Kaliyagunj Incident

কালিয়াগঞ্জ কান্ডে সিটকে সাহায্য করছে না পুলিশ
এক সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কাছে রিপোর্ট চাইলো আদালত

রাজ্য

কালিয়াগজ্ঞের নাবালিকা মৃত্যু ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হলো রাজ্যকে। এদিন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে এই ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের যেই সিট হাই কোর্ট গঠন করেছে সেই সিট যাতে কাজ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তিনি দাবি করেন যে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহায়তা করা হচ্ছে না। এরপরেই বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘তাহলে কি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবো?’


গত ২১ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জে দশম শ্রেণীর এক রাজবংশী ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর থেকেই গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উত্তেজনা। পরিবারের অভিযোগ, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে। খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নিহতের দেহ গ্রামের রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের সরাতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালাতে চায় যা মানতে রাজি ছিলেন না পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা। এমনকি পুলিশ ওই ছাত্রীর দেহ লোপাটের জন্য, দেহটি মর্মান্তিকভাবে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে, একটি ছবির ফুটেজেও দেখা যায় সেই দৃশ্য। নিহত ছাত্রীর পরিবার সিবিআই তদন্ত চান আদালতের কাছে।

 
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই তদন্ত কীভাবে এগোচ্ছে তার বিস্তারিত ও পুর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেন। তিনি ময়নাতদন্তের ভিডিও এবং ছবি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। আদালতে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের কিছু ছবি পেশ করা হলে বিচারপতি মান্থা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, এফআইআর’র কপি মৃতার পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে পুলিশকে। শুধু তাই নয়, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন যদি সব রিপোর্টের কপি চায়, তাহলে তা দিতে হবে পুলিশকে। সেই সঙ্গে তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে হবে আদালতকে। সে সময়ে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত চাওয়া হলে বিচারপতি বলেন, এখনই তার প্রয়োজন নেই, আগে সব রিপোর্ট সামনে আসুক। 


রাজ্য পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করেন। আইপিএস দময়ন্তী সেন, প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত এবং প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনার তদন্ত করেন আদালতের নজরদারিতে। এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা। তবে তদন্ত চলাকালীন কোথাও তাঁরা প্রকাশ্যে এই তদন্ত নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না বলেও এদিন জানিয়ে দেন বিচারপতি। রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত নথি তথ্য সিটের হাতে তুলে দিয়ে তদন্তে সাহায্য করতে হবে সিটকে। এছাড়াও পুলিশকে দিতে ওই পরিবারের যাবতীয় নিরাপত্তা। বিচারপতির আরও নির্দেশ, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের যাবতীয় অনুসন্ধান রিপোর্টও তুলে দিতে হবে সিট’র হাতে। সেই সময় বিচারপতি বলেন, প্রকৃত সত্য সামনে আসা দরকার। সিট মনে করলে দ্বিতীয়বার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে পারবে।


বৃহস্পতিবার বিচারপতি মান্থা জানিয়েছেন যে, আদালতের নির্দেশ না মানার জন্য স্বরাষ্ট্রদপ্তরকে এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতের কাছে রিপোর্ট জমা করতে হবে। উল্লেখ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী অধীনে। কারণ তিনি নিজেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Comments :0

Login to leave a comment