Post editorial

দ্বন্দ্বতত্ত্ব এবং ঘরে বাইরে যুদ্ধের দামামা

উত্তর সম্পাদকীয়​

গৌতম দেব

দ্বন্দ্বতত্ত্বের মূল কথা হলো জগতে সব কিছুই পরিবর্তনশীল অর্থাৎ কোনও কিছুই অনড় অচল নয়, নিশ্চলও নয়। অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকা সত্ত্বেও মার্কসবাদ শক্তিশালী কারণ মার্কসবাদ বস্তুর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনশীলতার আলোকচ্ছটায় সব কিছু বিচার বিবেচনা করে। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্বে বিপুল জনসমষ্টি আছে যারা সত্যের উপর গড়ে ওঠা বক্তব্য হিসাবে এই তত্ত্ব মানতে অনিচ্ছুক। বিশ্বে মানবতা গঠন প্রসঙ্গে মানুষের পূর্বপুরুষ বানর ছিল, একথাই তাঁরা মানতে চান না। আদম-ইভ ঈশ্বর প্রেরিত প্রথম মানবযুগল। প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির প্রথম বংশধর এই মত অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখানোর জন্য এবং সর্বোপরি ঈশ্বর বিশ্বাসে মূলগত পার্থক্য থাকায় মানব ইতিহাসের মৌলিক গন্ডগোলটা হয়ে যায়। বলা বাহুল্য দ্বন্দ্বতত্ত্ব সম্বন্ধেও ভাববাদীরা ছিলেন অবিশ্বাসী এবং এদের আজগুবি তত্ত্ব হিসাবে দেখেছেন। বলা বাহুল্য বানর থেকে মানুষের জন্ম হয়েছে এদের এই যুক্তিতত্ত্ব  দার্শনিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং তারা একযোগে মার্কস-এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের বিরোধিতা করেন এবং মানব সৃষ্টির বস্তুবাদী ধারণাকে সরাসরি  ঈশ্বর বিরোধিতা এবং একটি অপরাধ মূলক কাজ হিসাবে গণ্য করলেন।
অবশ্য এই দীর্ঘ ইতিহাসের পক্ষপুটে মানুষের আবির্ভাব কিভাবে হলো সে প্রশ্নের উত্তর মিললো না। যেমন বালী এবং সুগ্রীবের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং তজ্জনিত রিখটার স্কেলের দশ কম্পনের যুদ্ধটা ঠিক কোথায় হয়েছিল, অযোধ্যায় শ্রীরামচন্দ্রের নিবাস সরযু নদীর তীরে নির্দিষ্ট হলেও সুপ্রিম কোর্টের বিধান, আর্কিওলজিকাল সার্ভের বিধান, লোকমুখে নানান গাথা এবং কীর্তনগীতি থাকা সত্ত্বেও রামভক্তরা অযোধ্যায় তাদের সমর্থনে বৈজ্ঞানিক কোনও ব্যাখ্যা পেলেন না আর নির্বাচনেও জনসমর্থন পেলেন না।
এই সব জটিল কঠিন সঙ্গীহীন প্রজেক্টের উদ্গাতা পণ্ডিতদের সব ব্যাপারেই রেফারেন্স মিলিয়ন-বিলিয়ন বছরের। এসব নাড়াচাড়া করে সঠিক সময়সীমা বের করা খুবই কষ্টকর এবং প্রায় অসম্ভব।
সূর্যের মহাজাগতিক কর্মকল্পে বিশ্বের সৃষ্টি যদি হয়ে থাকে তাহলে সূর্যের অনেক বিষয়ে এদের মিল খুঁজে পাওয়াটাও স্বাভাবিক। অন্তত কিছুটা। দ্বন্দ্বতত্ত্বের নিশানায় থাকা এরা ছুটে এসে এদের মিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ইয়ার পার হওয়ার মাঝপথে হারিয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব না। ৬০ হাজার বছর এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমল,  সাগর-মহাসাগর হলো জলে ভর্তি, হলো গাছপালা এবং ফুটন্ত দুধের উপর ঠান্ডা হলে যেমন সর তৈরি হয়, তেমনই উদ্ভব হলো বিভিন্ন স্তরের, কোথাও বিস্তীর্ণ মহাসমুদ্র, কোথাও অন্তহীন জঙ্গল, আবির্ভাব হলো বিশালাকার উভচর জীবদের— ডায়নোসর, ব্রুনোটেরাস।
হেগেলীয় দ্বন্দ্বতত্ত্বের কমতির দিকগুলিকে বাদসাদ দিয়ে তাকে সোজা করে মাটিতে পা দুটি রাখার ব্যবস্থা করলেন মার্কস। সেই দর্শনে আজ নতুন যুগের বাস্তবতাকে সামনে রেখে দ্বন্দ্বতত্ত্বের আগুপিছুর খেলা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্বচ্ছ করলেন।
ডারউইনেরই অমোঘ তত্ত্বকে সামনে রেখে গাছপালা এবং প্রাণের ক্রমবিকাশের ধারণা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু আমরা দেখছি বা অনাগত দিনে দেখবো, তার সম্পর্কে স্পষ্ট এবং গভীর দৃষ্টিতে বিষয়বস্তুর উপরে আলোকপাত করা এবং মানবসমাজের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে। 
মার্কিন দেশ অনেকটা এগিয়ে থাকা দেশ, বিশেষ করে যদি আমরা অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সাথে মার্কিন দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করি। দেশটার হাবভাবও অন্যরকম। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর পৃথিবীতে শুধুমাত্র মার্কিন দেশের উপর নাকি দায়িত্ব বর্তেছে এত বৈচিত্রে ভরা এই বিশাল মহাদেশটাকে ঠিকঠাক রাখা এবং স্কুলের ক্লাস টিচারের মতো দুষ্টু ছেলেদের শাস্তি এবং বাধ্য ছেলেদের জন্য ট্রফি/ লজেন্সের ব্যবস্থা করার। মার্কিনীদের খুব পছন্দ করে এমন একগুচ্ছ দেশ আছে, মার্কিনীদের যে কোনও কাজকে তারা সমর্থন করে উদ্বাহু নৃত্য জুড়ে দিয়ে। কিছু আছে যারা আবার একটু দেখে-শুনে বাজিয়ে, প্রয়োজনে ওদের যেসব সিদ্ধান্ত সুগন্ধী ছড়াচ্ছে না, দেশের জনমতও তাদের সেসবের পক্ষে নয়; ফলে সাধারণভাবে কিছুটা পক্ষে কিছুটা বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কিছু শক্তিশালী দেশ আছে চীন, রাশিয়ার মতো যারা নীতিগত কারণে ওদের বিরুদ্ধে– এটা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে তাদের দ্বিধাবোধ হয় না। বিশ্বযুদ্ধের সলতে পাকাচ্ছে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলি। বিশ্বের অন্যতম নামী ও দামি জার্নাল (The Economist) তার একটি সংখ্যার সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তুলেছে ‘How to avoid a Third World War)? The Economist এর লেখা অথবা সম্পাদকীয় বাচ্চা ছেলেমেয়ের হাসিঠাট্টা ভেবে উড়িয়ে দিতে পারলে ভালো থাকতাম। কিন্তু প্রশ্নটার গভীরে গিয়ে আমাদের সত্যাসত্য নির্ধারণ করতে হবে। এখন সবাই বুঝে গেছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ নামেই ইউক্রেনে হচ্ছে। মার্কিন নেতৃত্বে ন্যাটো তার যা অস্ত্র-সম্ভার জমা আছে তার বিরাট অংশ ব্যয় করছে এখন ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে– অবশ্য রুশের হাত থেকে ইউক্রেনকে বাঁচাবার নাম করে। কেন? ইউক্রেন এত শক্তিশালী হলো যে তারা রাশিয়াকে ওদের মাটিতে যুদ্ধ করে হারাবে? অসম্ভব! মার্কিন দেশ, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি তুরস্ক সহ সব দেশ তাদের অস্ত্রভাণ্ডার খুলে দিয়েছে ইউক্রেনের কাছে। সরাসরি সর্বাধুনিক অস্ত্রগুলি তুলে দিচ্ছে। শুধু অস্ত্রগুলি পেলে চলবে না, তা ব্যবহারের কৌশল জানতে হবে। কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে ইউক্রেনের সেনাদের ট্রেনিং দিতে। কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার আসছে ইউক্রেনের অস্ত্র কেনার বিল মেটানোর জন্য।

কিন্তু একা রাশিয়াই যথেষ্ট ন্যাটোর যৌথ হামলা রুখতে। রাশিয়া, চীন, ভারত এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বজুড়ে জনমত তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ন্যাটোর লোকজন প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে ফন্দি ফিকির গুনছে কি করে সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে পারে। ন্যাটোকে তারা রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে এই যুদ্ধ করতে চাইছে সেটা স্পষ্ট। তা না হলে পুতিন এ কথা বলতে পারে যে রাশিয়া আক্রান্ত হলে অ্যা টম বোমা ব্যবহারের রাস্তাও তারা খোলা রাখছে। এ সব ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী  মমতা ব্যানার্জি বললে বা মদন বা শুভেন্দু বাহিনী বিবৃতি দিলে নাহয় অন্যভাবে নেওয়া যেত। 
এই বিশ্ব-পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারতে এখন ব্যস্ত ছিলাম ভারতের সরকার এবং ক্ষমতা কার হাতে যায় তার মীমাংসা নিশ্চিত করতে। ধরা হচ্ছে যে আগামী বিধানসভা নির্বাচন যথা সময়ে ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মমতার সরকার যাই প্রেমালাপ করুক না কেন তারা সুনিশ্চিত ছিল যে সংবিধান বা অন্যান্য বিষয়ে বিষয়ে কয়েকটি বিরোধী দলকে ম্যানেজ করতে পারলে ২৪ সালের লোকসভা এবং ২৬ সালের বিধানসভা ভোট একসাথে করে নিতে পারলে ফ্যাসিস্ত বিজেপি’র ভালো হবে। অবশ্য বিজেপি’র পক্ষে এরকম শরতের মেঘের মতো চিন্তা আনাগোনা করলেও অদের মূল চিন্তা রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়গুলি (Issue of the State Policy) ঠিক করা। তার ভিত্তিতে মানুষকে চালিত  (orient) করা, মারামারি, কাটাকাটি, আবার প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রীকে সন্তুষ্ট রেখে (good humour) নিজেদের দলটাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। 
এ রাজ্যে বিজেপি ফোকটে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা ইতিমধ্যে পেয়েছে। যদিও আমরা আমাদের পার্টি লাইন অনুযায়ী বিজেপি-কে প্রধান শত্রু হিসাবে গণ্য করেছিলাম। এবং বাংলার ইতিহাসে এরকম পচা গলা পূতিগন্ধময় সরকার আগে কারোর দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের প্রচুর ভোট পেল। সরকারে আছে মমতা। এই অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ বিজেপি এখন একই লাইনে নিজেরা চলার চেষ্টা করছে। তার সাথে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আমাদের দুর্গা প্রতিমার মূর্তি এবং অঙ্গসজ্জা এবং ক্লাবগুলিকে নাচিয়ে কুঁদিয়ে এ জাতীয় স্তরে ‘প্রথম’হবার প্রচেষ্টা করল একা তৃণমূল আর মোড়ে মোড়ে ছেলেপুলেদের অনেক টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা আর প্রজাতন্ত্র দিবসের আদলে প্যারেড করিয়ে মা দুর্গা ও তার পরিবারকে গঙ্গার ধারে নিয়ে আসা হলো কষ্টকল্পিত কার্নিভালের চেষ্টায়। মা বাড়ি ফিরলেন। এসব নিয়ে নাকি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতা হয়েছে। আমাদের দুর্গা প্রথম হয়েছে। এ ঘটনার সাথে সাথেই বিজেপি বা আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আরএসএস’র কর্তারা ঠান্ডা মাথায় দেখছেন যে তৃতীয় রাউন্ড বিজেপি সরকার হয়ে গেল। তাতে ভোট কতটা কমল কতটা বাড়ল বা মোটামুটিভাবে এক থাকলো- তা বোঝা যাবে, তবে সরল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থার (Simple majority system) ভোটে গভীরভাবে প্রত্যয়ী বিজেপি বুঝেছে হিন্দু ৭০ ভাগ আর মুসলমান বাকিটার মধ্যে ১৪.২৫ ভাগ হওয়ায় এবং কয়েকটি লোকসভা আসনে ৭০/৩০ এ বিন্যাস কার্যকর না হওয়ার জন্য জয়ের প্রশ্নে আরও অনেক সংসদীয় আসনে বিজেপি হেরেছে এবং হারতে থাকবে। ৭০ শতাংশের কাছাকাছি সব হিন্দু লাইন করে পদ্মফুলে ছাপ দেবে, এই গ্যারান্টি স্বয়ং রামচন্দ্র যদি ভোটের দায়িত্ব নেন তাহলেও কার্যকর করা মুশকিল। 
সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটা অংশকে বিজেপি ভোটার হিসাবে চাইছে। দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার হাতে থাকায় অনেকগুলি প্রকল্প তারা সংখ্যালঘুদের কাছে আনার জন্য নতুন ভাবে খুঁজে পেয়েছে। তাই আরএসএস’র সঙ্ঘচালক বলিরাম মাধব কলকাতার এক সমাবেশে যোগ দিতে এসে এই বিষয়টা উত্থাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে আরএসএস নেতৃত্বের একাংশ সংখ্যালঘু মুসলমানদের সম্পর্কে বিজেপি’র চিন্তা ভাবনা পুনর্মূল্যায়ন করার কথা ভাবছেন বা বলছেন বলে প্রকাশ। আর এই জাতীয় ভাবনার জন্য যদি রিষড়া, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুরে দাঙ্গা হয় তাহলে ক্ষতি কি? ঐতিহাসিক কার্যকারণে এদেশে সংখ্যালঘু মুসলমানরা একটু পিছিয়ে, হিন্দুরা একটু এগিয়ে। এগিয়ে মানে, সবাই বিদ্যাসাগর, রামমোহন, নেতাজী সুভাষ বা রবীন্দ্রনাথ নন। অথবা মতুয়া জাগরণের দুই সাধক হরিরাম-গুরুচাঁদ নন। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক বিজেপি দেশের আদিবাসীদের মধ্যে স্থান করে নিতে চাইছে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ে NGO- র মতো কাজ শুরু করে নিজের শাখা খুলে চলেছে। আর মমতাদেবী শুধুমাত্র চোখ বন্ধ করে নয়, সম্ভব হলে দু’-চারটে আসনে কিছু ফাঁকফোকর এবং কিছু দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে বিজেপি’র সুবিধা করে দিচ্ছে।
সঙ্ঘ পরিবারের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে এরা গণতান্ত্রিক দল নয় এবং গণতন্ত্রের সাথে এদের খুনখারাপির লাইন মেলেও না। উচ্চতর নেতৃত্বের কাঠামোর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।
বিজেপি জানে ভারতের মতো দেশে সাম্প্রদায়িকতা চূড়ান্তভাবে করার পরিণতি কি হতে পারে। আর যাই হোক কুড়ি কোটি মুসলমানকে শেষ করা যাবে না। ১০ কোটিকে মারলাম আর ১০ কোটিকে রাখলাম তাও হবে না। আপনি কি ওদের সব পাকিস্তানে পাঠাবেন? না বাংলাদেশে পাঠাবেন? আর তা না হলে আবার দেশ ভাগ। এই ২০ কোটির জন্য তো কিছু একটা ভাবতে হবে। আর নেতারা যদি লম্বা লিস্টটা একটু ছোট করেন, সাধারণ মানুষ যদি সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, হিংস্র বাঘের হরিণের উপর ঝাঁপিয়ে পরার মতো নির্দয় নিষ্ঠুর আক্রমণকে জানোয়ার-সুলভ কাজ হিসাবে ভাবতে শুরু করেন, আর যে ধর্মের নামে এসব ঘটে, সেই ধর্মরাজরা যদি ত্রিবান্দ্রাম তিরুপতি সহ হাজারো হিন্দু মন্দির, আর দিল্লির জামা মসজিদ এবং ইসলামিক ইনস্টিটিউট দেওবন্দ সহ হাজারো মসজিদের সোনা, হীরের ডালিটা খুলে দেন তাহলে তো মমতার সমস্যা মিটতে পারে। এই সব কালো সম্পদ এবং তা রক্ষা করার জন্যই তো ওদের দাঙ্গা করতে হয়।
সব মুসলমানকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হলে বিজেপি-কে এক অসম্ভব বিস্ফোরক সংবলিত শক্তির সাথে সমঝোতা করতে হবে। যেটা প্রায় অসম্ভব। জনসংখ্যা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশে অগ্রগতি বা অধোগতি সুনিশ্চিত করতে। এটা এই শতাব্দীর পূর্বে বিশেষ করে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময়ে স্পষ্ট করে দেখা গেছে। দশ বছর অন্তর জনগণনা এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও তা ঝুলে আছে। এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে জনসংখ্যার বিচারে এবার ভারত চীনকে টপকে প্রথম স্থান লাভ করতে চলেছে।
অথচ এই দেশে কত না পণ্ডিত তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তত্ত্ব হাজির করলেন। আমাদের মতো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রধান অস্ত্র হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে সঙ্ঘ পরিবার হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদানকেই জাতীয় নীতি হিসাবে গ্রহণ করতে চাইছে। এর উপরে সংবাদে প্রকাশ যে আমাদের কালীঘাট শ্মশানের পাশে ছোট্ট কুঁড়েঘরে থাকা, বিস্ফারিত নেত্রে দেশময় সমস্ত মানুষকে বলে চলেছেন যে, কলকাতা যথেষ্ট শান্তিপ্রিয় জায়গা। দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করাই তার সদম্ভ নীতি। স্পেশাল কোর্সে পাঠরতা সেই মহিলা সারাদিনে একটিও সত্য কথা বলেননি, এমনকি বাজেটেও মিথ্যা কথা সত্যের মতো করে নোট লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই রাজ্য পশ্চিমবাংলায় দেদার টাকা ধার করে যতরকমের ‘শ্রী’আছে সবকিছুকে যুক্ত করে সরকারি ট্যাক্সের টাকা গরিব লোককে বিলিবণ্টন হচ্ছে। আর এক মহিলা এদেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মোদী বাহিনীর কীর্তিকলাপ জানান দিচ্ছেন। আর মমতা ব্যানার্জি লক্ষ্মী ভাণ্ডার, সরস্বতী ভাণ্ডার আর সব আজগুবি ভাণ্ডারের গল্প শোনাচ্ছেন। অন্যদিকে আমরা যে টাকা পাই দিল্লি থেকে, তা বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে ঋণগ্রস্ততা বেড়েই যাচ্ছে। আবার এর সাথে এসেছে মোদীর ইনকাম ট্যাক্স বোনানজা, খাও দাও মস্তি করো। সামনের বার ইনকাম ট্যাক্স একেবারেই উঠে যেতে পারে।
এই  অবস্থায় রোগগ্রস্ত পুঁজিবাদ নানা ফন্দিফিকির করছে তাদের দুর্বল জায়গাগুলো গোপন করে রাখতে এবং অপরাধের বিষয়টা হচ্ছে- বিশেষ করে খোদ মাকিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত পশ্চিমী এবং ইউরোপীয় দেশগুলি ভারতীয়দের বিতাড়িত করছেন তাদের দেশ থেকে। বিশ্বের স্যাটেলাইট প্রচারের সুবিধা গ্রহণ করে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে সক্ষম হচ্ছে যে মাইগ্রেশন শুধুমাত্র দক্ষিণ থেকে উত্তরে নয়, পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিশ্বে সর্বত্র সংক্রামক ব্যাধির চেহারা নিয়েছে। তাই আসামির কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান থেকে আজকের বিশ্বে যে অবস্থা তার জবাব দিতে হবে এই সব রোগগ্রস্ত দেশগুলিকেই।

Comments :0

Login to leave a comment