Power Crisis

রাজ্যে বাড়ছে লোডশেডিং চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুত সংস্থারা

রাজ্য

Power Crisis

প্রবল চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে কলকাতা সহ রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সিইএসসি, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। শনি ও রবি ছুটির পর সোমবার কাজের দিন থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ফের বাড়তে পারে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। আশঙ্কায় রয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষজন। গত কয়েক দিনের মতো শুক্রবারও বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয় কলকাতার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। টানা ৬ ঘন্টা লোডশেডিং’র জেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ওয়ার্ডের যোধপুর পার্ক, যোধপুর গার্ডেন অঞ্চলের বাসিন্দারা। 


এর আগে গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতা ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং-এ নাজেহাল হয়েছেন শহর ও শহরতলির বাসিন্দারা। ওভারলোডিং-এর ফলে ট্রান্সফরমার জ্বলে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। শনি ও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা একটু কমবে। কিন্তু সোমবার থেকে চাহিদা বাড়লে কি হবে তা ভেবে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। কেনও আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি রাজ্য সরকার এবং সিইএসসি’র তরফে- এই প্রশ্নে বাড়ছে ক্ষোভ বিক্ষোভ।    


সারা রাজ্যের মতো তাপপ্রবাহের কবলে শহর কলকাতা। গরমের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে বিদ্যুতের সঙ্কট। যদিও কলকাতা শহরের মূল বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি’র দাবি, গরমের সময় হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলেই তৈরি হচ্ছে সাময়িক ঘাটতি। রয়েছে ওভারলোডিং-এর সমস্যা। যদিও সঙ্গে সঙ্গেই তার মোকাবিলা করা হচ্ছে। শুক্রবারে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক স্তম্ভে আগুন লেগে প্রায় ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলে বলে জানা গেছে।
সিইএসসি সূত্রে খবর, প্রতিদিন রেকর্ড হারে কলকাতা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি সপ্তাহের সোমবার কলকাতা শহরের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২৩৬৬ মেগাওয়াট, যা সিইএসএসি’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মঙ্গলবারেই সেই রেকর্ড ভেঙে যায়। সেদিন শহর কলকাতার বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে হয় ২৫০৩ মেগাওয়াট। প্রতিদিন মোটামুটিভাবে এই ধরনের চাহিদা থাকছে। সুতরাং এই বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে কিছু কিছু সমস্যা আসছে। তবে তা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।


অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই এই তীব্র গরমে লাগামছাড়া হারে বেড়ে চলা বিদ্যুতের চাহিদার যোগান বেশ কিছু জায়গায় দিয়ে উঠতে পারছে না সিইএসসি। সংস্থার আধিকারিক এবং কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাপপ্রবাহের সঙ্গে বাড়ছে এসি এবং এয়ার কুলার বিক্রি। একটি বিদ্যুৎ সংযোগ কতটা ‘লোড’ নিতে পারে, তার হিসেব বিদ্যুতের বিলের পিছনে দেওয়া থাকে। কিন্তু গরমের হাত থেকে বাঁচতে বহু ক্ষেত্রেই সেই হিসেব অত তলিয়ে না দেখেই এসি কিংবা এয়ার কুলারের সংযোগ নিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তার ফলে হিসেবের বাইরে ‘লোড’ পড়ছে সংযোগে। 


সিইএসসি’র কর্মীরা জানাচ্ছেন, বেশ কিছু জায়গায় চাহিদা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে সেখানে পরিস্থিতি সামলাতে একটির বদলে ২টি ট্রান্সফর্মার লাগাতে হবে। কিন্তু গ্রীষ্মকালের চাহিদা সামলাতে সেটা করাও সম্ভব নয়। তারফলে ‘লোড শেডিং’ হচ্ছে। সিইএসসি’র পাশাপাশি কলকাতা শহরের একটা অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ বা ডব্লিউবিএসইডিসিএল। সেই অঞ্চলগুলি, যেমন গড়িয়া ব্রহ্মপুর থেকেও বিদ্যুৎ সঙ্কটের খবর মিলছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, আগে থেকে তো জানাই ছিল গরমে এই পরিস্থিতি হতে পারে- তাহলে ব্যবস্থা কেন তৈরি রাখা হল না প্রশাসনের তরফে।  


সিইএসসি এলাকার মধ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কট সব থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে মধ্য কলকাতা এবং লাগোয়া অঞ্চলগুলিতে। এই অঞ্চলের একটা বড় অংশের মানুষ রোজা রেখেছেন গত একমাস ধরে। ঈদের আগে দফায় দফায় লোডশেডিং-এর কবলে পড়ে নাজেহাল হয়েছেন তাঁরা। উৎসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এসির পাশাপাশি এই বর্ধিত চাহিদা কুলোতেও হিমশিম অবস্থা সিইএসসি’র। এরমধ্যেই পার্ক সার্কাস, বন্ডেল গেট, রাইফেল রেঞ্জ রোড সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে নিয়মিত লোডশেডিং-এর খবর এসেছে। এদিকে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অবশ্য মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভকে তেমন আমল না দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকই আছে বলে জানিয়েছেন।  

Comments :0

Login to leave a comment