GANASHAKTI EDITORIAL

ভারত রক্ষায় ‘ইন্ডিয়া’

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

India summit bengaluru opposition unity bjp congress cpim cpi tmc rss bengali news rahul gandhi indian politics

নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে অবশেষে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স। বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী ২৬টি দলের মহাসম্মেলন থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারের পতন অনিবার্য করার লক্ষ্যে এই জোট ইন্ডিয়া তৈরি হয়েছে। 

দেশের বহুত্ববাদী ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে রক্ষার লড়াইয়ের শপথ নিয়ে ২৬টি দলের নেতারা ঘোষণা করেছেন ভারত বলতে যে ভাবনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ভারতকে ধ্বংসাত্মক শক্তির হাত থেকে রক্ষা করা হবে। যে মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সংবিধান সেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাই আজ আক্রান্ত আরএসএস-বিজেপি সরকারের হাতে। তাই যে ধারণার উপর দাঁড়িয়ে আছে এই সংবিধান সেই ধারণাকে রক্ষার শপথ নিয়েছে ২৬টি দল।
 

নিঃসন্দেহে এই ঘটনা নজিরবিহীন। ২৬টি বিরোধী দল নিজেদের মধ্যেকার রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে জোট বেঁধেছে। নরেন্দ্র মোদীরা যতই কৃত্রিমভা‍‌বে উপেক্ষার মনোভাব দেখান বা পরিবারতান্ত্রিক দলগুলির দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা জোট বেঁধেছে বলে গলাবাজি করুন সত্য এটাই যে তারা ভয় পেয়েছেন। 

যে উদ্ধত প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তিমান বাহুবলীর মত সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন বিরোধীদের মোকাবিলায় তিনি একাই যথেষ্ট। তাঁর দলও সর্বত্র প্রচার করে মোদীই সব, মোদীর নেতৃত্বেই সর্বত্র নির্বাচনে লড়াই করে তারা। সেই মোদী সর্বস্ব দল বিরোধী জোটের প্রস্তুতিতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে। মোদীতে ভরসা না রেখে নেমে পড়েছে শরিক সন্ধানে। 

বহু খোঁজাখুঁজির পর অজানা অচেনা, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ৩৮টি দলকে খাতায়-কলমে হাজির করেছে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা এনডিএ’র বৈঠকে। গত লোকসভা নির্বাচনের পর যে এনডিএ’র একটা বৈঠকও হয়নি, এনডিএ কথাটাই উচ্চারিত হয়নি কোনও নেতার মুখে সেই এনডিএ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা থেকেই পরিষ্কার ৫৬ ইঞ্চির ফানুসের হাওয়া কমে গেছে। 

এনডিএ ছাড়া বৈতরণী পার হবার উপায় নেই।
গত চার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শাসক দল চেষ্টা করে গেছে বিরোধী দল ও নেতাদের দুর্বল করার। কখনও ইডি-সিবিআই-কে ব্যবহার করা হচ্ছে। কখনও বিরোধী দলকে ভা‍‌ঙিয়ে বিরোধী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। মোদী-শাহ’রা ভেবেছিল এইভাবেই শুধু কংগ্রেসমুক্ত ভারত নয়, বিরোধীমুক্ত আরএসএস’র ভারত গড়ার। 

কিন্তু তা যে সম্ভব নয় দেশের সমস্ত বিরোধী শক্তি জোট বেঁধে সেই বার্তা দিয়ে দিয়েছে। বিরোধীরা স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের লক্ষ্য বিরোধী ভোট ভাগ হতে না দিয়ে বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত করা। মোদীরাও জানেন জোট বেঁধেও তারা কোনদিন ৩৫ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির ফলেই তাদের ‘বিরাট’ জয় সূচিত হয়েছে। সেই বিরোধী ভোট যদি ভাগ না হয় তাহলে গদি রক্ষার উপায় নেই।

Comments :0

Login to leave a comment