Sandeshkhali

শিবু হাজরাকে খুঁজতে তৃণমূল অফিসে চড়াও বিক্ষোভকারীরা

রাজ্য জেলা

প্রবীর দাস- বসিরহাট
 

শুক্রবার শিবু হাজরার খোঁজে জেলিয়াখালি থেকে নদী পেরিয়ে সন্দেশখালি থানার সামনে বিলাসবহুল তৃণমূল কার্যালয়ে চড়াও হলেন গ্রামবাসীরা। শিবু হাজরার এই অফিসেই চলত মহিলাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ঘৃণ্য কারবার। সেই তৃণমূল অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন পুলিশ! 
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, শিবু হাজরার কাছে তাঁরা ৭০-৮০ হাজার টাকা পাবেন। এই কথা যাঁরা বলছেন তাঁরা জেলিয়াখালির ফেরিঘাটের বোটচালক। গ্রামে রাস্তার ঢালাইয়ের মালপত্র বোটে করে বহন করে এনে দিয়েছিলেন তাঁরা। শিবু হাজরা বলেছিল, পঞ্চায়েত থেকে টাকা দেওয়া হবে। এখানে শিবু হাজরারাই পঞ্চায়েত। ফলে তা বিশ্বাসও করেছিলেন তাঁরা। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও সেই টাকা পাওয়া যায়নি। এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি তাঁরা। সন্দেশখালিতে এখন ভয়ের আগল ভেঙে গিয়েছে। 
এদিন সকালে সেই বোটচালকরা প্রথমে জেলিয়াখালিতে যান শিবু হাজরার গ্রামে। সেখানে থেকে সন্দেশখালির মূল দ্বীপে ত্রিমোহনী বাজারের সামনে শিবু হাজরার অফিসে চলে আসেন। পুলিশের কাছেই অভিযোগ জানাতে যান বোটচালকরা। ওখানে থাকা পুলিশকর্মীরা জানান, ‘‘আমরা বলতে পারব না বড়বাবুর কাছে যান।’’ এরপর জেলায়াখালির বোটচালকরা থানায় আসতেই থানার বড়বাবু বলেন, ‘‘এখন তো এলাকায় সমস্যা চলছে। কিছু করার নেই আমাদের। পরে আসুন। শিবু হাজরা কোথায় জানি না।’’ 
এদিকে, এরই মধ্যে তৃণমূলের এই জেলা পরিষদ সদস্যের গ্রেপ্তারি চেয়ে পোস্টার পড়ল সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে। ধর্ষণ, জমি লুটের অভিযোগে অভিযুক্ত সন্দেশখালি-২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শিবু হাজরা, শেখ শাহজাহানের মতোই এখনও ফেরার। যদিও একই এফআইআর-এ তৃণমূলে আরেক জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম সর্দারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূলের তরফে কলকাতা থেকে জানানো হয় উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তারপরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। শিবু হাজরাকে তৃণমূল সাসপেন্ড করেনি, ফলে পুলিশও তাকে ‘খুঁজে’ পাচ্ছে না। তৃণমূলী সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ সেই সন্দেশখালিতেই দলের নেতার গ্রেপ্তার চেয়ে পোস্টার পড়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 
জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে উত্তর ২৪পরগনা জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদীর কাছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলে এদিন জানা গিয়েছে। রিপোর্ট না পেলে কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে এদিন বলা হয়েছে। জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছেই গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন এই ত্রাসের রাজত্বে কী ভয়াবহ মানসিক চাপ পড়ছে শিশু সন্তানদের ওপর। খুলনার শিতুলিয়া গ্রামে বাসিন্দা কণিকা দাস জানান, ‘‘গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তখন স্বামী ভুজঙ্গ দাস, আমি ও ৭ মাসের শিশুসন্তান,  সত্তরোর্ধ্ব মা নিস্তারিণী দাস— সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আচমকা শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা, সত্যজ্যোতি সান্যাল, সফিকুল গাজির আশ্রিত বাহিনী পুলিশকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়ি মায়ের মুখ চেপে ধরে চড়, লাথি মারে। দরজা ভেঙে আমাদের ঘরে ঢোকে।’’ 
‘‘সাথে মহিলা পুলিশ ছিল?’’
কণিকা বললেন, ‘‘না। ৭ মাসের সন্তানকে আমার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় খাটের উপর। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগে। মহিলা পুলিশ ছাড়াই বেধড়ক পেটানো হয় আমাকে। ভাঙচুর করা হয় ঘরের আসবাবপত্র। আমাদের অপরাধ, আমরা বিক্ষোভ মিছিলে গেছিলাম।’’

Comments :0

Login to leave a comment