Md Salim press conference

তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষ জোটবদ্ধ হচ্ছেন: সেলিম

রাজ্য

Md Salim press conference

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি’কে হারানোর প্রস্তুতিতেই জেলাগুলিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বুধবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটির সভায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বামফ্রন্ট ছাড়াও বর্তমান সময়কালে শিরদাঁড়া সোজা রেখে যারা তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় স্তরে আলোচনা শুরুও হয়ে গেছে। তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষকে জোটবদ্ধ করার এই প্রচেষ্টায় জেলাগুলিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।

  সেলিম জানিয়েছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’কে পঞ্চায়েত নির্বাচনে একসঙ্গে হারানোর জন্য রাজ্যস্তরে নতুন কোনো জোট হবে না, বামফ্রন্টই লড়বে। কিন্তু জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রামপঞ্চায়েত ভিত্তিক আলোচনা করে স্থানীয় স্তরে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সবাইকে একজোট করা হচ্ছে। কে কোথায় লড়বে তা নিয়ে কংগ্রেস, আইএসএফ সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা এগচ্ছে। ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাতে। একদিকে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তৃণমূল ভাঙছে, দিশেহারা বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা কথা বলছে।


   তৃণমূলকে হারাতে বিজেপি’কে অথবা বিজেপি’কে হারাতে তৃণমূলকে ব্যবহারের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, আমরা ওদের মতো দল বদলে যাতায়াতে বিশ্বাস করি না। বিজেপি এবং তৃণমূলে যাতায়াতের মাঝে পাঁচিল কী আছে? কেবল দন্ডি? সেটাও তো আদিবাসী তফসিলি জাতির প্রান্তিকদের জন্য প্রযোজ্য। ওরা জাতিভেদে বিশ্বাসী। আদিবাসী মহিলাদের দন্ডি কাটিয়ে তৃণমূলে ঢোকায়, কিন্তু  অর্জুন সিং, বাবুল সুপ্রিয়দের বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরানোর সময়ে দন্ডি কাটিয়েছিল? 
   পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্তদের মনোনয়ন দেবে না বলে অভিষেক ব্যানার্জি যে মন্তব্য মিডিয়ার সাহায্যে প্রচার করেছেন তাকে হাস্যকর বলে অগ্রাহ্য করেছেন সেলিম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির শিখরে বসে আছেন পিসি-ভাইপো। তারা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দেবেন? দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়বেন?
   

সারদা-নারদায় দুর্নীতিগ্রস্তদের কাদের বিরুদ্ধে কবে কোন ব্যবস্থা ওরা নিয়েছে? জেলে ঢোকার পরেও তাদের সম্পদ কিংবা বাঘ বলে প্রশংসা করেছে। 
  তৃণমূলের মুখে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কার নেতাদের অত্যাচারের অভিযোগ সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, আমরা যখন বাংলার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কথা বলছি ওরা তখন অতীতে ফিরে যাচ্ছে। ওদের ভিত্তিহীন বস্তাপচা অভিযোগগুলির সত্যতা যাচাই না করে মিডিয়া ফের এত প্রচার করছে কেন? 
  তিনি বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষকে এককাট্টা করে ওদের হারানো যায় এটা সাগরদিঘি দেখিয়ে দিয়েছে। এখন বিপাকে পড়ে তৃণমূল এবং বিজেপি’র সঙ্গে মিডিয়াও যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে। কিন্তু দুর্নীতি ও দুষ্কৃতিমুক্ত বাংলা গড়ে তুলতে পারে কেবলমাত্র উজ্জীবিত বামপন্থীরাই। বামফ্রন্টই এরাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে গরিবের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল, মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করেছিল। আজ সারা দেশে লোকসভা থেকে গ্রামসভা আক্রান্ত। ফ্যাসিবাদী প্রবণতায় শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী সবার অধিকার আক্রান্ত।
  


মানুষের হাতে কাজ নেই, কৃষকের ফসলের দাম নেই। এই অবস্থায় রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে বর্তমান সময়ের আন্দোলন সংগ্রাম এবং সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর করতে আমাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 
  সাংবাদিক বৈঠকে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করা হয়, বিজেপি-বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইতে তৃণমূলকে দেখা যাবে কিনা। ইয়েচুরি বলেন, এটা অঙ্কের যোগ-বিয়োগের বিষয় নয়। বিজেপি বিরোধিতায় কার কী অবস্থান সেটা দেখতে হবে। তৃণমূলের বিজেপি-বিরোধী সত্তা নিয়েই তো প্রশ্নচিহ্ন আছে। ওদের পুরনো ট্র্যাক রেকর্ড কী বলছে? ওরা এনডিএ’তে ছিল, ফের মওকা পেলে কোথায় থাকবে? রামনবমীতে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে কি? পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের অবস্থানই যদি বাম-কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্য হয় তাহলে বিজেপি-বিরোধিতায় তাদের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ তো থাকবেই।

  কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সিবিআই-ইডি’র তদন্ত সত্ত্বেও দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদের শাস্তি না হওয়ার উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেছেন, দুর্নীতি তো স্পষ্ট। তাহলে ন্যায়বিচার হচ্ছে না কেন? এতেই তো বোঝা যাচ্ছে বিজেপি’র সঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া কীভাবে হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment