MD SALIM

দলদাস পুলিশে মানুষের ভরসা নেই: আলিপুরদুয়ারে বললেন সেলিম

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

শম্ভূচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার 
 

জলপাইগুড়িতে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি করে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ওঁদের মুক্তির দাবিতে আইনি লড়াই হবে, রাস্তাতেও লড়াই হবে। তৃণমূলের লুটের বন্দোবস্ত বহাল রাখতে তাদের কথায় পুলিশ মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে গ্রেপ্তার করেছে আমাদের পার্টির নেতা, চা বাগান শ্রমিকদের নেতা, শিক্ষক নেতাদের। 
শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে পৌরসভা হলে সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনী সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় সিপিআই(এম)’র জেলা কমিটির উদ্যোগে। সভায় নির্বাচনী সংগ্রামের অভিজ্ঞতার বিনিময় হয়েছে এবং মহম্মদ সেলিম সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী পর্যালোচনা করেছেন। সভায় পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর দাস এবং পার্টিনেতা অলোকেশ দাসও ভাষণ দিয়েছেন। পরে মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, গোটা রাজ্যে তৃণমূল পঞ্চায়েতে লুটের বন্দোবস্ত কায়েম রাখতে বুথে এবং গণনাকেন্দ্রে ভোট লুট করেছে এবং সেই কাজে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু ওরা বুঝতে পেরেছে যে লাল ঝান্ডা হাতে মানুষ যেভাবে প্রতিবাদে একজোট হচ্ছে তাতে এভাবে পারবে না। তাই পুলিশকে দিয়ে মানুষের প্রতিবাদ দমন করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু এভাবে সফল হতে পারবে না। 

তিনি বলেছেন, জলপাইগুড়িতে কী ঘটেছে? তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করে গ্রেপ্তার করিয়েছে পার্টি নেতাদের। চা বাগানের নেতা, শিক্ষক আন্দোলনের নেতা, পার্টি নেতাদের নামে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা সাজিয়েছে, তাঁরা নাকি পুলিশকে খুন করতে গিয়েছিলেন! আগে ওরা উত্তর দিক, পুলিশ এসেছিল কেন সিপিআই(এম)’র জেলা পার্টি অফিসে? তৃণমূল হামলা করতে এসেছিল সুবোধ সেন ভবনে তাই পুলিশ এসেছিল। তাহলে হামলাকারীদের ধরল না কেন পুলিশ? বরং যে হামলাকারীদের ধরে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছিল তাদেরও ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের পার্টির নেতৃবৃন্দ ধূপগুড়ি উপ নির্বাচনে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে পার্টি নেতৃত্ব ছুটে এসেছেন জেলা দপ্তরে হামলার কথা শুনে। জলপাইগুড়িতে জেলা পার্টি অফিসে কোনোদিন এরকম হামলা হয়নি। এবারের হামলাতেও প্রতিরোধ হয়েছে। অথচ পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই হবে, রাস্তাতেও লড়াই হবে। আমরা ধৃত কমরেডদের মুক্তির দাবি করছি। গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েতে লুটের রাজত্ব কায়েম রাখতে তৃণমূল পুলিশকে ব্যবহার করেছে। সেভাবেই পুলিশকে দিয়ে জলপাইগুড়িতে পার্টি নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছে তাতে রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবে না। দলদাসত্ব করায় মানুষের ভরসা চলে গেছে তাদের ওপর থেকে। এর জন্য দায়ী বিজেপি’ও। দোষী আইএএস, আইপিএস’দের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কেন্দ্রের বদান্যতায় এখানে তৃণমূল পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, গোটা রাজ্যজুড়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট করেছে, বাম কংগ্রেসকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাধা দিয়েছে, আর বিজেপি’র সঙ্গে আপসের লড়াই করেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি কোথায়? আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ি কোচবিহার জেলায় যে বিজেপি নেতা সেই তৃণমূল নেতা, কেউ বর্তমান তো কেউ প্রাক্তন। তৃণমূল এবং বিজেপি মেরুকরণ বজায় রাখতে একসঙ্গে আপস করে লড়াই করেছে, এক এবং দুই নম্বর স্থান নিজেদের মধ্যে রাখতে। কিন্তু লুট সত্ত্বেও রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বামেদের বেড়েছে, বিজেপি’র ভোট কমেছে। এই তথ্য মিডিয়া আড়ালে রাখতে চাইছে, নাগপুরের দৃষ্টিতে খবর প্রচার করছে। 
নির্বাচনী নিরিখে উত্তরবঙ্গে সিপিআই(এম)’র জনসমর্থনে ‘রক্তক্ষরণ’ অব্যাহত আছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, সিপিআই(এম)’র জনসমর্থনে যদি এতই রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাহলে কেন সিপিআই(এম) নেতাদের মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকাতে হচ্ছে? বিজেপি নেতারা তো পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে, মণিপুর এবং দেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ বিজেপি’র থেকেও মুখ ফেরাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারছে, এরা রাজ্যে লুটছে, ওরা দেশে লুটছে, বামপন্থীরাই মানুষকে আশা দেখাচ্ছে। 
শুধু তাই নয়, তৃণমূল এবং বিজেপি’র ভিতরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের পরে এখন বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করছে, গুলি করছে নিজেরাই নিজেদের। ইসলামপুর এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সাক্ষী। ধূপগুড়িতে তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থী ঠিক করতে গিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মারামারি করছে। অন্যদিকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একসঙ্গে হয়ে লড়াই করছে। উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ধূপগুড়িতে বামফ্রন্টের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি আমরা। ভাওয়াই শিল্পী, প্রাক্তন শিক্ষক ঈশ্বর রায়। নির্বাচনী প্রচারে নেমে গিয়েছেন পার্টিকর্মীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী শক্তিকে যত বেশি এককাট্টা করা গেছে সেখানে ততো ভালো ফল দেখা গেছে। যেখানে এককাট্টা করা যায়নি সেখানে ততো ভালো ফল দেখা যায়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধূপগুড়িতেও তৃণমূল বিজেপি বিরোধীদের এককাট্টা করতে চেয়েছি। কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানাবো যে তারা উৎসাহ নিয়ে ধূপগুড়িতে বামফ্রন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস কর্মীরা একসঙ্গে প্রচার করছেন।
বেঙ্গালুরু বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী অ্যালায়েন্স ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে লড়াই করা হবে কিনা সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, ধূপগুড়িতে কি ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করা হচ্ছে? আমরা দুই লুটেরার বিরুদ্ধে মানুষকে একজোট করতে চাইছি। 
পঞ্চায়েতে বিভিন্ন জায়গায় বোর্ড গঠনে বাম বিজেপি একজোট হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, নাগপুরের নির্দেশে মিথ্যা প্রচার চলছে। তৃণমূল এবং বিজেপি মিলে অনেক জায়গায় বোর্ড গঠন করেছে বাম কংগ্রেসকে ঠেকাতে। বিজেপি নেতারা আলিপুরদুয়ারে বসে গেছে টাকার বিনিময়ে। এখন জেলার অনেক বিজেপি নেতা অভিযোগ করছেন যে তাদের তৃণমূলে যেতে বলা হচ্ছে। রাজ্যসভা নির্বাচনে সমঝোতা করেছে, তো পঞ্চায়েতে করবে না! এতদিন সবাই প্রচার করছিল মোদী একাই যথেষ্ট। এখন মোদী যাকে পাবে তাকে ছোঁ করছে। বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পরে যাকে পাচ্ছে তাকে ভাঙিয়ে সঙ্গে নিচ্ছে। উত্তরবঙ্গে অরিজিনাল বিজেপি নেতা কে? সবই তো তৃণমূল থেকে রিসাইকেলড নেতা। 
তৃণমূল নতুন মুখ এনে প্রধান পদে বসাচ্ছে বলে যে প্রচার চলছে সেই সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, গোটা গোডাউনে ঘুণ ধরেছে, সব পচে গেছে। নতুন মুখ দেখিয়ে কী হবে? তৃণমূল বিজেপি’তে এখন পাঁক ছাড়া কিছু নেই। 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে বিজেপি’র বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, বাবুল সুপ্রিয় আগে বিজেপি’র হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কী করেছিলেন? আর তারপরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে এখন কী বলছেন? শুভেন্দু অধিকারী আগে তৃণমূলে থেকে কী বলেছিলেন? কাজেই ওদের কথায় গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। সেলিম আরও বলেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই -বিরোধীরা স্বাধীন, কালেক্টিভ ইত্যাদি নানা নামে কাজ করে। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে কেউ বিজেপি করে, কেউ তৃণমূল করে। 

Comments :0

Login to leave a comment