TMC THREAT

প্রার্থী প্রত্যাহারে পুলিশকে মাঠে নামিয়েছে তৃণমূল

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP tmc violence bengali news অন্ডাল-উখড়া রোড অবরোধ করে তৃণমূলী সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মানুষ।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য বামপন্থী প্রার্থীদের ওপর হুমকি হামলা ক্রমশ বাড়ছে। বোমাবাজি থেকে বাড়ি ঘেরাও, প্রার্থী ও পরিবারের সদস্যদের মারধর, তাঁদের হাট বাজারে যাওয়া বন্ধ করা, মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন তোলার চেষ্টা চলছে। 

শুধু তাই নয়, এসব কাজে শাসক দল পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও অভিযোগ। যখনই খবর মিলছে আক্রান্তদের পাশে পৌঁছে যাচ্ছেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। তৃণমূলীদের রুখে দিতে মরিয়া এককাট্টা গ্রামের মানুষও। ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রাম।   

মনোনয়ন তুলতে রাজি না হওয়ায় প্রার্থীর স্বামীকে বেধড়ক মারধর করল তৃণমূলের বাহিনী। শুধু তাই নয়, আহত প্রার্থীর স্বামী বিপ্লব ঘোষকে গ্রেপ্তারও করল দলদাস পুলিশ। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। 

অম্বিকা ঘোষ ক্ষেতিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের ১৮নম্বর আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী। এটাই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’। মনোনয়ন তুলতে রাজি না হলে শনিবার রাতে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সেই সময় অম্বিকা ঘোষের স্বামী বিপ্লব ঘোষ প্রতিবাদ করলে সিপিআই(এম) প্রার্থীর স্বামীকে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়, প্রচণ্ড মারধর করে। 


এরপর কাজে লাগানো হয় পুলিশকে। রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় সিপিআই(এম) কর্মীরা বিপ্লব ঘোষকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তখনই  দেওয়ানদিঘি থানার পুলিশ হাসপাতাল চত্বর থেকে আক্রান্ত বিপ্লব ঘোষকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় রাত ২টো নাগাদ। বিনা দোষে তৃণমূলের সাজানো মামলাতেই আক্রান্ত বিপ্লব ঘোষকে  পুলিশ গ্রেপ্তার করে। 

এই ঘটনায় ক্ষেতিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের বারাসতি গ্রামে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আক্রান্ত বিপ্লব ঘোষকে পুলিশ ও শাসক দলের সাজানো মামলাতে ২১ জুন আদালতে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ,  সম্প্রতি তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের সাথে জেলা পুলিশসুপারের একটি হোটেলে গোপন বৈঠক হয়। সেখানেই শাসক দলের নির্দেশ মতো পুলিশ কার্যত দলদাসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য গ্রামবাসীদের। পুলিশ ও তৃণমূলের গুন্ডারা এক সাথেই সিপিআই(এম) প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে এমনটাই অভিযোগ। বর্ধমান সদর-১ ব্লকের বিভিন্ন বাড়িতে এই ঘটনা। 


রবিবার রাতে জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর ২০৮ নম্বর ভীম পাড়া বুথের তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী বিদ্যুৎ দপ্তরের ঠিকা শ্রমিক দীপক রায়ের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল। সদর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী তৃণমূল নেতা নিতাই করের নেতৃত্বে তিনটি গাড়িতে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে দীপক রায়ের স্ত্রীকে হুমকি দেওয়া হয়। 

তারা বলে, তাঁর স্বামী যেন প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেন। দীপকের স্ত্রী সাহসের সাথে জানান কোনোভাবেই তাঁর স্বামী প্রার্থী পথ প্রত্যাহার করবেন না। এরপর প্রাণ সংশয়ের হুমকি দিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায়। সোমবার বেলা দশটা নাগাদ আবারও নিতাই করের নেতৃত্বে দুষ্কৃতী বাহিনী এসে প্রার্থীর স্ত্রীকে ক্রমাগত কাজ হারানোর হুমকি দিতে থাকে। 

ইতিমধ্যে খবর পৌঁছায় সিপিআই(এম) দপ্তরে। পার্টি নেতৃবৃন্দ যোগাযোগ করেন ডিএসপি সমীর পালের সাথে। এরপর বাড়িতে পৌঁছায় সংবাদ মাধ্যম ও জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। তড়িঘড়ি এলাকা ছাড়ে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা। 


অন্যদিকে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৯ নং বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী পায়েল রাজবংশী হালদারের পরিবার হুমকির শিকার হয়। তাঁর স্বামী গৌতম হালদার হাটে হাটে মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। একটি অডিও ক্লিপে শোনা গেছে তৃণমূলের ব্লক কমিটির নেতা সঞ্জীব কর্মকার যিনি আবার হাট কমিটির সম্পাদক, হুমকির সুরে বলেছেন, স্ত্রী সিপিআই(এম)’র প্রার্থী হলে তাকে হাটে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। 

শুধু ফোনে হুমকি নয় আগেই জলপাইগুড়ি বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে তাঁরা তৃণমূলের রোষের শিকার হন। বিডিও অফিসের ভেতরেই মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পরে পার্টি নেতৃত্বের তৎপরতায় পায়েল রাজবংশী হালদার মনোনয়ন দাখিল করেন। প্রার্থীর বক্তব্য, এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য টেলিফোনে লাগাতার বাড়ি থেকে উৎখাতের হুমকি পাচ্ছেন তিনি। 


একই অবস্থা হুগলীর গোঘাট, খানাকুল, আরামবাগে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য। রবিবার মধ্যরাতে কামারপুকুর কলেজ মোড়ে সিপিআই(এম) নেতা তিলক ঘোষের বাড়িতে বোমাবাজি করে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা। এছাড়া বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। 

খানাকুলের ঠাকুরানিচক, রামমোহন ১, খানাকুল ২ পঞ্চায়েত এলাকায় বামপন্থী প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা হুমকি ও হামলা চালায়। আরামবাগ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকজন সিপিআই (এম) প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ও হামলা চালায়। 

তিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীবাটী গ্রামের বাসিন্দা নাসিমা বেগম ( বুথ নং ২২) , ঢোঙাবাথান গ্রামের সেখ আব্দুল হালিম (বুথ নং ২৪ ) এবং ভাবাপুর গ্রামের কুহেলি দাসের (বুথ নং ৯) বাড়িতে রাতের অন্ধকারে দল বেঁধে গিয়ে একইভাবে তৃণমূলীরা হুমকি দেয়। নাসিমা বেগমকে মারধর করা হয়, চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। বাড়ি ভাঙচুরও করে। তাঁর দেওরের ছেলের হাত ভেঙ্গে দেয়।  

একইভাবে শেখ আব্দুল হালিম, কুহেলি দাসের বাড়িতে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা।তিরোল পঞ্চায়েতের আরও দু'জন সহ সালেপুর ১ ,হরিণখোলা ১ , হরিণখোলা ২ ,আরান্ডি ১ ও আরান্ডি ২ পঞ্চায়েতের প্রায় ৮ জন সিপিআই (এম) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। প্রার্থীদের উপর হুমকি ও হামলা চালায় বলে অভিযোগ। 


ওদিকে এক নির্দল প্রার্থীকে হাত কেটে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুরুলিয়ায়। ওই নির্দল প্রার্থীকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন শাসক দলের এক নেতা। সেই নেতার স্ত্রী আবার জেলা পরিষদের একটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হতেই ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য (ভাইরাল হওয়া ওই হুমকি ফোনের সত্যতা যাচাই করেনি গণশক্তি)। 

অডিও ক্লিপে বলা হয়েছে পুরুলিয়া দু’ নম্বর ব্লকের বোঙাবাড়িতে ভোট দিতে এলে প্রার্থী পরীক্ষিত রজকের হাত কেটে নেওয়া হবে। পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকে বোঙাবাড়ির বাসিন্দা রাঘবপুর পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন পরীক্ষিত রজক। তাঁর অভিযোগ, নিজেকে তৃণমূল নেতা বলে পরিচয় দেওয়া দিলীপ মাহাতো শনিবার রাতে হুমকি দেন। পুরুলিয়া মফস্বল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রার্থী।

Comments :0

Login to leave a comment