EDITORIAL

তিনি আছেন তিনিতেই

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

যাদের মনস্তত্ত্বে আছে আরএসএস’র ডিএনএ তাদের মানসিকতায় বদল একরকম অসম্ভব। মুখোশ বদলাতে পারে, পোশাক বদলাতে পারে কিন্তু ভেতরটা অপরিবর্তনীয়। তাই এহেন বক সন্ন্যাসীদের মিষ্টি কথায় গলে যাওয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। ঠেলায় পড়ে জোট শরিকদের তোয়াজ করে মিষ্টি মধুর কথা বলছে বটে চরিত্র কিন্তু বদলায়নি। আরএসএস’র যে কোর ইস্যু রূপায়ণের বা কার্যকরি করার দায়িত্ব বিজেপি’র সেই মৌলিক দায় থেকে বিজেপি এক চুলও সরেনি, সরতে পারে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেগুলি কখনো গোপন অ্যাজেন্ডা হিসাবে আড়ালে থাকে আবার কখনো ওপেন হয়ে পড়ে। গত দশ বছর এক সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে সরকারে প্রবল আধিপত্যের দাপট থাকায় গোপন অ্যাজেন্ডাগুলি আর গোপন ছিল না। সদম্ভে সেগুলি ওপেন করে রূপায়ণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তারই নজির সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫(ক) ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে জনমতকে তোয়াক্কা না করে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে দু’টি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। একটি জম্মু ও কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ। ভাঙা বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপে নির্মাণ করা হয় পেল্লাই মন্দির। তারজন্য ধ্বংস করা হয় শত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, বাসস্থান, দোকান-ব্যবসা। কেড়ে নেওয়া হয় জমি। একই সঙ্গে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু পুরানো মন্দির। একইভাবে ধর্মোন্মাদনায় ভোল বদলানো হয় বেনারসের। চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাই আর তাক লাগানো ‘উন্নয়নের’ গুঁতোয় গঙ্গার তীরবর্তী চার-পাঁচশো বছরের পুরানো ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের কয়েকশো শিবমন্দির ও মসজিদ ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়। ধর্মের জিগিরে বরবাদ হয়ে গেছে শতশত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং রুজির শেষ সম্বল।
ওপেন হওয়া গোপন অ্যাজেন্ডার আর একটি অভিন্ন দেওয়ানিবিধি। উত্তরাখণ্ডে সেই আইন তৈরি হয়ে গেছে। প্রস্তুতি নিয়েছে অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও। কথা ছিল এবার আরও শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে গোটা দেশের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে আইন করা হবে। এমন স্বপ্নও ছিল আগামী বছর আরএসএস’র শতবর্ষে আরএসএস’রই চূড়ান্ত ভারতকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ঘোষণা করার। তারজন্য দরকার আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান বাতিল করে আরএসএস’র তৈরি সংবিধান চালু করা। তারজন্য দরকার সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা। ভোটের আগে ৪০০ পারের দামামা বাজানো হয়েছিল সেই লক্ষ্যেই।
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মানুষ সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে একেবারে পথে বসিয়ে ছেড়েছে। ৪০০ পার তো দূরের কথা এককভাবে সরকার গড়ার সুযোগও দেয়নি। তাই শরিকদের মন জুগিয়ে কোনও মতে গদি রক্ষা করতে হচ্ছে। পাছে শরিকরা রুষ্ট হয় তাই কোর ইস্যুগুলি আপাতত শিকেয় তুলে রাখতে হচ্ছে। মোদীকে আম্বেদকরের সংবিধানে কপাল ঠুকে বলতে হচ্ছে ‘সর্বধর্ম সমমত’। কিন্তু যতই নাটুকেপনা করুন আসল জায়গা অটুট আছে। তাই তিনি যখন ‘সর্বধর্ম সমমত’ আওড়াচ্ছেন তখন তাঁর দল শাসিত ছত্তিশগড়ে তাঁরই গুণমুগ্ধ অন্ধভক্ত স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী গোরু পাচারের গুজব ছড়িয়ে দুই মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আরও মৃতপ্রায়। তিনি কিন্তু যথারীতি নীরব। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীত্বের আনন্দে আত্মহারা।

Comments :0

Login to leave a comment