Mamata Banarjee

‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে ফের মিথ্যা মমতার, দুর্নীতি লুকাতে ‘চাকরিখেকো’ আক্রমণ

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

বিজেপি বিরোধী জাতীয় স্তরের বোঝাপড়া ভাঙার দায় চেপেছে মাথায়। নিস্তার পেতে শুক্রবারও যুক্তি সাজাতে হলো তৃণমূলনেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। 
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার সভায় মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘ইন্ডিয়া জোট আমি তৈরি করেছি। আমি ‘ইন্ডিয়া’ নাম দিয়েছি।’’ ভোটের প্রচারে তিনি বলে চলেছেন, ফল বেরনোর পর ‘ইন্ডিয়া’ বুঝে নেবেন। ‘ইন্ডিয়া’-কে জয়ী করতে তৃণমূলকে ভোট দিন। 
বস্তুত সাগরদিঘি উপ-নির্বাচনে বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর মমতা জানিয়েছিলেন যে লোকসভায় তৃণমূল একা লড়বে। সেই বিধায়ককে দল ভাঙিয়ে তৃণমূলে টেনেও নেওয়া হয় কিছু পরই। তিনি যে কোনও বোঝাপড়ায় নেই স্পষ্টও হয়ে যায়।
নির্বাচনে আগে বিরোধী মঞ্চ গড়ে ওঠার পর শঙ্কা ধরে পড়ে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আচরণেই। গ্যাসের দাম তিনশো টাকা কমানোর ঘোষণা করতে হয়েছিল মোদীকে। এই মঞ্চে কংগ্রেসের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবেই রয়েছেন বামপন্থীরা। 
মমতার ‘ইন্ডিয়া’ দাবিতে একাংশ মনে করিয়েছেন যে কোনও আচমকা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব করেন মমতা। নীতীশ কুমারকে লঘু করে খাড়গেকে আহ্বায়ক করতে চান। বিরোধীদের সিদ্ধান্ত, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর ঠিক হবে। কোনও মুখ সামনে আনার প্রয়োজন নেই। মনমোহন সিং-কেও আগে থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এর কিছু পরই ‘ইন্ডিয়া’ ছাড়েন নীতীশ কুমার।
সিপিআই(এম) নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করে আসা হয়েছে যে এই মঞ্চ ভাঙার চেষ্টা চালিয়েছে তৃণমূল। ‘ইন্ডিয়া’ গঠন হওয়ার আগে সংসদে আদানি সহ একাধিক বিষয় যখন বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখন তাতে শামিল হয়নি তৃণমূল। এমনকি বিভিন্ন রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’-র যে সমাবেশ হয়েছে তাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোন উল্লেখযোগ্য নেতাকে পাঠানো হয়নি।
সিপিআই(এম) নেতৃত্বের কথায় তৃণমূল এবং বিজেপির নকল যুদ্ধ যখন রাজ্যের মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে তখন নিজেকে বিজেপি বিরোধী প্রমাণ করার জন্য ভ্রান্ত প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। 
এদিন তিনি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) চাকরিখেকো পার্টি।’’ তার দলের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতির জন্য চাকরি হারাতে বসেছেন ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা। সেই দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে বিরোধীদের নিশানা করছেন মমতা। 
বুধবার মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘কোন দপ্তরে কি ভাবে চাকরি দেয় সেটা সেই দপ্তরের ব্যাপার। আমি তার মধ্যে ঢুকি না।’’ 
তিনি মুখ্যমন্ত্রী তার সরকারের একটি দপ্তরের দিনের পর দিন চাকরি নিয়ে দুর্নীতি হলো। টাকার বিনিময় চাকরি বিক্রি করা হলো আর তিনি জানতে পারলেন না। উল্লেখ্য এসএসসিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীসভার অনুমোদনে সুপার নিউমেরিক্যাল পোস্ট (অতিরিক্ত পদ) তৈরি করা হয়। সোমবার হাইকোর্টের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাঁরা এই পদ তৈরি করেছে তাদের প্রয়োজনে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা। 
মমতা মন্ত্রীসভার মাথা। তার অনুমোদন না হলে কোন সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভা বা সরকার নিতে পারে না। তার দলের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতির জন্য যখন প্রায় ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি হারাতে চলেছে তখন নিজের দিক থেকে যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন তিনি।
শুক্রবার তৃণমূল নেত্রীর মুখে শোনা যায় বেনাচাপরা কঙ্কাল কান্ডের কথা। যেই মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষকে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বদলা নয় বদল চাই স্লোগান দিয়েছিলাম তাই এদের ছেড়ে দিয়েছি।’’ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই মেদিনীপুর জুড়ে মমতা ব্যানার্জি এবং শুভেন্দু অধিকারি মাওবাদীদের সাথে নিয়ে গোটা জেলা জুড়ে আক্রমণ চালিয়েছিল সিপিআই(এম) নেতা কর্মীদের ওপর। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার। ঘর ছাড়া করা। পার্টির অফিস দখল করা ছিল নিত্য দিনের কাজ। একের পর এক সিপিআই(এম) নেতা কর্মীদের খুনও করা হয়েছে। 
কঙ্কাল কান্ডের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে  জামিন পেয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। তৃণমূলের নির্দেশ সেই সময় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ছিলেন তৎকালীন আইপিএস বর্তমানে বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ।

Comments :0

Login to leave a comment