Md Salim

মোদী-মমতা একসঙ্গেই ভাগের রাজনীতি করছেন: সেলিম

রাজ্য

Md Salim


 

রেড রোডে ঈদের অনুষ্ঠানে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী সিএএ-এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে সরাসরি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোট তৃণমূলকে দেওয়ার কথা বললেন। শনিবার তিনি রেড রোডের অনুষ্ঠান থেকে বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের বলবো, শান্তিতে থাকুন। কারও কথা শুনবেন না। কেউ কেউ বিজেপি’র কাছে টাকা নিয়ে গিয়েছে। ওরা বলছে, মুসলিম ভোট ভেঙে দেবে। আমি বলি, তোমাদের এত ক্ষমতা নেই। বাংলায় সিএএ-এনআরসি করতে দেব না।’’ 


   এদিনই এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিশ্বাস করেন সম্প্রীতিতে? তাহলে খাল কেটে কুমির আনার মতো আরএসএস-বিজেপি’কে ডেকে এনেছেন কেন? আদবানি এবং বাজপেয়ীর সঙ্গে সরকারে ছিলেন কেন? মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কেন এরাজ্যে জায়গা দিয়েছেন? কখনো পুরীর মন্দির তৈরি করবেন বলে আবার কখনো ইনসা আল্লাহ বলে ইফতার করছেন। ধর্মীয় প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করে উনিই নিজে বিভাজনের রাজনীতি করছেন। নবান্ন যদি শিক্ষা স্বাস্থ্য শিল্প কৃষি বাঁচিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতো তাহলে এসব নাটক করতে হতো না। এসব রাজনীতি বাংলায় ছিল না। এখন বাংলায় যারা হকের দাবিতে লড়ছে তাঁদের উনি জেলে পুরছেন। এটাই তো অপরাধ। 


  সিএএ-এনআরসি প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, এটা মমতা ব্যানার্জির চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। আরএসএস’এর থেকে টাকা নিয়ে উনি দল তৈরি করেছেন। আজকে দাঁড়িয়ে অমিত শাহের সঙ্গে একইদিনে মমতা ব্যানার্জি কেন সিএ -এনআরসি নিয়ে কথা বলছেন? সিএএ-এনআরসি’র মতো যেসব বিষয় ভাষা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন করে আরএসএস’এর পরিকল্পনা মতো মোদী, অমিত শাহ, যোগী, মমতা, অভিষেক একই সঙ্গে সেই বিষয়গুলি তুলছেন। কেন? 
  উত্তরবঙ্গ থেকে অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বে জেলায় জেলায় নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আমরা জানি কেন মমতা ব্যানার্জি এখন অভিষেককে দিয়ে এই সব জনসংযোগ যাত্রা করাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টে বাহানা দেখাতে একটা প্লট তৈরি করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে অভিষেকের আইনজীবী যাতে বলার সুযোগ পান, অভিষেক ব্যানার্জি প্রচারে ব্যস্ত আছেন তাই ২মাস হাজিরায় আসবেন না। কারণ মমতা ব্যানার্জি জানেন সুপ্রিম কোর্টে হয়ত আর স্বস্তি মিলবে না। সুতরাং সিবিআই যাতে শান্তনু কুন্তলের সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জিকে মুখোমুখি না বসায় তার জন্য সময় চাওয়ার কৌশল তৈরি করা হচ্ছে।


  সিএএ-এনআরসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো আগে অভিযোগ করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গ অনুপ্রবেশে ভরে গিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা নাকি বামফ্রন্ট সরকারকে ভোটে জেতাতো! এইসব মিথ্যার ওপরে ভিত্তি করেই তো অমিত শাহরা ক্ষমতায় আসার পর এনআরসি, সিএএর পরিকল্পনা করেছেন। সিএএ, এনআরসির অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও রূপকার মমতা ব্যানার্জি নিজেই।
  প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি এই প্রসঙ্গে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে সামনে রেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভয় দেখিয়ে মমতা ব্যানার্জি নিজের ভোট বাক্স ভরাতে চাইছেন। বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রুখতে হলে কংগ্রেসের মতো যারা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করে তাদের পাশেই মানুষকে একজোট করতে হবে। 


  আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মীয় জমায়েতে রাজনৈতিক ভাষণের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেশালে তার ফলাফল হয় মারাত্মক। মুখ্যমন্ত্রী একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে অবলীলাক্রমে ব্যবহার করছেন। একদিকে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের কাছে মুসলমান সমাজকে ভিলেন বানাচ্ছেন, অন্যদিকে মুসলমান সমাজকে জুজু দেখিয়ে ভোট আদায় করার কৌশল নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী চতুরতার সঙ্গে রেড রোডে বললেন, সারা দেশে এনআরসি করার চেষ্টা করা হবে। তারপরই বললেন, পশ্চিমবঙ্গে তিনি হতে দেবেন না। প্রথমে ভয় দেখালেন, তারপর অভয় দিলেন। মুসলিমদের সামনে পরিত্রাতা সাজার প্রাণান্তকর চেষ্টা। এতই যদি তাঁর সাহস, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে সিএএ’র বিরুদ্ধে মামলা করেননি কেন? সিএএ নিয়ে ভোটাভুটির সময় সংসদে তৃণমূলের সাংসদরা কোথায় ছিলেন? আসলে ওঁর কাছে মুসলিমরা শুধুই ভোট ব্যাঙ্ক। মুখ্যমন্ত্রী সাচার কমিটির প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়ন করছেন না, আনিস খানের হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছেন না, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চতুরতা করে এভাবে দুর্নীতির চোরাবালি থেকে এইভাবে উনি রেহাই পাবেন না।  

Comments :0

Login to leave a comment