সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি আচমকা তৎপর হয়ে ডিয়ার লটারির বিভিন্ন ঠিকানায়, এজেন্টদের ও আধিকারিকদের বাড়িতে জোর তল্লাশি চালিয়েছে। চেন্নাইয়ের এই লটারি সংস্থার ব্যবসা তামিলনাড়ু বা দেশের অন্যত্র তেমন কল্কে না পেলেও তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে বেশ রমরমা। তল্লাশি কমবেশি সব জায়গায় হলেও সর্বাধিক হয়েছে এরাজ্যে এবং এখান থেকেই নগদ তিন কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি।
যে কোনও ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধির মূলে থাকে অনুকূল পরিবেশ, পর্যাপ্ত বাজার এবং অবশ্যই সরকারের তরফে সহযোগিতা। এরাজ্যের সরকার নিঃসন্দেহে লটারি ব্যবসার প্রসারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে এবং সহায়তা দিয়েছে। তাই চেন্নাইয়ের লটারি সংস্থা সবচেয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা করতে পেরেছে এরাজ্যে। পাশাপাশি এটাও দেখা গেছে মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন যাওয়া কেষ্ট ও তার কন্যা এই লটারি সংস্থার কাছ থেকে দু’কোটি এগারো লক্ষ টাকা পেয়েছে। এমন অনেক তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক আছেন যাঁদের পরিবারের লোকজন ডিয়ার লটারির বিস্তর পুরস্কার পেয়েছেন। তাহলে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এই রাজ্যের সরকার ও শাসক দলের সঙ্গে কি ডিয়ার লটারির গভীর সম্পর্ক আছে?
অস্বীকার করার উপায় নেই। নরেন্দ্র মোদীর প্রবর্তিত নির্বাচনী বন্ডের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে। তা না হলে ডিয়ার লটারির সোল ডিস্ট্রিবিটর তৃণমূলের তহবিলে ঢেলে দেবে কেন। কোনও ব্যবসায়িক সংস্থা কোনও রাজনৈতিক দলকে শত শত কোটি দেয় ভালবেসে নয়। তারা টাকা দেয় নিজের ব্যবসার স্বার্থে। যে দলে টাকা ঢাললে সর্বাধিক মুনাফা ঘরে তোলা যাবে সেখানেই তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টাকা চালবে। নির্বাচনী বন্ডে এই লটারি সংস্থা মোট যত টাকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিয়েছে তার সর্বাধিক অংশ ৪০ শতাংশ দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির দলকে। টাকার অঙ্কে ৫৪২কোটি টাকা। এইভাবে শাসক দলকে টাকা দিয়েই সম্ভবত তারা এরাজ্যে ব্যবসার খোলা ময়দান হাতিয়ে নিয়েছে। ডিয়ার লটারির একচেটিয়া ব্যবসার স্বার্থেই সম্ভবত মমতা ব্যানার্জির সরকার পশ্চিমবঙ্গ লটারি বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু ডিয়ার লটারিকেই রাজ্য সরকার এরাজ্যে খোলা ময়দান ছেড়ে দিয়েছে, অন্য সংস্থাকে কেন নয়? তাছাড়া এই সংস্থার অতীত রেকর্ড তো মোটেই ভালো নয়। হাওলা পথে মানি লাউন্ডারিংয়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে বহুকাল ধরে। এর কর্ণধার লটারি কেলেঙ্কারিতে ২০১২ সালে চেন্নাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারপরও এরাজ্যে ব্যবসা প্রসারে কোনও বাধা আসেনি। সেই কর্ণধার কলকাতাতেই, ঘাঁটি গেড়ে ব্যবসা বাড়িয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা না থাকলে সেটা কখনোই সম্ভব হতো না। ২০১৫ সালে এই সংস্থারই কলকাতার একাধিক ঠিকানায় আয়কর তল্লাশিতে নগদ ৭০কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। সেই ধাক্কায় ব্যবসা সাময়িক ধাক্কা খেলেও ২০১৬ মমতা ব্যানার্জি দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হবার পর ফের ব্যবসা তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু সরকার, শাসক দল ও লটারির এমন দহরমমহরম?
উত্তর একটাই দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার সবচেয়ে সহজ অবলম্বন ডিয়ার লটারি। এরাজ্যে যত দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, তা সে গোরুপাচার, কয়লা পাচার, বালি পাচার থেকে বা শিক্ষা স্বাস্থ্য রেশন দুর্নীতি হোক, সেই টাকা সাদা করে দিত ডিয়ার লটারি। তাই দুর্নীতির সেরা রাজ্যে ডিয়ার লটারির রমরমা হবে না তো কোথায় হবে ?
Editorial
তৃণমূলের ডিয়ার লটারি
×
Comments :0