GANASHAKTI EDITORIAL FOR 6 APRIL

সর্বনাশের ঠিকাদার

সম্পাদকীয় বিভাগ

editorial history rss  bengali news

সাভারকার-গোলওয়ালকারদের গাইড লাইন অনুসরণ করে বর্তমান হিন্দুত্ববাদী শাসকরা ইতিহাস সম্পর্কে যে জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করেছে তাকেই এখন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োগ করছেন। দেশ, জাতি, রাষ্ট্র সম্পর্কে সঙ্ঘ পরিবারের যে ধারণা তার সঙ্গে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণের কোনও সম্পর্ক নেই।

হিন্দুত্ববাদী নেতারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল এবং ধরে রাখার লক্ষ্যে যে রাজনৈতিক প্রকল্প নির্মাণ করেছেন সেটাই হিন্দুত্ববাদ। এটা পুরোপুরি মনগড়া একটা ধারণা মাত্র। যুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান দিয়ে একে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তাই হিন্দুত্ববাদীরা সর্বাধিক জোর দেয় বিশ্বাসের উপর। অর্থাৎ তারা যা বিশ্বাস করে এবং অন্যকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে সেটাই সত্য। যুক্তি ও বিজ্ঞান অজস্র প্রমাণ দিয়ে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে যে আর্যরা বাইরে থেকে এসেছে। 

কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা মনে করে আর্যরাই ভারতের আদি বাসিন্দা। আসলে আর্যদের ভারতীয় বানাতে না পারলে হ্নিদুত্ববাদের গোটা রাজনৈতিক প্রকল্পটাই মাঠে মারা যাবে।


এইভাবে কল্পিত ও মনগড়া একটি রাজনৈতিক তত্ত্বকে দাঁড় করাতে যে যে উপাদান জরুরি সেগুলিকে তারা নির্মাণ করার চেষ্টা করছে বিকৃত ও কল্পিত ইতিহাস বা তথ্য দিয়ে। তেমনি ইতিহাসে যে সত্য ও বাস্তব হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের পথের কাঁটা সেগুলিকে তারা বিকৃত করে বা গল্প বানিয়ে নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে অথবা একেবারে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করছে।


ছাত্র জীবন যেহেতু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে সাহায্য করে, বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে তাই ছাত্র জীবনকেই তারা টার্গেট করেছে চিন্তার ও ভাবনার জগতে বিকৃতি ঘটাতে। মোদী সরকারের নতুন শিক্ষানীতির আসল লক্ষ্য দেশের আগামী প্রজন্মকে হিন্দুত্ববাদের কাঠের পুতুল বানানো। এক্ষেত্রে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে ইতিহাস বিকৃত করে কাল্পনিক পুনর্নিমাণে। যেখানে বিকৃত করা সম্ভব হবে না সেখানে ইতিহাসে একটা গোটা অধ্যায়কেই প্রয়োজনে লোপাট করে দেবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যসূচি থেকে।


মোদী-শাহ’রা দায়িত্ব নিয়ে সে কাজটাই নিষ্ঠার সঙ্গে করছেন। তাই দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মুঘল যুগের অধ্যায়টাই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের বস্তুবাদী নিরপেক্ষ চর্চা প্রমাণ করেছে ভারতীয় সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে মুঘল যুগ একটি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই যুগ নজর কেড়েছে। 

কিন্তু হিন্দুত্ববাদের গৌরব গাঁথা প্রচার করতে হলে মুসলিম শাসনের অস্তিত্ব বিপদ বাড়াবে। তাই তাকে ছেঁটে ফেলে হিন্দু ইতিহাস রচনা হচ্ছে বানিয়ে বানিয়ে। এটা শুধু বিকৃতি নয় মিথ্যার বেসাতিও।
শুধু ইতিহাস নয়, সাহিত্য সহ অন্যান্য বিষয়ে যে যে অধ্যায় বা শব্দবন্ধ হিন্দুত্বের মিথ্যা নির্মাণকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে সেগুলিকেও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এনসিইআরটি এইভাবে পাঠ্যসূচি বদলে নতুন বই ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছে। 

এমন নিকৃষ্ঠমানের চিন্তার কারবারিরা পাঠ্যসূচি তৈরি করার বরাত পেতে পারে মোদীর ভারতে। সঙ্ঘ পরিবারের গুড বুকে থাকার জন্য এমন নির্বোধ সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা হচ্ছে ছাত্রদের বোঝা কমানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদের লেজুড়রা যুক্তিতে এতটাই দুর্বল যে সত্যিটা জোর গলায় বলার সাহস নেই। যদি আদ‍‌র্শের প্রতি নিষ্ঠা থাকে তাহলে জোর গলায় বলতে পারত হিন্দুত্বের পশ্চাৎপদ ভাবনার শিকার হয়েই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে এবং সচেতনভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বনাশ করার ঠিকা নিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment