MANIPUR VIOLENCE

মণিপুরে নগ্ন দুই মহিলাকে হাঁটানোর পর
দলবেঁধে ধর্ষণ

জাতীয়

manipur rahul gandhi bjp congress ethnic violence bengali news crime against women

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি
 

বিজেপি শাসিত মণিপুর আরেক গা শিউরে ওঠা ঘটনার সাক্ষী থাকল। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে তিনজন আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশের হেপাজত থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে নরপিশাচরা। বুধবার এই ভিডিওটি সমাজমাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।

অবশ্য এই নিয়ে পুলিশের কোনও বক্তব্য এখন পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, থানায় অভিযোগ জানানো হলেও কোনও থানা মামলা নথিভুক্ত করেনি। রাজ্যের আদিবাসীদের সংগঠন ‘ইন্ডিজেনিয়াস ট্রাইবেল লিডার ফোরাম’ ভিডিওটি ফাঁস করার পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য পুলিশ। কাঙপকপি জেলার পুলিশ সুপার মনোজ প্রভাকর আমতা আমতা করে বলেছেন, ‘‘জেলার সবকটি থানায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কোথাও অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে খবর নেই। ঘটনাটি সাইকুল থানা এলাকায় ঘটেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।’’


নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে রাজ্যে জাতি সংঘর্ষ শুরুর ঠিক পরের দিন ৪ মে। রাজধানী ইম্ফল শহর থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে কাঙপকপি জেলার এক গ্রামে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দুইজন মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটাচ্ছে প্রায় হাজার খানেক মানুষ। মহিলাদের মুখ চাপা দিয়ে ধরা হয়েছে। মহিলাদের শরীরে হাত দিচ্ছে যুবকরা। তারপর তাদের খেতের জমিতে ফেলা হয়। এরপর তাঁদের দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে ভিডিওতে দুই মহিলাকে দেখা গেলেও তাঁদের সঙ্গে আরেক মহিলা ছিলেন। তিনি কোনোক্রমে পালিয়ে যান। 

ওই মহিলা সাইকুল থানায় অভিযোগ দায়েরও করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। ওই মহিলা পরে একটি শিবিরে আশ্রয় নেন। সেদিনের ঘটনার প্রধান সাক্ষী ওই মহিলা সাংবাদিকদের কাছে সব কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ৩ মে রাতে কাঙপকপি জেলার তাঁদের গ্রামে হানা দেয় প্রায় হাজার খানেক মেইতেই যুবক।  তাদের হাতে মারণাস্ত্র ছিল। গ্রামে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তারপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে এদিক ওদিক ছুটতে থাকেন গ্রামবাসীরা। 

এরমধ্যে দুই পরিবারের পাঁচজন গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। এরমধ্যে এক পরিবারের ৫৬ বছরের এক পুরুষ, সঙ্গে ১৯ বছরের ছেলে এবং ২১ বছরের মেয়ে। আরেক পরিবারের ৪২ ও ৫২ বছরের দুই মহিলা। এঁরা সকলেই কুকি জনগোষ্ঠীর। ওই দুই মহিলার মধ্যে প্রধান সাক্ষী ওই মহিলাও রয়েছেন। তাঁরা সারা রাত জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে পরদিন ভোরে নঙপক সেকমাই থানার পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রওনা দেয়। 

পুলিশের গাড়ি সাইকুল থানায় পৌঁছানোর দুই কিলোমিটার আগে তৌবু এলাকায় পুলিশের গাড়ি আটকে দাঁড়ায় হাজার খানেক যুবক। পাঁচজনকে তাদের হাতে তুলে দিতে পুলিশকে চাপ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও উন্মত্ত জনতার হাতে পাঁচজনকে তুলে দেয়। এরপর পুলিশ চলে যায়। 

পাঁচজনকে হাতে পেয়ে প্রথমে ৫৬ বছরের বৃদ্ধকে খুন করে ফেলে। তারপর তিনজন মহিলাকে জোর করে নগ্ন করে। ২১ বছরের বোনকে নগ্ন করার সময় ১৯ বছরের ভাই বাধা দিলে তাঁকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ওই যুবকরা। তারপর নগ্ন মহিলাদের হাঁটিয়ে ফাইনম গ্রামে নিয়ে যায়। 

ওই সময় ৫২ বছরের ওই মহিলা কয়েকজনের হাতে পায়ে ধরে নগ্ন অবস্থায় পালিয়ে আসেন সাইকুল থানায়। বাকি দুই মহিলার ওপর যে নারকীয় কাণ্ড ঘটানো হয়, তা মোবাইলের ক্যামেরায় তুলে রাখে দুষ্কৃতীরা। সেই ভিডিও বুধবার ভাইরাল হয়েছে। 

আদিবাসীদের সংগঠন এই ভিডিও ফুটেজ এদিন জাতীয় মহিলা কমিশন ও জাতীয় আদিবাসী কমিশনের কাছে পাঠিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া, সাইকুল ও নঙপকপি থানার সেদিন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ফোরাম। 

নৃশংস ঘটনাটি সামনে আসার পর দেশের বিভিন্ন দল ও সংগঠন সোচ্চার হয়েছে। এই ঘটনাটির পর মোদী এখনও চুপ কেন, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
 

এদিকে, বুধবার বিকেলে কাকচিং বাজারে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে প্রায় ত্রিশ জন জখম হয়েছেন। এরমধ্যে দশজন পুলিশ কর্মী বলে জানা গিয়েছে। এদিন বিষ্ণুপুর জেলার ট্রংলাউবি এলাকায় একটি সভা থেকে ফেরার পথে কাকচিং বাজারে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে হাজার খানেক মানুষ। 

পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করতেই মানুষও পাল্টা পুলিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এক সময় পুলিশ কর্মীরা পালাতে শুরু করেন। কয়েকজন পুলিশকে ধরে বেধড়ক মারধর করে জনতা। পুলিশের আটটি গাড়ি এবং কাকচিং থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।
 

Comments :0

Login to leave a comment