গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বড়সড় ধাক্কা খাবার পর বিজেপি ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি যে স্তরে তারা নিয়ে গেছে তাতে ভোট মেরুকরণ কোনও স্থায়ীরূপ নেয়নি। তাই বিজেপি’র পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে বিভাজনের রাজনীতির তীব্রতা বাড়াতে হবে এবং তাতে আরও হিংসাত্মক সংঘাতের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেখানে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ-ঘৃণাকে পরস্পরের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে গেঁথে দিতে হবে। উত্তর প্রদেশে লোকসভা ভোটে কার্যত হেরে যাবার পর দলের মধ্যেই অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে উঠছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যোগী বিরোধীর সক্রিয় হয়ে যোগীকে সাইড লাইনের বাইরে সরিয়ে দিতে ছক কষতে শুরু করেন। যোগীও জানেন রাজ্যে দলের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে না পারলে ক্ষমতার রাশ আর বেশিদিন তাঁর হাতে থাকবে না। তেমনি মোদীর পর প্রধানমন্ত্রী হবার সুপ্ত বাসনাও অধরা থেকে যাবে। তাই একরকম দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে নিজেকে সামনে আনার জন্য আগ্রাসী হিন্দুত্বকে আশ্রয় করলেন। সেই আগ্রাসী হিন্দুত্বের নয়া স্লোগান তুললেন বাটেঙ্গে কাটেঙ্গে। মোদী তাকে পরিশীলিত করে বললেন এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়। অর্থাৎ মুসলিম বিরোধী ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়িয়ে, মুসলিম ভীতি জাগিয়ে হিন্দুদের জোট বেঁধে বিজেপি’র দিকে আনার কৌশল নিলেন দু’জনেই। আর প্রশাসনিকভাবে উপনির্বাচনের সময় পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করে যথেষ্ট ভোট লুটের ব্যবস্থা হয়। ভোট লুট করেই পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মুসলিম প্রধান কুন্দরকি বিধানসভায় দেড় লক্ষ ভোটে জিতেছে যোগীর দল। পুলিশ দিয়ে মুসলিমদের ভোট দেওয়া আটকিয়ে ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম বিজেপি এখানে জিতেছে অস্বাভাবিক ব্যবধানে।
এই কেন্দ্রেই আছে মুঘল আমলের তৈরি জামা মসজিদ। আরএসএস-বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে স্থানীয় আদালত সমীক্ষার নির্দেশ দেয় বাবরের আমলে এর নিচে কোনও হরিহর মন্দির ছিল কিনা দেখতে। আগে থেকে পরিকল্পনা করেই ভোটের আগে তড়িঘড়ি প্রাথমিক সমীক্ষা করিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হয় ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে। ভোটের পর যখন ভোট কারচুপি ও ভোট লুট দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায় তখন সেটা আড়াল করতে ডিএম, এসপি ও বিশাল পুলিশ সহ সমীক্ষক দল পাঠানো। ছক কষেই উত্তেজনা সৃষ্টি করে গোলমাল পাকিয়ে গুলি করে খুন করা হয় চার জনকে।
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের নিচে মন্দিরের কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া না গেলেও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তালে তাল মিলিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাকে সামনে রেখে এবার হিন্দুত্ববাদী সর্বত্র মসজিদ-মাজারের নিচে মন্দির ছিল বলে উন্মাদের মতো হল্লা তুলছে। স্থানীয় আদালতও সমীক্ষার নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ধর্মীয় উত্তেজনা ও বিভাজন। ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন অনুযায়ী কোনও ধর্মস্থানের চরিত্র বদল করা যায় না। অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে যেখানে যাদের যত ধর্মস্থান ছিল সেগুলি তেমনই থাকবে। সেগুলির চরিত্র কোনও অবস্থাতেই বদলানো যাবে না। সেই আইন লঙ্ঘন করে অযৌক্তিক ধর্মীয় বিশ্বাসে ভর করে মন্দির বানানোর অনুমতি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। আজ সেই রায় দেখিয়ে স্থানীয় আদালতগুলিও সেই আইনের বাইরে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসে ভর করে সমীক্ষার নির্দেশ দিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদকে ক্ষমতার সোপান দখল দিতে এইসব আয়োজন অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।
Yogi on devastating move
যোগীর ধ্বংসাত্মক চাল
×
Comments :0