লক্ষ্ণৌ, ২৮ আগস্ট— গোটা সোশাল মিডিয়ার দখল নিতে নেমে পড়লেন আদিত্যনাথ যোগী। সোশাল মিডিয়ায় বিরুদ্ধ স্বর দমন করতে মোদী যখন ইউটিউবার ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ঘেরাটোপে ঘিরতে কড়া আইনের বন্দোবস্তে ব্যস্ত, তখন উত্তর প্রদেশে যোগী নিজের প্রচারে এই প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব ‘ধামা ধরা বাহিনী’ গড়তে নেমে পড়লেন। মোদী যেমন গোটা মিডিয়াটাকেই গত দশ বছর ধরে নিজের তল্পিবাহক বানিবে ফেলেছেন। এখন যোগী সরকারের প্রচার করলেই উত্তর প্রদেশে সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা মাসে ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। মঙ্গলবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে গৃহীত নতুন ডিজিটাল মিডিয়া পলিসিতে এমনই ব্যবস্থা পাকা করেছেন আদিত্যনাথ যোগী। তবে শুধুই পুরস্কার নয়, সরকারে না-পসন্দ পোস্ট ঠেকানোরও বন্দোবস্ত নতুন আইনে রেখেছেন যোগী। সোশাল মিডিয়ায় সরকারের কাছে ‘আপত্তিজনক’ ও ‘দেশবিরোধী’ পোস্টের জন্য কড়া সাজারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে। ‘দেশ বিরোধী’ বা ‘আপত্তিকর’ কোনও টেক্সট, ভিডিও, ছবি, কার্টুন ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হলে অভিযুক্তের তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি যোগী সরকারের এই নতুন নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার শ্বাসরোধ করতেই এই বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই নয়া নীতি নিয়ে বিজেপি সরকার আসলে গোটা ডিজিটাল মিডিয়ার দখল নিতে চাইছে। যেখানে নিজেদের বাহবা দেওয়ানোর পাশাপাশি সমালোচনাকে দমিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কংগ্রেসের কথায়, সরকার এখন খুল্লাম খুল্লা ডিজিটাল মিডিয়ার দখলে নেমেছে। এটা যদি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদ না হয়, তাহলে কোনটা বিপদ?
এই নতুন নীতি মঙ্গলবারই মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই পুরস্কার-শাস্তি আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে এই ধরনের অপরাধের বিচার আইটি অ্যাক্টের ৬৬ ই ও ৬৬ এফ ধারায় করা হত। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে রাশ টানতে কেন্দ্রে মোদী সরকার গতবার বিরোধী শূন্য সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া ডিজিটাল পলিসিকে ঘষে মেজে আরও ক্ষুরধার করতে নতুন আইন আনছে। যেখানে, মোদী বিরোধী ইউটিউবার বা ইনফ্লুয়েন্সারদের টুটি চিপে ধরার যাবতীয় বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। এখন যোগীও সেই কণ্ঠরোধের পাশাপাশি অর্থের টোপ দিয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের নিজের প্রচার করার কাজে নামাতে চলেছেন। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প, উদ্যোগ নিয়ে বিষয়বস্তু শেয়ার করা হবে আগামী দিনে। সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের প্ল্যাটফর্মে সরকারের স্কিম ও উদ্যোগগুলি শেয়ার করে সোশাল মিডিয়া থেকে মাসে ৮লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারে। এই নতুন পলিসি সামাজিক মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য রোজগারের সুযোগও তৈরি করবে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হয়েছে। সরকারের হয়ে প্রচার করলে সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের যে মাসিক অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে এমন উদ্যোগ অভিনব বলেই দাবি করা হচ্ছে। নীতিতে কোন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে কে কত টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।
দেশে উত্তর প্রদেশ সরকারই প্রথম সোশাল মিডিয়াকে সরকারি প্রচারে ব্যবহারে এমন সুনির্দিষ্ট প্রকল্প হাতে নিল। যদিও দেশের কমবেশি সব সরকারই অনলাইন নিউজ পোর্টালকে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এক্স হ্যান্ডল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের জন্য মাসে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ, ৪ লক্ষ ও ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে ইউটিউবে ভিডিও, শর্টস ও পডকাস্টের জন্য ইনফ্লুয়েন্সাররা মাসে ৮ লক্ষ, ৭ লক্ষ, ৬ লক্ষ বা ৪ লক্ষ টাকা করে পেতে পারেন। সরকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে যাবতীয় বিষয়টি দেখাশোনা করবে বলেও জানানো হয়েছে।
বিজেপি’র মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠী সাথে সাথেই নেমে পড়েছেন যোগীর এই নীতির পক্ষে সওয়াল করতে। তাঁর দাবি, ‘সমাজে কী ঘটছে’ সে ব্যাপারে নজর টানাই বিজেপি’র নীতি। নতুন এই ডিজিটাল পলিসি সেই নীতি মেনেই করা হয়েছে। যোগী ‘একটা নজির গড়লেন’ বলে দাবি করে বিজেপি নেতা বলেন, ‘ভালো কাজের’ প্রশংসার পাশাপাশি নতুন নীতি গুজব ছড়ানো, সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি নষ্ট করার মতো খারাপ কাজকে কড়া হাতে দমন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
Comments :0