Comrade N Sankaraiya passes away

কমরেড এন শঙ্করাইয়ার জীবনাবসান

জাতীয়

দেশের প্রবীণতম কমিউনিস্ট নেতা কমরেড এন শঙ্করাইয়ার জীবনাবসান হয়েছে। বুধবার চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২। 
স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আজীবন মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া কমরেড শঙ্করাইয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, নিষ্ঠা ও সহজ সরল জীবনযাপনের উদাহরণ। তাঁর মৃত্যুতে কমিউনিস্ট আন্দোলন গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্বের এক নেতাকে হারালো কিন্তু তাঁর ঐতিহ্য বহমান থাকবে। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী, শ্রমজীবী জনতার নেতা কমরেড শঙ্করাইয়া ছিলেন সেই অগ্রণী নেতাদের একজন যাঁরা বিপ্লবী পথ বেছে নিয়ে ১৯৬৪ সালে সিপিআই(এম) গঠন করেছিলেন। তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, তাঁর জীবনই ছিল ত্যাগের জীবন। সারা জীবন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়েছেন। স্ট্যালিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল রাজ্য পরিচালিত মাদুরাই কামরাজার বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট দেবে কিন্তু কিছু সঙ্কীর্ণ চিন্তার মানুষের ষড়যন্ত্রে তা হতে দেওয়া হয়নি। পূর্ণ সরকারি মর্যাদায় এই সম্মানীয় নেতার শেষকৃত্য হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কমরেড শঙ্করাইয়ার মরদেহ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য রাখা হয়েছে পার্টির রাজ্য দপ্তরে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বৃহস্পতিবার। উপস্থিত থাকবেন সিপিআই(এম)’র শীর্ষ নেতারা। 
কমরেড শঙ্করাইয়ার জন্ম ১৯২১ সালের ১৫জুলাই। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিতে শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে মাদুরাইয়ের আমেরিকান কলেজে ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন। তখনই ছাত্রদের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে শুরু করেন। মাদ্রাজ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মাদুরাই স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সম্পাদক ছিলেন। কমিউনিস্ট নেতা এ কে গোপালন মাদুরাইয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তাঁর সংস্পর্শে এসে ছাত্র আন্দোলনকে তীব্র করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন কমরেড শঙ্করাইয়া। স্নাতক পরীক্ষার ঠিক আগে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভেলোর জেলে পাঠায়, তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ শাসনে মোট পাঁচ বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। কায়ুর বিদ্রোহীদের ফাঁসির সময়ে তিনিও ছিলেন কান্নুর জেলে। ১৯৪০ সালে কমরেড শঙ্করাইয়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তামিলনাডুতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে অন্যতম অগ্রণীর ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে আবারও জেলে পাঠায় মাদুরাই ষড়যন্ত্র মামলায়, যে মামলায় এক নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন পি রামমূর্তি। দেশ স্বাধীন হবার একদিন আগে তিনি মুক্তি পান। স্বাধীনতা-উত্তরকালেও কমরেড শঙ্করাইয়াকে মোট তিন বছরের মেয়াদ কাটাতে হয় জেলেই। দু’বছর আত্মগোপনে থেকে কাজ করতে হয়েছিল। 
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক আন্দোলনের সামনের সারির নেতা হিসাবে সক্রিয় কমরেড শঙ্করাইয়া সিপিআই’র জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৬৪ সালে অবিভক্ত পার্টির জাতীয় পরিষদের বৈঠক থেকে যে ৩২ জন সদস্য বেরিয়ে এসেছিলেন, কমরেড শঙ্করাইয়া ছিলেন তাঁদের অন্যতম। বিপ্লবী মতাদর্শের ভিত্তিতে পার্টিকে পুনর্গঠন করতে সিপিআই(এম) গঠনে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তামিলনাডুতে সিপিআই(এম)’র প্রসারে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৯৫ থেকে ২০০২ তিনি ছিলেন পার্টির তামিলনাডু রাজ্য কমিটির সম্পাদক। মাদুরাই পশ্চিম কেন্দ্র থেকে তিনি ১৯৬৭ সালে বিধায়ক হন। মাদুরাই পূর্ব কেন্দ্র থেকে ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ সালে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পার্টির মুখপত্র ‘থিক্কাথির’র সম্পাদক ছিলেন অনেক দিন। 
কমরেড শঙ্করাইয়া কৃষক আন্দোলনের সর্বভারতীয় স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৬-১৯৮৯ পর্বে তিনি সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২-১৯৯৫ তিনি ছিলেন সংগঠনের সভাপতি। এই সময়কালেই উদারনীতি চালু হয়। তার ধাক্কা পড়তে শুরু করে কৃষি ও কৃষকের জীবনে। কৃষকসভা শুধু তার বিরুদ্ধে সংগ্রামই করেনি, একটি বিকল্প কৃষি নীতি দেশের সামনে পেশ করেছিল। এদিন সারা ভারত কৃষকসভার পক্ষ থেকে এই প্রবাদপ্রতিম নেতার প্রতি সম্মান জানিয়ে বলা হয়েছে, একেবারে শেষ জীবন পর্যন্তও তিনি কৃষক সংগ্রাম এবং প্রগতিশীল আন্দোলনকে পথনির্দেশিকা দিয়ে গেছেন। 
কমরেড শঙ্করাইয়া ছিলেন সুবক্তা। কমিউনিস্ট রাজনীতি ও পার্টির নীতিকে তিনি সাধারণ মানুষের সামনে দ্রুত উপস্থাপিত করতে পারতেন। তাঁর পাঠ ও অনুশীলনের পরিধি ছিল বিরাট। সমসাময়িক ঘটনার খুঁটিনাটি তথ্য তাঁর দখলে থাকত। তামিল সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর গভীর পড়াশোনা সর্বজনস্বীকৃত। 
এদিন তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন, মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্য, সাংসদ টি আর বালু, এ রাজা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে তামিলনাডু সরকার তাঁকে ‘থাগাইসার তামিলার’ সম্মান দিয়েছিল। সেই উপলক্ষে পাওয়া ১০ লক্ষ টাকা তিনি কোভিড মোকাবিলার তহবিলে দান করে দিয়েছিলেন। 
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, কমরেড শঙ্করাইয়া প্রেরণার অবিরত উৎস ছিলেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক অসাধারণ নেতা ছিলেন। 
কমরেড শঙ্করাইয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, এসএফআই সহ বহু সংগঠন। 
কমরেড শঙ্করাইয়ার দুই পুত্র চন্দ্রশেখর ও নরসিম্মাম সিপিআই(এম)’র নেতা।

 

Comments :0

Login to leave a comment