State Budget 2025

রাজ্যের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে

রাজ্য উত্তর সম্পাদকীয়​

শ্যামল কুমার মিত্র

২০১১ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারের ৯ নম্বর পাতায় তৃণমূল কংগ্রেস লিখেছিল, ‘‘শিল্পের থেকে আজ শুঁড়িখানা অনেক বেশি। শিল্প মানেই শুধু মদের বন্যা।” প্রত্যাশিত ছিল, তৃণমূল দল ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে নতুন ১টিও মদের দোকান হবে না, মদ্যপানে উৎসাহ দেবে না সরকার। 
কিন্তু তাঁর সরকারের মদ নীতিতে রাজ্যে মদ্যপানে উৎসাহ এবং বিস্তার দুটোই হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে (বামশাসনে) মদ বিক্রি বাবদ সরকারের আয় ছিল ২৪১৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে মদ বাবদ প্রস্তাবিত আয় ২২,৫৫০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা, অর্থাৎ তৃণমূল শাসনের ১৪ বছরে সরকারের মদ বাবদ আয় ৮৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এখন রাজ্যে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান ৭৭৪৬। তবে সরকার মনে করছে এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়। তাই সরকার স্থির করেছে, কলকাতা কর্পোরেশন এলাকায় ১ কিলোমিটার, পুরসভা এলাকায় ২ কিলোমিটার এবং পঞ্চায়েত এলাকায় ৩ কিলোমিটার অন্তর ১টি করে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান থাকবে। শুধু তাই নয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল বেভারেজ কর্পোরেশন লিমিটেডের ব’কলমে স্বয়ং সরকার মদ ব্যবসায় নামছে। বাজেট প্রস্তাবে সরকারের নিজস্ব রাজস্ব আদায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৯.৯১ শতাংশ আসবে মদ থেকে। আক্ষরিক অর্থে, সরকার রাজ্যের মানুষকে মদের বন্যায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। 
এদেশে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এরা কাজ খুঁজছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। ৩ ভাবে কর্মসংস্থান হয়— সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ, বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ। সরকারি প্রকল্প ও কর্মসূচিতে নিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত। বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২,৬৪,৫৩৪ টি পদ, উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ৩,৯৮,১৫০টি পদ, উচ্চমাধ্যমিক পরবর্তী স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী এবং বোর্ড, কর্পোরেশন, পঞ্চায়েত, পৌরসভা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থায় অনুমোদিত কর্মী পদসংখ্যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ শূন্য। ১৯৮০ সালে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় কর্মরত সরকারি কর্মী ছিলেন ৬৭৬। বর্তমানে তা ২১৯। 
শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত হওয়া দরকার ৩০:১, যা ২০০৮ সালে ছিল ৩৫:১, বর্তমানে শিক্ষক ঘাটতির কারণে তা ৭৩:১। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে, নিয়োগ হবে।’ বাজেট প্রস্তাবের কোথাও এই বিপুল সংখ্যায় শূন্যপদে নতুন নিয়োগের ১টি শব্দও নেই। প্রয়াত রতন টাটার ভাষায় ‘‘টাটাদের প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পগোষ্ঠীর পরিকল্পনা ও অর্থে পরিচালিত’’ তথাকথিত সিঙ্গুর আন্দোলনের নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎপাদন শুরুর মুখে থাকা টাটাদের মোটরগাড়ি কারখানা ও ৫৬টি অনুসারি শিল্পকে যেভাবে এ রাজ্য থেকে মোদিজীর রাজ্য গুজরাটে পাঠিয়েছিলেন দায়িত্ব নিয়ে, সেই ঘটনা শিল্পে বিনিয়োগকারীদের এতটাই আতঙ্কিত করে তুলেছে যে, এ রাজ্যে বিনিয়োগ করতে তারা ভয় পান। এর উপরে আছে শাসক দলের তোলাবাজি ও কাটমানি সংস্কৃতিতে শিল্পপতিদের বিরক্তি। ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যের ৭টি শিল্প সম্মেলনে ১৭ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে যৎসামান্য। এই বিনিয়োগ অর্থাঙ্কে এতটাই নগন্য যে সরকার ৭টি শিল্প সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রস্তাব ও প্রকৃত বিনিয়োগের সরকারি তথ্য প্রকাশিতও হয় না। গত ৫ বছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের ৯০ শতাংশ পেয়েছে কর্নাটক, গুজরাট, দিল্লি, তামিলনাড়ু ও ঝাড়খণ্ড। বাকি ১০ শতাংশের যৎসামান্য বিনিয়োগ এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩৭টি কর্পোরেট সংস্থা সহ ২২২৭টি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের রেজিষ্টার্ড অফিস অন্য রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন, “রাজ্যে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১৭৭, কাজ হারিয়েছেন ২৯ হাজারেরও বেশি শ্রমিক।” অথচ রাজ্য সরকারের ‘স্টেট অফ এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট, ২০২১’ অনুযায়ী, “২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৫ বছরে রাজ্যে বড়, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র মিলিয়ে মোট ২১ হাজার ৫২১টি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে যার মধ্যে বৃহৎ শিল্প ২৭১ টি।”এই ২১,৫২১ টি শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কত সংখ্যক শ্রমিক/কর্মী কাজ হারিয়েছেন, ২০২২ থেকে এ পর্যন্ত কত শিল্প বন্ধ হয়েছে তার কোনও তথ্য নেই। নতুন বিনিয়োগ, নতুন শিল্পস্থাপন তো দূর অস্ত,পশ্চিমবঙ্গে বড় সংখ্যায় শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, লাখো-লাখো শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন। শুধু শিল্পপতিদের নিয়ে সম্মেলন করলে শিল্প আসে না। শিল্পন্নোত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজ্যে শিল্পবান্ধব ও বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছেন। তাই তাঁদের রাজ্যে ক্রমবর্ধমান হারে শিল্পে বিনিয়োগ আসে, এই রাজ্য পায় শূন্যগর্ভ বিনিয়োগ প্রস্তাব। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি ক্ষেত্রে ও রাজ্যে কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ নেই। 
বাম সমর্থিত ইউপিএ-১ সরকার সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার যুক্ত জনকল্যাণের ধারণা সামনে আনেন, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প (যা পরে শহরাঞ্চলেও সম্প্রসারিত হয়), শিক্ষার অধিকার আইন, তথ্যের অধিকার আইন, খাদ্য-সুরক্ষা আইন, মিড ডে মিল, লোকপাল আইন ইত্যাদি। রাজ্য সরকারের দাবি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গকে কোনও বরাদ্দ দিচ্ছে না। কেন্দ্রের বক্তব্য ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, তাই বরাদ্দ বন্ধ। দুর্নীতি হয়ে থাকলে তার দায় রাজ্য সরকারের। সেজন্য গরিব মানুষকে কেন তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করবে ভারত সরকার? খুবই সঙ্গত প্রশ্ন। কেন্দ্র সরকার একসময়ে রাজস্থান সরকারকে দেয় মনরেগার টাকা আটকে দিয়েছিল। রাজস্থান সরকার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়ার দাবিতে। মনরেগা আইন অনুসারে সাংবিধানিক ভাবে রেগায় রাজ্যের প্রাপ্য সময়মত দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য। সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে রাজস্থান সরকারকে রেগায় প্রাপ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়, রাজস্থান তার বরাদ্দ পেয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি চাকরি প্রাপকদের সুবিধা করে দিতে, ডিএ-র অধিকার থেকে কর্মীদের বঞ্চিত করতে, কেন্দ্রীয় তদন্তে শাসক দলের নেতাদের গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পর মামলা করে কোটি কোটি টাকা অপচয় করে অথচ রেগার বরাদ্দ পেতে মামলা করার সৎসাহস প্রদর্শনে ব্যর্থ কেন? আসলে রেগায় দুর্নীতি এতটাই ব্যাপক ও প্রাতিষ্ঠানিক যে মামলা করলে, ঝুলি থেকে বেড়াল বের হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত সরকার। রাজ্যের নিজস্ব কর্মশ্রী প্রকল্পে ৬১ কোটি কর্মদিবস সৃষ্টির দাবি রয়েছে বাজেটে। খরচ হয়েছে ১২,৩৫৫ কোটি টাকা। গত ৩ বছর রেগায় এ রাজ্যে ১ জনও কাজ পাননি, পুরোদমে রেগা চালু থাকার সময় সর্বোচ্চ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। আর ‘কর্মশ্রী’তে ১২,৩৫৫ কোটি? গল্পের গোরু গাছে তুলে লাভ কি? এমন অভাবনীয় ‘সফল’ কর্মশ্রী প্রকল্পে এবার কোনও বাজেট বরাদ্দই নেই। দুয়ারে সরকার শিবিরের ৩৭টি পরিষেবার মধ্যে ‘কর্মশ্রী’ নেই। 
২০১৭র জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে বলা হয়েছিল, রাজ্যগুলিকে বাজেট বরাদ্দের কমপক্ষে ১০ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করতে হবে, বরাদ্দ হয়েছে ২১,৩৫৫.২৫ কোটি টাকা, মাত্র ৬.৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, অথচ স্বাস্থ্যই চূড়ান্ত অবহেলিত। কেন ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ রাজ্যে চালু না করে বছরে ১০০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে রাজ্যের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা নেই বাজেটে। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে ব্যয়িত সরকারি অর্থের ৯২.২১ শতাংশ চলে যাচ্ছে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের পকেটে। বাজেটে বিদ্যালয় শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথাক্রমে ৪১,০০০ এবং ৬,৫৯৩.৫৮ কোটি টাকা যা প্রয়োজনের নিরিখে যথেষ্ট কম। ৬০০টি নূতন মাদ্রসা স্থাপনের কথা রয়েছে, অথচ রাজ্যের ৬১৪টি সরকারি মাদ্রাসায় ১০ হাজার শূন্য শিক্ষকপদ পূরণের কোনও কথা নেই। গত ১০ বছরে রাজ্যের ২২টি জেলায় ৭,০১৮টি স্কুল কমেছে। সম্প্রতি আরও ৮,২০৭টি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। 
ডিএ-র প্রশ্নে সরকারের অবস্থান নির্লজ্জতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। ২০১১-র আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, ‘‘যে সরকার কর্মীদের ডি এ দিতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।” ২০১১-১২ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত রাজ্যকর্মীদের বেতন-পেনশন খাতে বরাদ্দের ২৫,২৬২ কোটি টাকা ও কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন সূত্রে এই খাতে প্রাপ্য ৯,০০০ কোটি টাকা (সর্বমোট ৩৪,২৬২ কোটি  টাকা) রাজকোষে অব্যয়িত অবস্থায় পড়ে আছে। এই অর্থে ৪৪ শতাংশ ডিএ দেওয়া সম্ভব। জুন ২০১১ থেকে জুলাই ২০২৪, কর্মীদের ডিএ না দিয়ে সরকার ২,১৯,১০৭.২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। ৯ বছর ধরে জীবিকা সেবকরা বেতন পান না, পঞ্চায়েতের ট্যাক্স কালেকটারদের বেতন মাসে ৬০০ টাকা, মিড ডে মিল কর্মীদের বেতন মাসে ১৬৬৬ টাকা, কয়েক লক্ষ চুক্তিতে নিযুক্ত ও অস্থায়ী কর্মীদের নামমাত্র বেতনে কোনও রকম সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই সরকারি কাজ করিয়ে নিচ্ছে সরকার। একেবারে ক্রীতদাস প্রথা। এদের বিষয়ে কোনও কথা নেই। 
বাজেট প্রস্তাবে মোট প্রস্তাবিত আয় ৩,৮৯,১৯৪-০৯ কোটি টাকা যার মধ্যে রাজ্যের নিজস্ব আয় ১,১২,৫৪৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ ১,০৬,৯৯৮ কোটি, কেন্দ্রীয় অনুদান ৩৭ হাজার কোটি টাকা, ঋণ ৯৫,০০০ কোটি টাকা, আর রাজ্যের নিজস্ব আয় ১,১২,৫৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ ও ঋণ মেটাতে ব্যয় হবে ৮১,৫১০ কোটি টাকা, অর্থাৎ রাজ্যের নিজস্ব আয়ের ৭২.৪২ শতাংশ চলে যাবে এই খাতে। রাজ্যের দৈনন্দিন খরচ ও উন্নয়ন হবে কেন্দ্র সরকারের এবং ঋণের অর্থে। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের ঋণ ছিল ১,৮৭,৩৮৭ কোটি টাকা যার মধ্যে ৭৯,০০০ কোটি টাকা ছিল স্বল্প সঞ্চয় থেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক ঋণ। অর্থাৎ ৩৪ বছরে বাম সরকার স্বেচ্ছায় ঋণ নিয়েছিল ১,০৮,৩৮৭ কোটি টাকা, বছরে ৩, ১৮৭.৮৫ কোটি টাকা। মার্চ-২০২৫-এ রাজ্য সরকারের ঋণ ৭,৭১,৬৭০ কোটি টাকা (এসজিডিপি-র ৩৭.৯৮ শতাংশ)। অতিক্রান্ত ১২ বছরে সরকার বেপরোয়াভাবে ৫,৮৪,২৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, বছরে ৪৮,৬৯০.২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ পূর্বতন সরকারের তুলনায় বছরে ১৫.২৭ গুন বেশি ঋণ নিয়েছে এই সরকার। বাম শাসনে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের ঋণ গ্রহণের তীব্র সমালোচনা করে তাকে ‘অপরাধ’ হিসাবে চিহ্নিত করতেন। বছরে ৩, ১৮৭.৮৫ কোটি টাকার ঋণ করা ‘অপরাধ’ হয়ে থাকলে, বছরে ৪৮,৬৯০.২৫ কোটি টাকার ঋণ করা কেন ‘মহা অপরাধ’ নয়? ২০১৪ পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্র সরকারের কাছে রাজ্যের ঋণ মকুব করার দাবি করতেন। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হওয়ার পর আর এ দাবি কেন করে না তৃণমূল? মোদীজীর সঙ্গে কোন সম্পর্কের রসায়নে ওই দাবি আর ওঠে না? রাজ্যের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়াটা ‘অপরাধ: নয়, যদি সংশ্লিষ্ট রাজ্য গৃহীত ঋণ উৎপাদক ক্ষেত্রে (Productive Sector) ব্যয় করে। তাতে রাজ্যে নতুন নতুন উৎপাদন ক্ষেত্র বাড়ে, কর্মসংস্থান হয়, অর্থনীতি চাঙ্গা হয়, রাজকোষে অর্থ আসে, সুদ সহ ঋণ শোধের পরও রাজ্য স্থায়ী উপযোগ পায়। কিন্তু গৃহীত ঋণ অনুৎপাদক ক্ষেত্রে (দৈনন্দিন খরচ, অনুদান, বেতন-ভাতা ইত্যাদি) ব্যয় হলে, রাজ্য ঋণের দুষ্টচক্রে জড়িয়ে পড়ে, সুদ সহ ঋণ শোধ করতে নতুন ঋণ নিতে হয়, ঋণের ভারে রাজ্য দেউলিয়া হয়ে পড়ে; যে ধরনের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান সহ অনেক দেশের হয়েছে। আতঙ্কের বিষয় সরকার গৃহীত ঋণ সম্পূর্ণ অনুৎপাদক ক্ষেত্রে ব্যয় করছে এবং কোন সংস্থার থেকে কোন শর্তে এত বিপুল ঋণ নিচ্ছে তা প্রকাশ করছে না। তখনই সরকার তথ্য গোপন করে, যখন অস্বচ্ছতা থাকে। মার্চ-২০২৫ এ রাজ্যে মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৭০,৬৫৩ টাকা। আক্ষরিক অর্থে, পশ্চিমবঙ্গ দেউলিয়া হওয়ার পথে।
 

Comments :0

Login to leave a comment