People want justice

শক্ত হাতে শিক্ষা পেলে শাস্তি হবে ঠিক

রাজ্য বিশেষ বিভাগ

প্রতীম দে

 

শুধু কি আরজি করের একটিই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই জনবিস্ফোরণ? নাকি মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ পথে নেমেছেন বারবার বিচার না পেয়ে। এই প্রশ্ন বড় হয়েছে সর্বত্র।

ক্ষোভ এই জন্য যে আসল দোষীদের আড়াল করছে সরকার নিজে। আড়াল করছে পুলিশ। প্রথমে আত্মহত্যা বলা। দেহ দেখার জন্য পরিবারকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখা। দ্রুত শেষকৃত্য সেরে দেওয়া, পরিবারকে প্রায় দূরে রেখে। খুন করা হয়েছিল যেখানে সেই সেমিনার কক্ষের পাশে দেওয়াল ভাঙা, সংস্কারের নামে। আর জি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে শাস্তির বদলে পাশের মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষের আসনে বসানো। সিবিআই আসার আগে বহু অভিযোগে বিদ্ধ এই অধ্যক্ষের জেরা না হওয়া। তারপর প্রতিবাদীদের ওপর হুমকি এবং শেষ পর্যন্ত ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আরজি করে হামলা হতে দেওয়া। অবিচারের তালিকা দীর্ঘ। ক্ষোভও চলমান। 

প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দশ বছর আগে তৃণমূল সরকারকে, সমাজ বিরোধীদের সরকার বলে চিহ্নিত করেছিলেন। একটার পর একটা ঘটনা তা প্রমাণ করছে এখন।  তৃণমূলের ১৩ বছর শাসনে একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত একটারও ক্ষেত্রে কোন কঠোর শাস্তির কথা শোনা যায়নি। প্রতিটি ঘটনায় প্রতিবাদীদের শাসানো হয়েছে প্রশাসন এবং তৃণমূলের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে হুমকি দিতে ছাড়েননি। এই প্রতিটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে কুরুচিকর মন্তব্য। একবারের জন্য তিনি ক্ষমা চাননি ওই সব মন্তব্যের জন্য।

২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিট দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাজানো ঘটনা।’’ কামদুনি কাণ্ড ২০১৩-তে। প্রতিবাদীদেরই আক্রমণের লক্ষ্য বানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।  হাঁসখালি কাণ্ডের (২০২২) সময় বলেন, ‘‘লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল।’’ 

এবারেও মুখ্যমন্ত্রী পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার তা ফিরিয়ে দিয়েছে। তাঁরা চান বিচার। আসল দোষীদের শাস্তি।

আর এখানেই সরকারের আপত্তি। প্রথম দিন থেকে একটা খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তারা পারল না। প্রথম দিন থেকে বিচারের দাবি চেয়ে সরব হলেন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই,  সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং জুনিয়র ডাক্তাররা। 

ঘটনায় প্রথম যাকে গ্রেপ্তার করা হয় তার নাম সঞ্জয় রায়। কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার। কিন্তু তার গ্রেপ্তারির পর জানা যাচ্ছে যে ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল। এছাড়া তার নাকি ছিল অবাধ যাতাযাত। পুলিশ প্রশাসন জানতো না, স্বাস্থ্য দপ্তর জানতো না হাসপাতালে বিভিন্ন বেআইনি কাজ চলছে?

১৪ আগস্ট মহিলাদের রাত জাগা কর্মসূচি রাজ্যের বুকে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। শুধু মহিলারা একা নন বহু পুরুষও সেদিন প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। স্লোগান উঠেছিল, জাস্টিস ফর আরজি কর এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের।

কেন এই দাবি উঠবে না? চাকরি নেই, শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, নারী নির্যাতন বাড়ছে। মানুষের পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেওয়ালে। আর প্রশাসন যখন দোষীদের আগলে রাখতে চাইছে তখন তো আর জনরোষ আটকানো যায় না। যেই রাতে গোটা রাজ্য রাত জাগলো সেই রাতে হামলা হলো আরজি কর হাসপাতালে চললো ভাঙচুর। পুলিশ দাঁড়িয়ে রইলো। মুখ্যমন্ত্রী যখন বললেন ডিওয়াইএফআই, এসএফআই ভাঙচুর করেছে, লালবাজার তুলে নিচ্ছে ছাত্র-যুব কর্মীদের। কেন ছাত্র যুবরা ভাঙচুর করবে? তারা কেন দোষীদের আড়াল করতে যাবে? কোন ব্যাখ্যা নেই সরকারের কাছে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল নজর ঘোরাতে চাইছে। বিধানসভা ভাঙচুর করা তৃণমূল নেত্রী শুক্রবার শহরে মিছিল করেছেন বিচার চেয়ে! সরকারের প্রধান মিছিল করছে সরকারের বিরুদ্ধে!

উনি যদি কামদুনির, হাঁসখালির বিচার করতে পারতেন তাহলে আজ মানুষকে পথে নামতে হতো না। আরজি করেও যদি বিচারের সদিচ্ছা দেখাতেন, তাহলে পথে নামতে হতো না।

Comments :0

Login to leave a comment