২৬ দিনের মাথায় সুস্থ অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলেন এক প্রসূতি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাবি, এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মলয় সরকার বলেন, জরায়ুতে একটি বাচ্চার মৃত্যু হয়। তারপর অন্য একটি বাচ্চার জন্ম দেওয়াটা খুবই ঝুঁকির হয়ে যায়। কারণ, এই সময়ে সংক্রমণের ব্যাপক ভয় থাকে। তারপর বাচ্চাটি পরিণত হতে সময়ও লাগে। তাই এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানেই অসাধ্যসাধন করেছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার কুলীন গ্রামের বাসিন্দা পম্পা প্রামাণিকের প্রথম থেকেই সন্তান প্রসবে সমস্যা ছিল। প্রথম টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার প্রচেষ্টা ২০১৬ সালে ব্যর্থ হয়। তারপর কলকাতার বিভিন্ন নার্সিংহোম আর একাধিক ঠাকুর মন্দিরে হত্যে দিয়েও কোনও ফল হয়নি। চলতি বছরের জুলাই মাসে একইভাবে টেস্টটিউবে মা হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এবার তাঁর পেটে আসে যমজ বাচ্চা। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বার ১৭ সপ্তাহে ১১ জুলাই রক্তক্ষরণ নিয়ে তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। গাইনি বিভাগে পর দিন অর্থাৎ ১২ জুলাই একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। এরপর পরস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। পেটে দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন চিকিৎসকরা। কিন্তু, তাঁরা হাল ছাড়েননি। টানা ১২৫ দিন হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন পম্পা। কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাঁকে। এরপর ১২৬ দিনের মাথায় মঙ্গলবার তিনি যমজ বাচ্চার দ্বিতীয়টির জন্ম দেন। বাচ্চাটির ওজন হয় ২ কেজি ৯০৬ গ্রাম। মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ রয়েছে।
১১ জুলাই ভর্তি রোগী শিশু দিবসের দিন অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর সফলভাবে সন্তান প্রসব করেন পম্পা প্রামানিক। সিজার করে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখান চিকিৎসকরা। এই গোটা প্রক্রিয়ায় ছিলেন ১০ সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল। গাইনি বিভাগের ডাঃ মলয় সরকার ছাড়াও ডাঃ এসপি রায়চৌধুরী, ডাঃ দেবব্রত রায়, ডাঃ কৃষ্ণপদ দাস, ডাঃ অর্পিতা প্রামাণিক, শিশু বিভাগের চিকিৎসক মুকুট বন্দ্যোপাধ্যায়,  অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের ডাঃ সুমন্ত ঘোষমৌলিকদের নিয়ে মেডিক্যাল টিম এই কাজ করেন। বোর্ডের দাবি, ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোড় শহরে এধরনের একটি ঘটনা ৯০ দিন পর দ্বিতীয় শিশুটি সফলভাবে প্রসব করানো হয়। এই ঘটনা গিনেস বুকে রেকর্ড আছে। মেডিক্যালের দাবি, ওই ঘটনার সাফল্যকেও তাঁরা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। কারণ এখানে তাঁরা ১২৫ দিন পর প্রসব করিয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ তাপস ঘোষ বলেন, এটি একটি অসাধ্যসাধন করেছেন চিকিৎসকরা। দেশে এধরনের ঘটনা কম হয়েছে বলে জেনেছি।
পম্পার স্বামী অনুপ প্রামাণিক বলেন, বিয়ের পর আমাদের বাচ্চা হচ্ছিল না। এনিয়ে বহু চিকিৎসকের কাছে যাই। এছাড়াও ঠাকুরবাড়িতেও হত্যে দিই। কিন্তু, কোথাও কিছু ফল হয়নি। তারপর প্রথমে টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু, সেটাও বিফল হয়। পরে কলকাতায় ফের টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার চেষ্টা করি। সেখানে সফল হয়। আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ১৭ সপ্তাহের মধ্যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আমরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে স্ত্রীকে ভর্তি নিয়ে নেয়। পরের দিন স্ত্রী একটি বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু, সেটা মৃত হয়। এরপর চিকিৎসকরা স্ত্রীকে নিজেদের কাছেই রেখেই চিকিৎসা করেন। ১৪ নভেম্বর আমার স্ত্রী দ্বিতীয় বাচ্চার জন্ম দেয়। এখন মা ও বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ আছে।  চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

Comments :0

Login to leave a comment