প্রকাশ্য দিবালকে এক মহিলাকে রাস্তায় ফেলে কঞ্চি দিয়ে বেপরোয়া ভাবে মারতে দেখা যায় তৃণমূল নেতা জেসিবিকে। যে মহিলা ওইরকম বর্বরতার শিকার হয়েছেন, সেই তাঁকেই বাধ্য করা হয়েছে এফআইআর করতে চোপড়া থানায়। আশ্চর্যজনকভাবে ওই নিগৃহীতা মহিলাকে দিয়ে এফআইআর করানো হয়েছে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে। জেসিবি’র কঞ্চির মার নয়, এমনকি প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারার ঘটনাতেও তিনি ‘যন্ত্রণা’ পাননি! কিন্তু ওই মারের ঘটনায় মহম্মদ সেলিম প্রতিবাদ জানানোয় তরুণীর নাকি সামাজিকভাবে ‘অসম্মান’ হয়েছে! আর তাই মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে নিগৃহীতা মহিলাকে দিয়েই এফআইআর’র বয়ান যৌথভাবে সাজিয়েছে জেসিবি বাহিনী এবং পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘হাজারও মিথ্যা মামলা পড়ে আছে। নতুন করে এফআইআর করে কি হবে? মোদ্দা কথা হচ্ছে নির্যাতিতা অপরাধী নয়। অপরাধ জগৎ যখন আশকারা পায় তারা যখন মন্ত্রী বিধায়ক হয় তখন পুলিশকে দিয়ে এই ভাবে মিথ্যা মামলা করা হয়। তিস্তা শীতলবাদ যখন গুজরাট দাঙ্গার পর জাহিরা শেখের পাশের দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন জাহিরা শেখকে দিয়ে তিস্তা শীতলবাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা এফআইআর করানো হয়েছিল। আরএসএসের কায়দা মনে করাচ্ছে তৃণমূল। ’’
তিনি বলেন, ‘‘কাকুর কন্ঠ স্বর ধামা চাপা দেওয়ার জন্য প্রতিবাদীদের কন্ঠস্বর চাপা হচ্ছে। নির্যাতিতদের পাশে যাতে কেউ না দাঁড়ায় তাই তাদের দিয়েই মিথ্যা মামলা করানো হচ্ছে।’’
গত রবিবার ওই পেটানোর দৃশ্য সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পরেই তজিমুল ওরফে জেসিবি’র বাহিনী গ্রামে ত্রাস সৃষ্টি করে যাতে কেউ মুখ না খোলে। ভিডিও যে ভাইরাল করেছেন তাঁর খোঁজে গ্রামে তল্লাশি চালায় তৃণমূলী বাহিনী। এরপর সোমবার রাতেই তৃণমূলের ব্যবস্থাপনায় নির্যাতিতা মহিলাকে দিয়ে বলানো হয় যে , মীমাংসা হয়ে গেছে। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া ওই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে, যে করেছে আমি তার বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছি।’ একই কথা বলানো হয়েছে তাঁর শাশুড়িকে দিয়ে।
এবার পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ জুলাই সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় নির্যাতিতা মহিলাকে দিয়ে লিখিত অভিযোগ করানো হয়। পুলিশ সেই রাতেই তা এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে। এফআইআর নম্বর- ৪৪৬/২৪। কী লেখা হয়েছে এফআইআরে?
ওই নির্যাতিতা মহিলাকে দিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলী বাহিনী লেখায় যে, ‘আমার অজান্তে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে...যার দরুন আমার সম্মানহানি হয়েছে...ভিডিও ভাইরাল করেছেন মহম্মদ সেলিম এবং বিজেপি নেতা অমিত মালব্য...তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হক।’
নিগৃহীতা তরুণীর এই বয়ান এমনভাবে লেখানো হয়েছে যে কোথায় উল্লেখ নেই কোন ঘটনার ভিডিও! তৃণমূল নেতা জেসিবি তাঁকে রাস্তায় ফেলে সকলের সামনে নৃশংসভাবে মারধর করেছে তারও উল্লেখ নেই। সেই মারধর ঘটনায় নয়, প্রতিবাদ করায় তাঁর সম্মানহানি হয়েছে! মহম্মদ সেলিম ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন। অসংখ্য মানুষ সেই বর্ররতার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।
পুলিশ ওই লিখিত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত ১ তারিখে তা এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে। এফআইআর’র কথা এমনকি বেমালুম চেপে যাওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের কাছেও। বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট ষড়যন্ত্রের নকশাতেই পুলিশের এমন আচরণ। গত ১ তারিখ থেকেই লাগু হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৯, ২৯৪, ৩৫৬ (২) এবং আইটি আইনের ৬৬এ, ৬৬ই এবং ৬৭এ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিন নিউ টাউনে জননেতা জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের মাঝে সংবাদমাধ্যমকে সেলিম বলেন, ‘‘চোপড়ার তাজিমুল হকের বিরুদ্ধে এক বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমাদের কর্মীকে খুুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতদিন পুলিশ তাকে কিছু বলেনি। চোপড়ায় যেদিন রাস্তায় সালিশী সভা বসিয়ে মারধর করা হয়েছিল তার তিনদিন পরও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ভিডিও আমরা সোশাল মিডিয়ায় দেওয়ার পর প্রবল প্রতিক্রিয়ার দরুন ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়েছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘এফআইআর করে আমাদের কন্ঠরোধ করা যাবে না। আমাদের পার্টিকর্মীদের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কন্ঠরোধ করা যায়নি।’’
Comments :0