Insaf Jatra Sagardighi

স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে সরব ইনসাফ যাত্রা

রাজ্য

অনির্বাণ দে: সাগরদিঘি


১৯ নভেম্বর—মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছিল বলে কাজ পেয়েছিলেন যুবক-যুবতীরা। রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে। কিন্তু তারপর কটা বিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে রাজ্যে? রাজ্যে বিদ্যুতের সঙ্কট বেড়েছে, এখন স্মার্ট মিটার বসিয়ে বিদ্যুৎকে সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? রবিবার সাগরদিঘিতে এই প্রশ্ন তুলেছে ইনসাফ যাত্রা।
এদিন সকালে সাগরদিঘি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। চন্দনবাটিতে সভাস্থলে তার আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন বাসুদেব দাস, সুদাম মণ্ডল। ইনসাফ যাত্রায় শামিল যুবদের  তাঁরা জানালেন, মাঠে এখনও আইআর ৩৬ ধান। কিন্তু সারের কালোবাজারির কারণে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। খরার ধান বিক্রি করতে পারেননি কিষান মান্ডিতে। একদিকে সারের কালোবাজারি, অন্যদিকে কিষাণ মান্ডিতে দালাল রাজ। কৃষকদের দু’দিক থেকেই কাটছে তৃণমূল। কোথায় যাবেন কৃষকরা ? প্রশ্ন তুলেছেন কৃষকরা। বেকার যুবক-যুবতীর কাজ চাই। সব মানুষের নাগরিক অধিকার চাই। সাগরদিঘিতে আওয়াজ উঠেছে পদযাত্রা থেকে।
মানুষের ক্ষোভ, দাবি, অভিজ্ঞতা জুড়ে জুড়ে রবিবার ১৭ তম দিনে পথ এগিয়েছে ইনসাফ যাত্রা। ধান কাটার মরশুমে নবগ্রামে মজুরি কামাই করেও ইনসাফ যাত্রায় এসেছেন বাসন্তী টুডু, কৃষ্ণা টুডু। ইনসাফ যাত্রীদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা। ধান কাটার মরশুমে মজুরি বেশি হলেও সারা বছর কাজ থাকে না। দু’শো টাকাতেও কাজ করতে হয় সারাদিন। কাস্ট সার্টিফিকেট জোগাড় করতে গেলে হেনস্তা হতে হয় বিডিও অফিসে। এই অন্যায় চলবে না। সরব হয়েছে নবগ্রামে ইনসাফ যাত্রা।
এদিন নবগ্রামের বৈদ্যবাটী থেকে শুরু হয় ইনসাফ যাত্রা। পদযাত্রার শুরুতে ছিলেন সাঁওতালি নাচের শিল্পীরা। আর পদযাত্রীদের পরনে ছিল টিম ইন্ডিয়ার জার্সি। পদযাত্রা থেকেই ডিওয়াওএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, ‘এই জার্সি সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে যেমন আমরা সবাই দেশের জন্য গলা ফাটাই, সেভাবেই দেশ রক্ষার জন্য, রাজ্যকে রক্ষার জন্য আমরা প্রতিদিন রাস্তায় আছি’। 
সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান নিয়েই এগিয়েছে ইনসাফ যাত্রা। নবগ্রামে ইনসাফ যাত্রায় পা মিলিয়ে ছিলেন সিঙ্গার গ্রামের বাসিন্দা  স্বভাবকবি নইমুদ্দিন। পথের মাঝেই শুনিয়েছেন, ‘হ-এ হিন্দু, ম-এ মুসলমান, জাতি একই সকলই সমান, যে করে ভাগ সেই দুশমন’। সাম্প্রদায়িক শক্তির ফাঁদে পা নয়, তৃণমূলের লুট রুখতে চাই মানুষের ঐক্য। প্রত্যয় জাগিয়েছে ইনসাফ যাত্রা। এগিয়েছে জাতীয় পতাকা সামনে রেখে।
নবগ্রামে মিছিল হাসপাতালের মোড় হয়ে বাজার পরিক্রমা করে। যে নবগ্রাম থানায় পিটিয়ে খুন করা হয়েছে সিঙ্গার গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ঘোষকে, সেই থানায় সামনে দিয়ে এগিয়েছে ইনসাফ যাত্রা। নবগ্রামের কালীতলায় সভা থেকে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সরব হয়েছেন গোবিন্দ ঘোষের পরিবারের জন্য ইনসাফের দাবিতে। থানার কাজ কী মানুষ পিটিয়ে মারা? কেন খুনের পর টাকা দিয়ে পরিবারের মুখ বন্ধ করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক? প্রশ্ন তুলেছে ইনসাফ যাত্রা।   
সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, ‘এই রাজ্যে কাজ নেই। নতুন করে কোনও নিয়োগ নেই। শুধুই দুর্নীতি। যারা মানুষের চাল চুরি করেছে তারাই এর জন্য দায়ী।’ তিনি বলেছেন, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান নিজেই বিড়ি মালিক। কেন তিনি ন্যায্য মজুরি দেবেন না ? বিড়ি শ্রমিকরা সামান্য মজুরি পাচ্ছে আর বিড়ি মালিকরা কোটি কোটি টাকা লাভ করে নার্সিং হোমের ব্যবসা বাড়াচ্ছে। মানুষের রক্তঘামের টাকায় নিজেদের ভুঁড়ি বাড়াচ্ছে। এটা চলতে পারে?’ 
সভায় ভাষণ দিয়ে অভিনেতা দেবদূত ঘোষ বলেছেন, ঘরে ভাত জোটেনি সাধারণ মানুষের, আর বিলাস বহুল বাড়ি গাড়ি করেছেন তৃণমূল নেতারা। সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। এর প্রতিবাদ করার জন্য তৈরি হচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। সেই প্রতিবাদে ভরসা জোগাচ্ছে যুবদের ইনসাফ যাত্রা।
নবগ্রামের সভার পর ফের ইনসাফ যাত্রা শুরু হয় পাঁচগ্রাম দক্ষিণ মোড় থেকে। বাজার পরিক্রমা করে হয় সভা। এদিন ইনসাফ যাত্রায় পা মেলান প্রাক্তন যুবনেতা জামির মোল্লা, মুকুল মণ্ডল, জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি, যুব নেতা সন্দীপন দাস, সৈয়দ নুরুল হাসান প্রমুখ।

ক্যাপশনঃ রবিবার সাগরদিঘিতে ইনসাফ যাত্রা।

Comments :0

Login to leave a comment