রবিবারের মধ্যে যদি পুলিশ তদন্ত শেষ করতে না পারে তাহলে তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আরজি কর কান্ডে নির্যাতীতার পরিবারের সাথে দেখা করার পর সোমবার একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শুক্রবার সকালে চারতলার সেমিনার রুম থেকে ডাক্তারি পড়ুয়ার দেহ পাওয়া গেলেও তারপর থেকে একবারও শাসক দলের কোন প্রতিনিধি যায়নি নির্যাতীতার পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য।
উল্টে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নির্যাতীতার পরিবারকে অর্থীক প্রলোভন দেখানোর। এদিন অবশ্য সেই বিষয় কোন কথা বলতে শোনা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীকে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ‘পাবলিক স্যাটিসফ্যাক্সানের’ জন্য সিবিআইয়ের হাতে তারা তদন্ত তুলে দিতে চায়। উল্লেখ্য ইতিমধ্যেই এই তদন্তে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় ক্রমেই রহস্য বাড়ছে। পুলিশ প্রশাসন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি কোনও কিছু আড়াল করতে চাইছে, প্রভাবশালীর ‘ব্যাক আপ’ আছে এমন কাউকে বা একাধিক জনকে আড়াল করতেই তদন্তকে নির্দিষ্ট একটি দিকেই টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? উঠছে এই প্রশ্ন।
নৃশংস বর্বরতায় ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশের দাবি অনুযায়ী তা ৩০-৩৫ মিনিট সময়ের মধ্যেই করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৩১ বছর বয়সি একজন তরুণী চিকিৎসকের ওপর ওই পাশবিক যৌন অত্যাচার করে খুন করা আদৌ সম্ভব একজনের? স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তাহলে বাকি অভিযুক্তরা কোথায়? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, যে পরিমাণ বীর্য মিলেছে তা একজনের নাকি একাধিক জনের, তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ধৃত সিভিক সঞ্জয় রায়ের বীর্যের নমুনা ফরেনসিকে পাঠানো হলেও সেই রিপোর্ট আসেনি। ফলে পুলিশের হাতে ধৃত ওই সিভিকের বীর্য নমুনার সঙ্গে নিহত চিকিৎসকের শরীর থেকে মেলা বীর্যের মিল আছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশে একটি সূত্রের দাবি, দু’জনের বীর্য নমুনার হদিশ মিলেছে। যদি তাই হয় তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে? ৭২ঘণ্টা পরেও সেই তদন্তের অগ্রগতি কোথায়? দু’দিন ধরে হেপাজতে নিয়ে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সেই দাপুটে সিভিককে জেরা করে বাকি অভিযুক্তদের হদিশ মিলল না? দলবদ্ধ ধর্ষণকে আড়ালের চেষ্টা? কলকাতা পুলিশের দক্ষতার সঙ্গেই তা কি মাননসই? তাহলে কি এমন কোনও অভিযুক্তদের নাম রয়েছে যাদের আড়াল করতে চাইছে প্রশাসন, বিশেষত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
এদিন সিবিআইয়ের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের সাক্সেস রেট খুবই কম। এখনও পর্যন্ত তাপসী মালিকের খুনের কোন সাজা হলো না, নন্দীগ্রামেরও না।’’ যেই দুটো ঘটনার কথা তিনি বললেন তার মধ্যে তাপসী মালিকের খুনের ঘটনায় প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা সুহৃদ দত্তকে যে ফাঁসানো হয়েছিল তা আদালতে প্রমানিত, অপর দিকে নন্দীগ্রাম কান্ডেও সিবিআই জানিয়ে দিয়েছে মহাকরন থেকে কোন গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় যেই শুভেন্দু অধিকারি মমতা ব্যানার্জির সাথে ছিলেন সেই শুভেন্দু এবং তিনি যে ওই চক্রান্তের সাথে যুক্ত ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতা নিজেই স্বীকার করেছিলেন। প্রচারে তিনি বলেই ফেলেছিলেন, সেদিন বাপ ব্যাটা চেয়েছিল বলেই পুলিশ ঢুকেছিল।
তৃণমূল সরকারের একাধিক দুর্নীতির তদন্ত সিবিআই করছে। গরু চুরি, শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি, রেশন দুর্নীতি। প্রতিটারই তদন্ত শেষ হয়নি, দোষীরা শাস্তি পায়নি। এমনকি সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তও, যার সাথে যুক্ত শাসক দলের মাথারা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই তদন্তের গতি নিয়ে একাধিকবার পথে নেমেছেন বামপন্থীরা।
Comments :0