দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
হাতির করিডোর দখল করে গড়ে উঠেছে রিসর্ট। হাতির চলাচলের স্বাভাবিক রাস্তায় পড়ছে বাধা। বেদখল হয়ে যাচ্ছে খাদ্য-পানীয়ের উৎস। তার জেরে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতির পাল। মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাতের পিছনে চটজলদি মুনাফার তাড়না কাজ করছে ডুয়ার্সে। বুধবারই মঙ্গলবাড়ির একটি রিসর্টের গেটে পর্যটকদের থেকে তেড়ে আসে একটি দাঁতাল হাতি। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন সকলেই। কিন্তু ‘তাণ্ডব’ হাতির না গজিয়ে ওঠা রিসর্ট বা হোটেলের, সেই প্রশ্নও উঠছে বারেবারে।
বুধবারই সাত সকালে ডুয়ার্সের চালসার মঙ্গলবাড়ির একটি বেসরকারি রিসর্টে চলে আসে হাতি। পার্শ্ববর্তী লাটাগুড়ি জঙ্গল থেকে এলাকায় তাণ্ডব রিসর্টে হামলা চালায় একটি দলছুট হাতি। বুধবার সকালে রিসর্ট থেকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী থাকলেন মালদহ থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। রিসর্টের গেটে হাতির আক্রমণ হলেও প্রাণে বেঁচে গেলেন অনেকেই। হাতির হানার ছবি ফুটে উঠেছে বেসরকারি রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে।
২০০৭ সালে দার্জিলিঙের গোর্খা জন মুক্তি মোর্চার আন্দোলনের পর থেকে ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন ব্যবসা বাড়তে দেখা গিয়েছে। ডুয়ার্সের জলদাপাড়া, লাটাগুড়ি, মালবাজার, মুর্তি, কালিম্পঙের লাভা, লোলেগাঁও, নাগরাকাটা শহরে নতুন নতুন টুরিস্ট স্পট হতে থাকে। ‘ভার্জিন’ পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে আগে কেউ যায়নি, এমন প্রচার পর্যটক বাড়াতে সাহায্য করলেও তার প্রভাব প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণের জন্য বিপজ্জনক হতে দেখা গিয়েছে বিশ্বের অন্য প্রান্তেও।
ডুয়ার্সেরও বিভিন্ন এলাকায় নতুন টুরিস্ট স্পট হিসেবে প্রচার প্রসার বাড়তে থাকে। এই সমস্ত এলাকায় গড়ে ওঠে অসংখ্য প্রাইভেট রিসর্ট। এক সময় ডুয়ার্সের হাতি চলাচলের এলাকায় শাল কাঠের খুঁটির উপর দোতালায় ঘর তৈরি হত, নিচতলা থাকতো ফাঁকা। আসামেও এ ধরনের ঘর দেখা যায়। এই ঘরগুলিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘টং ঘর’। আজ টং-ঘরের বদলে ডুয়ার্স জুড়ে গড়ে উঠেছে হোটেল রিসর্টের বড় বড় দালান। তৃণমূল সরকারে আসীন হওয়ার পর সরাসরি মদত দেওয়া হচ্ছে।
হাতির বিচরণ ক্ষেত্রে এই ধরনের বিল্ডিং গড়ে ওঠায় মাঝে মাঝেই হাতির আক্রমণ বাড়ছে ডুয়ার্স এলাকায়। শীতকালে জঙ্গলের গাছপালা শুকিয়ে যাওয়ায় হাতির খাবারের অভাব দেখা যায়। ফলে খাবারের খোঁজে হাতির পাল ছুটে যায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। আবার কখনো দলছুট হাতি পথ ভুলে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়।
পাশাপাশি হাতির তাণ্ডবের মঙ্গলবাড়ির পর্যটকদের তোলা সেই ভিডিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বৃহস্পতিবারও তা নিয়ে চলছে আলোচনা। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ডুয়ার্সের চালসার মঙ্গলবাড়ির এই বেসরকারি রিসর্টে মালদার এক বাসিন্দা বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। অতিথিদের নিয়ে ভালো ভাবেই কেটেছিল বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান।তবে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে বুধবার সকালে। বাড়ি ফেরার পথে সকলে মিলে রির্সটের গেট খুলে বের হয়ে গাড়িতে উঠছিলেন। সেই সময়ের আচমকাই পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে একটি বড় দাঁতাল হাতি রির্সটে হামলা চালায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনাকয়েক মানুষকে দেখে তেড়ে আসে। ভেঙে ফেলে রির্সটের গেট। আমন্ত্রিত অতিথিদের চিৎকারে পরবর্তীতে আশেপাশের গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন। প্রাণে বেঁচে যান সকলেই। পরবর্তীতে গ্রামবাসীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে হাতিটি জঙ্গলের দিকে ফিরে যায়।
Comments :0