অনিন্দিতা দত্ত
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের সময়ে দিনের পর দিন একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসছে। দুর্নীতির জালে জড়িয়ে সমগ্র রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই লাটে উঠতে বসেছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে ট্যাব দেওয়া হয়, সেই ট্যাবের টাকাও চলে যাচ্ছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। এবার ট্যাব দুর্নীতিতে নাম জড়ালো শহর শিলিগুড়ির। ট্যাবের টাকা উধাও হবার ঘটনায় দুটি সরকারি স্কুলের নাম জড়িয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের কৃষ্ণমায়া মেমোরিয়াল নেপালি হাইস্কুল ও নিউ জলপাইগুড়ির এনজেপি রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলে ট্যাবের টাকা উধাও হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনার পরেই দুটি সরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেই সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
অভিযোগ, শহর শিলিগুড়ির দুটি সরকারি স্কুল কৃষ্ণমায়া মেমোরিয়াল নেপালি হাইস্কুল ও নিউ জলপাইগুড়ির এনজেপি রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলের মোট ২৮জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। এরমধ্যে স্কুল কৃষ্ণমায়া মেমোরিয়াল নেপালি হাইস্কুলের সাতজন পড়ুয়া ও বাকি ২১জন এনজেপি রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলের পড়ুয়া। এই প্রসঙ্গে স্কুল কৃষ্ণমায়া মেমোরিয়াল নেপালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসন্ন প্রধানের জানান, ‘‘ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসতেই স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ নিউ জলপাইগুড়ির এনজেপি রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমান তপাদারের বক্তব্য, ‘‘অদ্ভুত কান্ড ঘটেছে। আশ্চর্য্যজনক ভাবে বেশ কিছু পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা অন্যদের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। স্কুলের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
যদিও পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা দুর্নীতির ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার এবিটিএ-র দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক বিদ্যুৎ রাজগুরু বলেন, ‘‘সরকারী স্কুলের একজন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্যের আকাউন্টে চলে গেল কিভাবে। শুধুমাত্র একজন পড়ুয়ার সাথে এই ঘটনা ঘটেনি। দুটি সরকারী স্কুলের ২৮জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। এই ঘটনা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখে দ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।’’ এবিষয়ে শিলিগুড়ির বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা আগামী ১৮নভেম্বর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়ে ডি আই-র স্মারকলিপি তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ট্যাব দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শহরের প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যে রাজ্যে দুর্নীতির দায়ে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে উপাচার্যরা জেলে খাটছেন সেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর ভালো কিছু আশা করা যায়না। লুম্পেন রাজের পরিনতি এই সমস্ত দুর্নীতির ঘটনা। শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না। পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার মধ্যে দিয়ে যে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় সেই শিক্ষা শেষ করে দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক, শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক জগৎ থেকে আর কোন সামাজিক পূঁজির সৃষ্টি হবে বলে মনে করতে পারছি না। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এমনটাই ঘটবে। শাসকদল বা সরকারের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। মমতা সরকারের এটাই ভবিতব্য।’’
শিলিগুড়ির দুটি সরকারী স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা অন্য আকাউন্টে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির দুটি সরকারী স্কুলের ট্যাবের টাকা উধাও হবার বিষয় নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে শিলিগুড়ি এসএফ রোডের একটি ব্যাঙ্কের কিছু তথ্য মিলেছে। সেই তথ্যের সূত্র ধরেই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’’
Comments :0