MD SALIM

দেশে চলছে জরুরি অবস্থা -২, বললেন সেলিম

জেলা

‘সারা দেশে জরুরি অবস্থা-২ চলছে এখন’, দেশ ও রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য ও পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
মঙ্গলবার তিনি উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের প্রয়াত সিপিআই (এম) নেতা কমরেড শেখ ইসলামের স্মরণসভায়। শ্রমিকনেতা শেখ ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সত্তরের দশকের গোড়ায় যেদিন কমিউনিস্ট পার্টিকে বেছে নিয়েছিলেন শেখ ইসলাম, সেদিন লড়াইটা সহজ ছিল না। সেদিনও ছিল কন্ঠরোধের চেষ্টা, কালা কানুন প্রয়োগ, গুন্ডা, মস্তান, সিআরপিএফ নামিয়ে হামলা। কিছু একটা লেখা, কিছু একটা বলা–তার উপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। আজ যখন আমরা তাঁকে স্মরণ করছি, তখন দেশে চলছে জরুরি অবস্থা-২। অঘোষিত।’’ 


সিউড়ির রবীন্দ্র সদনে এই স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে মহম্মদ সেলিম তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘‘সমাজে সবার উপরে যারা থাকেন, তাদের আমরা গুরুজন বলি। যারা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন, নবজাগরণ করেছিলেন, শিল্প সাহিত্যে ছাপ রেখেছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্য এনেছেন, তাঁরাই আমাদের কাছে গুরুজন। এখন সেই গুরুজনদের সমাজ থেকে অপসৃত করা হচ্ছে। স্বৈরাচারী শক্তি সেই অপসৃত করায় প্রধান ভূমিকা নিচ্ছে। ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে। সে গান্ধীজীই হোন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই হোন কিংবা নজরুল ইসলামই হোন। গুরুজনদের পরের স্তরে থাকেন সজ্জন। সন্ত্রাস, মিথ্যা মামলার মধ্যে দিয়ে রাজনীতির আঙিনা থেকে এই সজ্জন ব্যক্তিদের বিদায় করা হচ্ছে। রাজনীতিতে যেন কোনও সজ্জন না থাকে। তারপরেই আসে মহাজন। বৈভবই যাদের লক্ষ্য। মহাজনদের সেই বৈভব কায়েমের লক্ষ্যে প্রয়োজন হয় অর্থের। যা খেটে আসে না। লুট করে আসে। তখন প্রয়োজন হয় দুর্জনদের। মহাজনী কারবার চলে না যদি দুর্জন না থাকে। মহাজন-দুর্জনদের যৌথ মদতেই তো গুরুজন-সজ্জনদের হটানো হচ্ছে ভয় দেখিয়ে,  পিস্তল দেখিয়ে, জাতপাতের নামের বিভাজন ঘটিয়ে। সেই অবস্থাই তৈরি হয়েছে আমাদের দেশে, রাজ্যে। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। প্রশ্ন করেন। বিরোধিতা করেন। এই কদিন আগেই গুরুগাঁওতে যা হল, ভাষার নামে, জাতের নামে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বস্তি। মণিপুরে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে।’’ 


তিনি বলেন, এই ক’দিনে দেশের মোদী সরকার ষোলোজন সাংবাদিকের উপর কালাকানুন প্রয়োগ করেছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করলেই তো দেগে দেওয়া হয় ‘চীনের দালাল’ বলে। ষোলোজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মোদী সরকার তাই করেছে। অথচ সরকারি মদতে মণিপুরে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার চুপ করে আছে। অন্যদিকে, যে সরকারকে প্রশ্ন করছে, কৃষকের ফসলের দামের কথা বলছে, যে আদানির ভ্রষ্টাচারের কথা বলছে তাকে ইউএপিএ’তে আটক করা হচ্ছে। এটা দেশে হচ্ছে, আমাদের রাজ্যে হচ্ছে। 
সেলিম বলেন, বীরভূম জেলায় দেউচা-পাঁচামী কয়লা প্রকল্পের নাম করে গরিব মানুষকে উৎখাত করার পরিকল্পনা হচ্ছে। টাকা, চাকরির লোভ দেখানো হচ্ছে। সরকার বলছে, শিল্পায়ন হবে। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরণের জন্য আন্দোলন করছি। কেন্দ্রীয় সরকার নিমরাজি। এখন বলছে সেখানে জমি জট। আসলে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে চায়। আমরাও বলেছি, সুপ্রিম কোর্টও বলেছে বিকল্প ব্যবস্থা না করে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর খেয়াল নেই। বলছে নতুন কারখানা হবে। সৌরভ গাঙ্গুলি করবে। নজর ঘোরানো হচ্ছে। দুর্গাপুরে আধুনিকীকরণ কেন হবে না? সেখানে রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, উন্নয়ন পর্ষদ ভূমিকা পালন করবে না কেন? যা আছে তা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই অথচ যা নেই সেই অলীকের দিকে চোখ ঘোরানো হচ্ছে। এই পর্দা ফাঁস কে করবে? উচ্ছেদের মুখে দাঁড়ানো মানুষের পাশে কে দাঁড়াবে? এই কাজটা শেখ ইসলামরা করেছিলেন। এই কাজ আমরা করছি। এই কাজের যারা যুক্ত হচ্ছেন তাদের উপর চাপছে কালাকানুন। তাই তো এখন চলছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা-২।’’ 


দীপঙ্কর চক্রবর্তী সভাপতিত্ব করেছেন স্মরণসভায়। বক্তব্য রেখেছেন পলিট ব্যুরোর সদস্য ডাঃ রামচন্দ্র ডোম। তিনি বলেন, ‘‘সত্তরের দশক থেকেই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শেখ ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। তারপর যুব আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনে নিজেকে আমৃত্যু সঁপে দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের লড়াইয়ে সর্বদা তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’’ শেখ ইসলামকে স্মরণ করতে গিয়ে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘ইসলামদার আচরণ, মানুষের সাথে মেলামেশা, মানুষের মতকে প্রাধান্য দেওয়ার মত গুণগুলি আমাদের অনুকরণীয়।’’ উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও। 
স্মরণসভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মহম্মদ সেলিম। এদিন কামদুনি মামলার সাজা ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে তদন্তকারী সংস্থা বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে পারছে না। তাই মামলার সঠিক বিচার হচ্ছে না। বিলম্ব হচ্ছে। তথ্যনিষ্ঠ তদন্ত প্রক্রিয়ায় ঘাটতি আছে। এটা বিচারপতি নিজেই বলেছেন। ধর্ষণ হোক, অপহরণ হোক, হত্যা হোক যেভাবে আমাদের রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে তাতে অপরাধীদের বুকের পাটা বেড়ে গিয়েছে। অপরাধীদের ধরার বদলে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আনিস খানের হত্যার পর বলেছিলেন শাস্তি হবে। কোথায় শাস্তি হল? পুলিশমন্ত্রীই যদি অপরাধ করেন তাহলে কে শাস্তি দেবে? তৃণমূলের যোগ থাকলেই সরকার আর তাদের শাস্তি দেবে না। এটাই রাজ্যের রীতি হয়ে উঠেছে।’’ 


সুপ্রিম কোর্ট বলেছে রাজ্যপাল আর উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না। এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, ‘‘আমরা তো আগেই বলেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যপালকে হাতে খড়ি দিতে গিয়েছিল তার আগেই বলেছিলাম। রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট। বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙতে চাইছে। এখন রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি রাজ্যপালদের তার রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে।’’
রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তৃণমূলের সভার ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘একেই তো একপেশে বলে। পুলিশকে জানিয়েও খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবসে সভা করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেখানে তো ১৪৪ ধারা ছিল না। আমাদের প্রত্যেকটা মিটিংয়ে মামলা করে।’’
 

 

Comments :0

Login to leave a comment