বই
কবিতায় বহুস্বরিক ভাবনার ঐকতান
ভবানীশংকর চক্রবর্তী
মুক্তধারা
কবিতার অবয়ব নির্মাণে শব্দই হল প্রধান উপাদান।আর সেই অবয়বকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে অলংকার।অর্থাৎ কবিতা স্টেটমেন্টমাত্র নয়।স্লোগানও নয়।কিংবা আবেগতাড়িত কোনো উচ্চারণ মাত্র নয়।কিন্তু এসবের জাদুস্পর্শ থাকবে কবিতায়।সম্প্রতি প্রকাশিত কবি কল্যাণ দে-র 'কবিতা সংগ্রহ' পড়ে মনে হল তিনি তাঁর কবিতাকে যথার্থত কবিতা করে তোলায় খুব সাবধানী।তাঁর কবিতা জীবনবোধে উজ্জীবিত , দ্রোহে মুখর,আবেগে সংরক্ত এবং আয়তনে পরিমিত। ড. তৈমুর খান বইটির ' মহাকালের গান,মহানন্দার স্রোতের ভাষা ' শিরোনামে ভূমিকা লিখেছেন।সেখানে তিনি বলেছেন, ' অতীত থেকে বর্তমান, জীবন থেকে মৃত্যু, সৃষ্টি থেকে ধ্বংস, গৌরব থেকে গৌরবহীন কত ঘটনার ভেতর দিয়ে কবি আমাদের নিয়ে গেছেন।' এই কথাগুলি বলে দেয়,কল্যাণ-এর ভাবনার পরিধি কত প্রসারী ও বহুমাত্রিক । দু-একটি উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর কবিতার সামগ্রিকতাকে হয়তো বোঝানো যাবে না।কিন্তু তাঁর কবিতার বহুস্বরের একটা আভাস পাওয়া যেতে পারে _
১।তার শরীর ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে কচি শ্যামলরঙা গর্জন তেল /মুখমণ্ডল ঘিরে আরতি করছে শরতের ভোরের প্রতিমা (ধানশিশু,পৃ.২৫)
২।নিঃসঙ্গ বুকের ভেতর খেলা করে বাদুড়ের ডানা/কাঞ্চন পাহাড় মাড়িয়ে নেমে আসে সাপের শরীর/তাদের কোনো ধর্ম নেই;(প্লাবনের পথে,পৃ.৩২)
৩।একচক্ষু হরিণেরা সমাজের ফুলদানি/তাদের সংক্রামিত হাসির ফোয়ারায় আমরা হাসি/তাদের সুললিত বাণীর উজ্জ্বল শব্দ ঘিরে/আমাদের গার্হস্থ্যআশ্রম সাজাই(হরিণকাব্য, পৃ.৭৮)
এরকম অনেক উদাহরণ আছে।অবশ্য এই সংকলনে সব কবিতাই মানোত্তীর্ণ ,এমনটি নয়।কল্যাণও এমন দাবি করেন না নিশ্চয়ই ।তবুও তাঁর কবিতা সংগ্রহ পাঠক সমাজের কাছে আদৃত হবে এই আশাটুকু করা যেতেই পারে।
মধুমঙ্গল বিশ্বাস-এর প্রচ্ছদ সুন্দর।কাগজ, বাঁধাইও সুন্দর।'দৌড়'প্রকাশনার একটি মনোজ্ঞ প্রয়াস এই সংকলন।
কবিতা সংগ্ৰহ
কল্যাণ দে
দৌড় প্রকাশনা,
দাম ২৫০ টাকা।
Comments :0