সকাল পেরিয়ে রাত আচার্য ভবনের সামনে চলছে চাকরি হারাদের বিক্ষোভ। আজকে বিকেল ৬ টার সময় ২০১৬ প্যানেলে যোগ্যদের নামের তালিকা প্রকাশের কথা ছিল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজে এই কথা জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু এদিন সেই তালিকা প্রকাশ করেনি এসএসসি। আর এই দ্বিচারিতার কারণে আচার্য সদনের সামনে আন্দোলনরত চাকরি হারারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের কথা কাটাকাটি হয় তাদের, হয় ধস্তাধস্তি। স্লোগান উঠেছে ' চোর, চোর '।
একটি প্রতিনিধি দল এসএসসি চেয়ারম্যানের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। কিছুক্ষণ আগে তারা বেরিয়ে এসে জানান যে এসএসসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন এখনই তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাদের দাবি সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীকে এবং এসএসসিকে এই দুর্নীতির দায় নিতে হবে, এবং প্রত্যেক চাকরি হারাকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
তারা জানিয়ে দিয়েছেন তালিকা প্রকাশ করতেই হবে। এই অবস্থানের কারণে আচার্য সদনের ভিতরে আটকে আছেন এসএসসি আধিকারি থেকে কর্মীরা।

গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৫৭২ জন ২০১৬ সালে এসএসসি চাকরি পাওয়া শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী। ১ এপ্রিল ব্রাত্য বসু জানান যে ২১ এপ্রিল এসএসসির পক্ষ থেকে যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে বলেছে, যারা এসএসসি তালিকায় ‘টেইন্টেড’ নন তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকতার কাজে বহাল থাকতে পারবেন। কিন্তু ২০১৬ সালের এসএসসি তালিকায় ‘গ্রুপ সি’ এবং ‘গ্রুপ ডি’ কর্মীরা এর মধ্যে পড়ছেন না। কারণ স্কুলগুলিতে পড়াশোনা চালু রাখার স্বার্থ জানিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে বলেছে, এই সব পদে নতুন করে নিয়োগ করতেই হবে। যাঁরা ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করবেন তাঁরা কোনও বাড়তি সুবিধা পাবেন না। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে মে’র মধ্যে। শীর্ষ আদালতে হলফনামা দাখিল করে তা জানাতেও হবে। 
ফলে, ৩ এপ্রিল চাকরি বাতিলের রায়ে কোনও বদল হলো না। কেউ মোটেই চাকরি ফিরে পেলেন না। যোগ্যরা কাজ হারালেন এসএসসি, পর্ষদ এবং রাজ্য সরকারের জন্য। এই তিন পক্ষই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে চাকরি জালিয়াতিকে আড়াল করে গিয়েছে। 
এদিন আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীরা জানিয়েছেন তারা সরকারের কথা অনুযায়ী স্কুলে ফিরবে না। আগে তালিকা প্রকাশ করতে হবে এসএসসিকে সেই তালিকা প্রকাশ করার পর তারা স্কুলে ফিরবে। 
উল্লেখ্য এই এসএসসি দুর্নীতি মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আদালতে। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট বার বার এসএসসি এবং শিক্ষা দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিল যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা তাদের কাছে জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সরকার বা এসএসসি কোন তালিকা জমা দেয়নি। শীর্ষ আদালতের রায় যখন প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি চলে গেলো তখন এসএসসি এবং শিক্ষামন্ত্রী বলছে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব। তাহলে এখানেই প্রশ্ন আগে কেন তারা তালিকা প্রকাশ করলো না? আর যদি এখনও তারা তালিকা প্রকাশ করে তাহলে তাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ফের পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমান করে চাকরি পেতে হবে চাকরিহারাদের। এখানেই প্রশ্ন থাকছে এর দায় কি সরকার নেবে?