Himachal Pradesh Assembly Election

পাহাড়ি রাজ্যে অনায়াস জয় কংগ্রেসের

জাতীয়

Himachal Pradesh Assembly Election

দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি হাতছাড়া হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই এবার হিমাচল প্রদেশ বিধানসভার রাশও খোয়াতে হলো বিজেপি’কে। ৬৮ সদস্যের হিমাচল বিধানসভায় বৃহস্পতিবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে কংগ্রেস। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নানান নির্বাচনে পরপর হারতে থাকা কংগ্রেস মুখরক্ষা করে এদিন একাই ৪০টি আসন পেয়েছে এই পার্বত্য রাজ্যটিতে। রাজ্যে গত পাঁচ বছরের শাসক দল বিজেপি’র ঝুলিতে গিয়েছে ২৫টি আসন। ৬৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আম আদমি পার্টি (আপ) সবক’টিতে হারলেও, নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩টি আসনে।

 


একই দিনে আপ আনুকূল্যে গুজরাটে বিপুল জয় হাসিল করলেও, হিমাচলের ফলাফলকে বিজেপি’র পক্ষে বড় ধাক্কা হিসাবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর এরাজ্যে সরকার বদলের নজির থাকলেও এবারে ‘মোদী-ঝড়ে’ ভর করে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল কেন্দ্রের শাসক দল। জয় সুনিশ্চিত করতে বাকি সবাইকে হটিয়ে দলের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিজেপি’র দৌর্দন্ডপ্রতাপ নেতা তথা কেন্দ্রের সরকারের দু’নম্বর হিসাবে পরিচিত অমিত শাহ। এমনকি হিমাচলের ‘ভূমিপুত্র’, দলের বর্তমান সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও এব্যাপারে বিশেষ পাত্তা দেননি তিনি। 

 

 

মোদী-শাহ জুটির পরিকল্পনা মতোই হিমাচলে এবার বিজেপি’র প্রধান নির্বাচনী স্লোগান ছিল ‘‘রাজ নেহি, রেওয়াজ বদলেগা’’ অর্থাৎ ‘‘সরকার নয়, প্রথা বদলাবে’’। কিন্তু এই আহ্বানে কান না দিয়ে হিমাচলের আমজনতা কার্যত ফিরিয়ে দিলেন মোদী-শাহকেই, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।  
এদিকে, সরকার গড়ার জন্য দরকারি ৩৫ আসন অনায়াসে অতিক্রম করে যাওয়ায় কংগ্রেস শিবিরে নয়া মন্ত্রীসভার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী শুক্রবার রাজধানী সিমলায় কংগ্রেসের নবনির্বাচিত বিধায়কদের প্রথম বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করেছেন হিমাচল প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি’র নেতা রাজীব শুক্লা। 

 

তিনি জানান, ‘‘পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব কংগ্রেস সভাপতির হাতে তুলে দিয়ে বৈঠকে একটি প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে।’’ এর মধ্যে এদিনই বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর রাজভবনে গিয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকর তাঁর ইস্তফা গ্রহণও করেছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
তবে বিজেপি নেতারা মুখে জনতার রায় ‘শিরোধার্য’ করে নিলেও, তলে তলে নবনির্বাচিত বিধায়কদের ভাঙানোর ছক কষছেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেসের। এই অবস্থায় সদ্য নির্বাচিত ৪০ বিধায়ককে ‘নিরাপত্তা’ দিতে তাঁদের পার্শ্ববর্তী চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল কংগ্রেস। এআইসিসি নেতা রাজীব শুক্লা এদিন বিকেলে তেমন কথাই জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের কাছে। সেইমতো চণ্ডীগড়ের হোটেলে প্রয়োজনীয় বুকিংয়ের কাজও সারা হয়ে গিয়েছিল বলে খবর আসে। তবে বিধায়ক সংখ্যা ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে যথেষ্ট বেশি হওয়ার পরে সন্ধ্যায় দলীয় পরিকল্পনা বদলে ফেলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। রাজীব শুক্লাও সাংবাদিকদের সামনে এসে ফের জানিয়ে দেন, চণ্ডীগড়ে নয়, পরিষদীয় দলের প্রথম বৈঠক হবে সিমলাতেই। 

 

 


নয়া সরকার গঠনের তোড়জোড়ের মধ্যেই হিমাচলে নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়েও জোর টানাপড়েন শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। জানা গিয়েছে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রতিভা সিংয়ের নামই ঘুরপাক খাচ্ছে বেশি। তবে শোনা যাচ্ছে প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি সুখবিন্দর সিং সুখু এবং বিদায়ী পরিষদীয় দলের নেতা মুকেশ অগ্নিহোত্রীর নামও। ভোট-জয়ের লক্ষ্য অর্জনের পর নয়া মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনই এখন কংগ্রেসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে এগিয়ে থাকলেও প্রতিভা সিং কিন্তু এবার ভোটে লড়েননি। তবে দলকে জেতাতে রাজ্যজুড়ে পরিশ্রমী প্রচার চালিয়ে সকলের নজর কেড়েছেন মান্ডির এই বর্তমান সাংসদ। অন্যদিকে সুখু জয়ী হয়েছেন নাদাউন আসনে এবং অগ্নিহোত্রী হারোলিতে। 

 

তবে দলের অন্দরে ভারসাম্য রেখে শেষপর্যন্ত হাইকমান্ডের হাত কার মাথায় পড়বে, তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন এখনও।
দলের জয়লাভের পরে এদিন হিমাচলবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘ভোটের আগে মানুষকে দেওয়া প্রতিটি অঙ্গীকার রক্ষা করা হবে।’’ প্রসঙ্গত, পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনা, যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সহ মোট দশ দফা ভোট-প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। রাজ্যবাসীকে এদিন অবশ্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী মোদীও।
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর মান্ডি জেলার সেরাজ আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হলেও সুরেশ ভরদ্বাজ, রামলাল মার্কন্ড, সুরভীন চৌধুরির মতো বহু মন্ত্রীই পরাস্ত হয়েছেন এবার। সিমলা গ্রামীণ আসনটি ধরে রেখেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে, কংগ্রেসের বর্তমান বিধায়ক বিক্রমাদিত্য সিং। তবে মুখ্যমন্ত্রীত্বের অন্যতম দাবিদার তথা ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক আশা কুমারীকে ডালহৌসি আসনে পর্যুদস্ত করেছেন বিজেপি’র ডি এস ঠাকুর। মান্ডি সদর আসনে নিকটতম কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখরামের ছেলে বিজেপি’র অনিল শর্মা।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে হিমাচলে জয়ের জন্য কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রকাশ্যে কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলের বহু নেতাই। এআইসিসি নেতা রাজীব শুক্লা বলেছেন, প্রিয়াঙ্কাই এবার নিজে ভোট-প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

 

 


হিমাচল বিধানসভার জন্য ভোট গ্রহণ হয়েছিল গত ১২নভেম্বর। ভোট পড়েছিল ৭৬.৪৪ শতাংশ। ৬৮ আসনের সবক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস। আপ প্রার্থী ছিল ৬৭ আসনে। এছাড়াও বহুজন সমাজ পার্টি ৫৩ আসনে এবং সিপিআই(এম) ১১ আসনে প্রার্থী দেয়। 
২০১৭ সালের সর্বশেষ বিধানসভা ভোটে বিজেপি ৪৪, কংগ্রেস ২১ এবং সিপিআই(এম) একটি আসনে জয়ী হয়েছিল। জিতেছিলেন ২জন নির্দল প্রার্থীও। সিমলা জেলার থিয়োগ বিধানসভা কেন্দ্রে গতবার জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী রাকেশ সিঙ্ঘা। নিকটতম বিজেপি প্রার্থীকে সেবার তিনি পরাস্ত করেছিলেন ১৯৮৩ ভোটে। এবার কিন্তু থিয়োগ আসনে জয় পেয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ রাঠোর। এদিন তিনি বিজেপি’র অজয় শ্যামকে ৫২৬৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন।

 

 


তবে মাত্র একদিন আগে দিল্লি পৌর কর্পোরেশন ভোটে নজরকাড়া জয় পেলেও, হিমাচলে যথেষ্ট খারাপ ফল করেছে আপ। শুধু একটি আসন না পাওয়াই নয়, ডালহৌসি, কাসুম্পটি, ছোপল, আরকি, ছাম্বা, ছুরার মতো বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ‘নোটা’র থেকেও কম ভোট পেয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। 

Comments :0

Login to leave a comment