চিন্ময় কর: ডেবরা
ডেবরা ব্লক দপ্তরের সামনে তখন মানুষের ভিড়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে খেতমজুর মানুষ, জবকার্ড হোল্ডার মানুষ কাজ চাইছেন কাজ। বজ্রপাত তখন যেন লড়াইয়ের অগ্নিবান হয়ে হাজির। পরোয়া নেই গ্রামের মানুষের। খেতখামারে কাজ করতে হয় এমন পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই।
ডেবরা ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে একশো দিনের প্রকল্পে কাজের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ চলেছে। ৪-ক ফর্ম ভরে জমা দিয়েছে চার হাজার পরিবার। সিপিআই(এম) শিবির খুলেছে ডেবরা বিডিও দপ্তরের সামনে। জনতার ভিড় বেড়েছে, বাড়াতে হয়েছে ফর্ম ভরার টেবিল।
মানুষ কাজ চাইছেন। কাজের আকাল। গ্রামগুলি পুরুষহীন। পরিযায়ী শ্রমিক বাবা-ছেলে। ঘরের মহিলারাই পরিবারের জবকার্ড নিয়ে হাজির। সকাল ১০ টায় শুরু হলেও রাত আটটা পর্যন্ত বিডিও দপ্তর ঘেরাও করে চলে সেই ফর্ম জমা দেওয়া। বেলা দেড়টা পর্যন্ত বিডিও ‘রিসিভড কপি’ নিয়ে টানাপোড়েন চালান। রাতভর ঘেরাওয়ের হুমকির সামনে মানতে হয়েছে দাবি।
সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল, জেলা নেতা সুমিত অধিকারী সহ ডেবরা ব্লকের পার্টি নেতৃত্ব সামলেছেন শিবির। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার ৩১৭৮ টি পরিবার এবং এর আগে গ্রামপঞ্চায়েত গুলি মিলিয়ে ডেবরা ব্লকে আরো ২৪০০ টি পরিবারের জব কার্ডে কাজ চেয়ে ৪-ক ফর্ম জমা দেওয়া হয়।
এই আবেদন পত্র জমা দিতে আসা জ্যোৎস্না দন্ডপাট বলেন যে তাঁর স্বামী স্বপন দন্ডপাট প্রতিবন্ধী। দিনমজুরি করেই তিনি সংসার চালান। বড় ছেলে সুদীপ দন্ডপাট ডেবরা কলেজে ভর্তি হয়ে পড়া ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ওড়িশায় কাজ করেন আজ দুই বছর। ছোটো ছেলে অপু দন্ডপাট নবম শ্রেণির ছাত্র। সেও মাঝে মাঝে দিনজুরী করে। দলপতিপুরের জয়ন্তী মিশ্রের স্বামী তপন মিশ্র বলেন যজমানি আর দিনমজুরি করে সংসার চালাই। বয়স হয়েছে, বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। বড় ছেলে চন্দন মিশ্র কলেজ পড়া ছেড়ে মুম্বাইয়ে রঙ কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। তার পাঠানো টাকায় সংসার চলে। ছোটো ভাই কাঞ্চন মিশ্র দশম শ্রেণিতে পড়ে। সিপিআই(এম)’র দাবি গত তিন বছরে রাজ্য সরকারের ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে বছরে ৫০ দিনের কাজ ডেবরা ব্লকে কারা পেয়েছেন তার তালিকা দিতে হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষনা করেছিলেন, রাজ্য সরকার সেই কাজ দেবে। এর উত্তরে থতমত খেয়ে নীরব থাকেন ডেবরা ব্লকের জয়েন্ট বিডিও। তিনি বলেন এই কাজের জন্য কেবল জবকার্ড হোল্ডারের নাম নথি ভুক্ত করে নবান্নে পাঠানো হয়েছে। কাজের তথ্য দপ্তরে নেই।
রক্ষা করো জব কার্ড, আদায় করো কাজের অধিকার। এই লড়াই চলবে দ্বিমুখী পথে। জানিয়ে দিলেন সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক বিজয় পাল। কেন রাজ্যে আজ রাজ্যে তিন বছর ধরে একশ দিনের কাজ বন্ধ। ভুয়ো জবকার্ড ও ভুয়ো মাস্টার রোলে কোটি কোটি টাকা লুঠে জড়িত তৃণমূল ও বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকার এই দুর্নীতির তদন্তের নামে কেন্দ্রীয় টিম পাঠিয়ে আজ তিন বছরে চোরদের বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন। উল্টে গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে একশ দিনের বরাদ্দ টাকা বন্ধ করে দিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এই দুর্নীতিবাজদের আড়াল করেছে বিজেপি।
পাল বলেন, আইনের নির্দেশ রয়েছে দেশের মানুষ কাজ চেয়ে ৪ক ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিলে ১০ দিনের মধ্যে প্রশাসন কাজ দিতে বাধ্য গ্রামীণ নিশ্চয়তা প্রকল্পে। নইলে আবেদনকারীকে ভাতা দিতে বাধ্য। এই দাবি আদায়ে রাজপথ থেকে সরকারি দপ্তর অচল করে চলবে লাল ঝান্ডার লড়াই। পাশাপাশি পার্টির পক্ষ থেকে আইনি লড়াইও চলবে। সেই আপসসহীন লড়াইতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান বিজয় পাল।
তিনি জানান, জেলার সমস্ত ব্লকে এই কর্মসূচী চলবে জুন পর্যন্ত। তারপর কাজ না দিলে দেখা হবে কলকাতা হাইকোর্টে। এই প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডারদের জমা দেওয়া ফর্মের প্রতিলিপি নিয়েই চলবে প্রতিবাদ।
Comments :0