GROUP D RECRUITMENT SCAM

২৮২০ শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাচ্ছে আজই

রাজ্য কলকাতা

Kolkata high court recruitment scam justice avijit ganguly bengali news

রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ফের বিরাট ধাক্কা খেল হাইকোর্টে, ধাক্কা খেল মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারও। শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন মাথারা যখন সবাই জেলে রয়েছেন, তখন তাদের দুষ্কর্মের দায়ে সময় বেঁধে দিয়ে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গ্রুপ-ডি পদে ২৮২০ জন শিক্ষাকর্মীর চাকরির সুপারিশ বাতিল করতে হবে এসএসসি-কে। এই বেআইনি চাকরিপ্রার্থীদের নাম স্কুল সার্ভিস কমিশন তার নিজের সাইটে প্রকাশ করবে। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারপতি তাঁর নির্দেশে আরও বলেছেন, শুক্রবার আদালতে এই ব্যাপারে এসএসসি হলফনামা জমা দেওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে এই প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করতে হবে। ওএমআর শিট জালিয়াতির মধ্য দিয়ে যাদের চাকরি দেওয়ার সুপারিশ এসএসসি করেছিল, তাদের প্রথম ধাপের ২৮২০ জনের নাম বাতিল করতে হবে। এদিন বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, কোন অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় এই বিরাট অন্যায় হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনতে হবে। 

এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসি’র আইনজীবীকে বলেছেন, ‘‘আপনারাই যখন জানিয়েছেন, ওএমআর শিটে কারচুপি হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই, তখন আপনারাই কাজ শুরু করুন। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ভুয়ো ওএমআর দেখিয়ে যাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের সুপারিশ বাতিল করুন। এই জায়গায় ওয়েটিং লিস্টে যারা রয়েছেন, তাঁদের নাম সুপারিশ করতে হবে। তবে দেখতে হবে, এই ওয়েটিং লিস্টেও যদি ভুয়ো ওএমআর নথিভুক্ত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও তা বাতিল করতে হবে।’’

সিবিআই গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ওএমআর শিট জালিয়াতির যে তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে, সেখানে বেআইনি চাকরির মোট সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪৪৮৭। তবে সিবিআই এই সংখ্যা আদালতে জমা দেওয়ার পর বলেছে, তদন্তের কাজ চলছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সিবিআই’র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদালত আগেই এসএসসি-কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। কমিশনের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল, তদন্তকারী সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু ওএমআর শিটে ভুলভ্রান্তি ঘটেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। এখনও পর্যন্ত শুধু লক্ষ্মী টুঙ্গা নামে এক চাকরিপ্রার্থীর দায়ের করা মামলায় ৪৪৮৭ জনের ওএমআর বিকৃতির প্রমাণ মিলেছে।

রাজ্যের স্কুলগুলিতে গ্রুপ-ডি পদে কর্মী নিয়োগ হবে, একথা জানিয়ে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ২০১৬ সালে। এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালে পরীক্ষা নেয় এসএসসি। আবেদনকারীর আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, ৬ হাজার পদের জন্য কর্মী নিয়োগ হবে বলে এসএসসি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ১৩ হাজার কর্মী গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালে যে প্যানেল এসএসসি তৈরি করেছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৯ সালে। দেখা যাচ্ছে, এখনও ওই পদের জন্য শিক্ষাকর্মী নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। যে প্যানেলের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে, সেই প্যানেল থেকে কর্মী নিয়োগ চলছে। এই গোটা বিষয়াটি আদালতের নজরে আনা হয়েছে। 

আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে তাঁর সওয়ালে বলেছিলেন, রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আপাদমস্তক দুর্নীতি হয়েছে। এর আগে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে আদালত বারবার এসএসসি-কে সতর্ক করেছে। স্বচ্ছতা রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর জন্য আদালত বহু পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করেই এসএসসি তার কাজ করে চলেছে। এই মামলায় আগেই আদালত মন্তব্য করেছে, এসএসসি’র কেন্দ্রীয় অফিসের সঙ্গে তার আঞ্চলিক অফিসগুলির কোনও যোগসূ্ত্র নেই। আদালত মনে করছে, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই বেআইনি কাজের নথিপত্র খুঁজতে সিআইএসএফ’র সাহায্য নেবে  সিবিআই।

বুধবারই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই গ্রুপ-ডি নিয়োগের পৃথক একটি মামলায় মন্তব্য করেছেন, যারা বেআইনিভাবে চাকরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ চুপ করে বসে আছে কেন? বেআইনিভাবে নিযুক্ত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে ওয়েটিং লিস্টে থাকা যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ করে দিতে হবে। বিচারপতি বসু বলেছেন, একদল নথি তৈরি করেছে, অন্যরা তার সুযোগ গ্রহণ করেছে। এই দু’দলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ওএমআর শিট বিকৃত করে অনেককেই শূন্যর জায়গায় ৪৩ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থীকে খুঁজেও পাওয়া গিয়েছে। বেআইনিভাবে চাকরি করছেন। এদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হচ্ছে না কেন? মামলার সঙ্গে এদের যুক্ত করতে হবে। জেল এবং জরিমানা দুটিই হবে এদের। 

ওএমআর বিকৃত করে চাকরি পাওয়া গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে ১৬৯৮ জনের অধিকাংশই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আদালত এই প্রার্থীদেরই মামলার সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছে সিবিআই-কে। বিচারপতি বসু মন্তব্য করেন, এখনও কেন এই সব অযোগ্য বেআইনি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়নি, তাও তিনি বুঝতে পারছেন না। 

প্রসঙ্গত, গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দায়ের করা লক্ষ্মী টুঙ্গার মামলায় মোট ৪৪৮৭ জনের বেআইনি নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এই প্রার্থীদের সকলেরই ওএমআর শিটে জালিয়াতি হয়েছে। বুধবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে যে ১৬৯৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি হয়েছে, তারা মূল মামলার মধ্যেও রয়েছেন। উল্লেখ্য, গ্রুপ-ডি পদে বেআইনি শিক্ষাকর্মী নিয়োগে যে মামলাগুলি দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের মামলায় ২৮২০ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ হয়েছে। অন্যদিকে, বিচারপতি বসুর এজলাসে মামলায় যে ১৬৯৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারাও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চাকরি করছেন বলে জানিয়েছে সিবিআই। 

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতার কারণে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এই নির্দেশ খারিজ না করে ডিভিসন বেঞ্চ সিবিআই-কে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছিল। এর মধ্যেই আদালতের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি। বাগ কমিটি তার রিপোর্টে আদালতকে জানিয়েছিল, গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতা রয়েছে। সিবিআই তার তদন্ত প্রক্রিয়ায় গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার করে ওএমআর শিট। কলকাতায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু ওএমআর। এই ওএমআর শিট যাচাই করে সিবিআই আদালতকে জানিয়েছিল, গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি পদে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। ওএমআর জালিয়াতি করে প্রার্থী বাছাই করে এসএসসি চাকরির সুপারিশ পাঠিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে।   
 

 

Comments :0

Login to leave a comment