মীর আফরোজ জামান: ঢাকা
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজধানীর মিটফোর্ডে চাঁদা না দেওয়ায় এক ভাঙাচোরা লেনদেন ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য, ধৃতদের সঙ্গে বিএনপি’র যুব সংগঠন যুবদলের যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে।
আবার খুলনায় যুবদলের এক নেতা মেহবুবকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। চাঁদপুরে নমাজের পর মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুর রহমানকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে একই নমাজে অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তি কুপিয়ে জখম করেছে।
বাংলাদেশে একের পর এক নৃশংস আক্রমণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মহম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। শনিবার এক বিবৃতিতে ঢাকা, খুলনা ও চাঁদপুরের হিংসার উল্লেখ করেন তাঁরা।
সিপিবি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, এই তিনটি ঘটনাই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। এতে বোঝা যায় সহিংসতা, বিচারহীনতা ও উগ্রতা আমাদের সমাজকে কতটা গ্রাস করেছে।
বিবৃতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এমন প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়েছে। অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ন্যায়বিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না দেশের সচেতন মানুষকে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফায় অপরাধীদের কয়েকজন।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনা ধরা পড়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন যে এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টার দাবি, সারা দেশেই এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে মিটফোর্ডের ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক। তিনি বলেন, একটা সভ্য দেশে এমন ঘটনা কখনই আশা করা যায় না।
নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদের মরদেহ শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বরগুনায় নিয়ে যান স্বজনেরা। তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
স্বজনেরা এই প্রতিনিধিকে বলেন, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনো হত্যাকারীদের লোকজন ফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। লাল চাঁদের ১০ বছর বয়সী ছেলে সোহান ও ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা রয়েছে। স্ত্রী লাকি বেগম (৩০) জানেন না কিভাবে স্কুলপড়ুয়া এই দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেবেন!
এই হত্যাকাণ্ডে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টিও। বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পুরানো ঢাকা, খুলনা এবং চাঁদপুর শুধু নয়, সারা দেশ আজ আতঙ্কের কবলে। সরকার কোনও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বাড়ছে।
Comments :0