রাজ্যের মাথা পিছু গড় আয় বছরে ৭২,২০২টাকা, জানাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
মমতা ব্যানার্জির দাবি নস্যাৎ হয়ে গেছে।
রাজ্যের কৃষকদের গড় আয় ৩ লক্ষ টাকা, এমনটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, দেশে এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানে মানুষের গড় আয় ৩ লক্ষ টাকা।
কৃষকরা এখন অত্যন্ত দুর্দশায়। ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কৃষির সব উপকরণের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি খেতমজুরদের হাল খুবই খারাপ। মন্দার সময়কালে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মতো ক্ষেত্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে গড় মাথাপিছু বার্ষিক আয় কমেছে। এই ক্ষেত্রে ‘চমক’ পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৯-২০-এর তুলনায় ২০২০-২১-এ দেশের বড়, জনসংখ্যা বেশি, এমন ১৮টি রাজ্যের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু গড় বার্ষিক আয় বেড়েছে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে উল্লিখিত হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তথ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান এবং প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের থেকে। সেই মন্ত্রককে তথ্য দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর রাজ্য সরকারের সেই তথ্যে মন্দার সময়ে মাথা পিছু গড় আয় বৃদ্ধি দেখানো হলেও মাথা পিছু গড় আয়ে রাজ্যের দুর্দশার বদল সম্ভব হয়নি।
দেশে সর্বোচ্চ মাথা পিছু গড় আয় গোয়ায়। সেখানে মাথা পিছু গড় আয় ২,৯৮,৫২৭টাকা। তবে মাথা পিছু গড় আয় বিচার করার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘হ্যান্ডবুক অব স্ট্যাটিসটিকস অব ইন্ডিয়ান স্টেট’-এ উল্লিখিত রাজ্যগুলির মধ্যে বড়, জনসংখ্যা বেশি এমন ১৮টি রাজ্যের হিসাব করেছেন রাজ্যের অর্থ দপ্তরের আধিকারিকরা।
সেই রাজ্যগুলির মধ্যে আছে অন্ধ্র প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাডু, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।
২০২১-২২-র হিসাব অনেক রাজ্যের থেকে পায়নি কেন্দ্রের পরিসংখ্যান এবং কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রক। যেমন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়। তাই তালিকায় প্রত্যেক রাজ্যের ২০২১-২২-র হিসাব রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দিতে পারেনি। মূলত ২০২০-২১-র রাজ্যওয়াড়ি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে।
এই তালিকায় মাথা পিছু গড় আয়ে পশ্চিমবঙ্গ ১২ নম্বরে আছে। পশ্চিমবঙ্গের পিছনে আছে উত্তর প্রদেশ, ওডিশা, মধ্য প্রদেশ, বিহার, আসাম, ঝাড়খণ্ড। দেশে সর্বনিম্ন মাথা পিছু গড় আয় উত্তর প্রদেশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত ওই রাজ্যে মাথা পিছু গড় আয় ৩৯,৩৭১ টাকা। বামফ্রন্ট পরিচালিত কেরালায় মাথা পিছু গড় আয় ১,৩৪,৮৭৮ টাকা। দেশের ২০টি বড় রাজ্যের মধ্যে কেরালা পঞ্চম।
চলতি মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রতি বছরই নভেম্বর-ডিসেম্বরে ‘হ্যান্ডবুক অব স্ট্যাটিসটিকস অব ইন্ডিয়ান স্টেট’ প্রকাশ করে রাজ্যগুলির অর্থনীতির হাল হকিকত তুলে ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দেখা যাচ্ছে অনেকগুলি রাজ্যে ২০১৯-২০-র তুলনায় ২০২০-২১-এ মাথা পিছু গড় আয় কমেছে। ওই সময়ে করোনার প্রভাব মারাত্মক ছিল। ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে মাথা পিছু গড় আয় কমেছে। দু’টি রাজ্যে তা বেড়েছে— মণিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গ! ২০১৯-২০-তে মণিপুরে মাথা পিছু গড় আয় ছিল ৫১,৬২৫ টাকা। তা ২০২০-২১-এ হয়েছে ৫১,৮৭৬ টাকা। আর পশ্চিমবঙ্গে দু’বছর আগে মাথা পিছু গড় আয় ছিল ৭১,৭১৯ টাকা। একবছর পর, ২০২০-২১-এ দাঁড়িয়েছে ৭২,২০২ টাকা!
যখন উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, কাজ কমেছে, অনেকের চাকরি গেছে, তখন মাথা পিছু গড় আয় ৪৮৩ টাকা বাড়ল কী করে? রাজ্যের অর্থ দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, ‘‘চাষ হয়েছে। কৃষির উৎপাদন হয়েছে। তার বিক্রিও কিছু হয়েছে। তাই মাথা পিছু গড় আয় সামান্য বেড়েছে। যেসব রাজ্যে শিল্প অনেক, সেগুলি বেশি ধাক্কা খেয়েছে।’’
দেখা যাচ্ছে অর্থনীতিতে শিল্পোৎপাদন ক্ষেত্রগুলির অবদান পশ্চিমবঙ্গে কমেছে। ২০১৯-২০-র তুলনায় ৫%-র বেশি কমেছে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে পশ্চিমবঙ্গের মূল্য যোগ।
তবে এই গড় আয়ের সামান্য বৃদ্ধি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের দুর্দশার বিশেষ হেরফের করতে পারেনি। আগের বছর পশ্চিমবঙ্গ ১৩ নম্বরে ছিল। এবার ওডিশার গড় আয় কমে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ ১২ নম্বরে পৌঁছেছে।
Comments :0