কোভিড লকডাউন আতঙ্কে এক সময় মানুষ রাস্তায় বেরতেন না। ফোনে কথা বললেও কেউ কারোর বাড়ি যেতেন না। সবচেয়ে বড় কথা, টানা লকডাউনের জেরে বহু মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন। ছোটদের অবস্থা হয়েছিল আরও কঠিন। বাইরে যাওয়ার জায়গা নেই সব বন্ধ, স্কুল বন্ধ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই। ঘরেও মন টিকত না। এই পরিস্থিতি থেকে মানুষ এখন অনেকটাই দুরে। যদিও অর্থনীতি, কর্মহীনতার সমস্যা রয়েছে সেই সঙ্গে এখনও রয়েছে সেই অবসাদের দিনগুলির স্মৃতি এবং কোভিড আতঙ্ক। বহু মানুষ মানসিকভাবে এখনও কোভিডের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
যেমন মুনমুন মাঝি। গুরুগ্রামের বাসিন্দা বছর ৩৩’র মুনমুন মাঝি ও তার ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে আজ তিন বছর নিজেকে আটকে বাড়ির ভেতর। বাইরে বেরননি ২০২০’র মার্চের পর থেকে। তাঁর আতঙ্ক, বাইরে বেরলেই তার ১০ বছরের সন্তানের কোভিডে মৃত্যু হবে। সেই কারণেই তিনি বের হন না ও তার ১০ বছরের ছেলেকেও বাইরে বেরতে দেন না।
কোভিড আতঙ্কের মানসিক সমস্যার এই চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে মুনমুনের স্বামীর জন্য। একটি বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার সুজন মাঝি গুরুগ্রাম পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানান। তিনি বলেন, তিন বছর আগে লকডাউনের সময় থেকে শুরু হয়েছে এই সমস্যা। পরে লকডাউন উঠে গেলে সমস্ত কিছু স্বাভাবিক হলেও স্বাভাবিক হয়নি মুনমুনের মন। ফলে কাজের জন্য সুজন অফিসে যেতে শুরু করলেই তাঁর স্ত্রী তাঁকে ঘরে ঢুকতে দেন না। প্রথম প্রথম বন্ধু ও আত্মীয়দের বাড়িতে কাটালেও পরে আরেকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন সুজন। এদিকে ইলেক্ট্রিকের বিল, ফোনের রিচার্জ সমস্ত কিছু করে দিতেন সুজন। খাবার সহ নানা দরকারি জিনিস দরজার বাইরে রেখে চলে আসতেন তিনি।
কিন্তু টানা তিন বছর কেটে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি আর মেনে নিতে না পেরে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুজন। কারণ দীর্ঘদিন বাড়িতে আটকে থাকার ফলে প্রবল প্রভাব পড়ছে তাঁদের সন্তানের ওপর। তিন বছর ওই কিশোর তার মাকে ছাড়া বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পুলিশ প্রথমটায় ব্যপারটি সহযে নিলেও পরে সুজন তাদের কাছে ফের আবেদন করে।
বুধবার রাতে মুনমুনের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মা-ছেলেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিন বছরে ওই ছেলেটির চুল বেড়ে গিয়ে কাঁধ ছাড়িয়েছে। তিন বছরে ঘরের নোংরায় বাইরে ফেলা হয়নি। চারিদিকে খাবারের প্যাকেট ছড়ান। বিছানা, জামা, কাপড় কাচা হয়নি বহুদিন। বাসন নোংরা ঘরের চারিদিকে জিনিসপত্র জামাকাপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আর ঘরের দেওয়াল জুড়ে আঁকা কিশোরের মনের চিত্র। মা-ছেলে দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Comments :0