অনিন্দ্য হাজরা, কৃষ্ণনগর
বিকেলের কৃষ্ণনগর শহর। বৃহস্পতিবার শক্তিনগর সেক্টরে প্রচারে নামেন সিপিআই(এম) প্রার্থী। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই(এম) কার্যালয় থেকে প্রচার শুরু। ৮,৯,১০,১১,১২ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে শেষ হয় প্রচার। দোগাছি পঞ্চায়েত এলাকার একটা অংশেও প্রচার হয়।
প্রচারেই দেখা যাচ্ছে মানুষের উৎসাহ। প্রার্থী আসছেন শুনে অলি-গলি থেকে শ্রমজীবী জনতা এগিয়ে আসছেন প্রার্থীকে দেখতে। সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে বেরিয়ে আসছেন সব বয়সের বাসিন্দারা।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী এসএম সাদির প্রচারে এমনই দৃশ্য ধরা দিয়েছে বারবার।
প্রসঙ্গত, রণকৌশল গত ভাবে গোটা কৃষ্ণনগর শহরকে ৬টা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আর কৃষ্ণনগর বিধানসভায় ৫টা পঞ্চায়েত রয়েছে। সেগুলোর জন্যও আলাদা করে ৫টা অঞ্চল কমিটি গঠন করে প্রচার চলছে।
নদীয়া জেলা সহ কৃষ্ণনগর শহরে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের কাছের মানুষ সিপিআই(এম) প্রার্থী। ২ লক্ষের বেশি বাসিন্দার কৃষ্ণনগর শহরের এমন কোনও প্রান্ত নেই যেখানে বাসিন্দারা তাঁকে চেনেন না।
কৃষ্ণনগর শহরের একটা অংশ পড়ে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভায়। বিজেপির টিকিটে সেই আসনে ২০২১ সালে জিতেছিলেন মুকুল রায়। তিনি এখন কোন দলে সেটা খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন! মুকুল এবং পদ্ম শোভিত দেওয়াল এখনও শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
আর এখানেই শহরে এবং গ্রামে ভেঙে পড়া পরিকাঠামো। সমান দায়ী তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই। দোগাছি পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় বিজেপি। এলাকা ঘুরলেই চোখে পড়বে জঞ্জালের একের পর এক ঢিপি। দোগাছি পঞ্চায়েতের রাস্তার অপর পারে শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তায় রাস্তায় আগাছা এবং জঞ্জালের স্তূপ।
কৃষ্ণনগর শহর নদীয়ার জেলা সদর। সেই শহরের জায়গায় জায়গায় রাস্তার কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। রাস্তায় রাস্তায় আলো নেই। সদর শহরে নেই একটা ট্র্যাবফিক লাইট পোস্ট। এই আসনে ২০০৯ থেকে জিতছে তৃণমূল। তাপস পালের পরে মহুয়া মৈত্র এই কেন্দ্রের সাংসদ। কিন্তু কেন্দ্রের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ তিনি।
লোকসভার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেল লাইন। জেলা সদর থেকে করিমপুরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। এই রাস্তার শেষ দুই প্রান্ত থেকে শেষ বাস ছাড়ে বিকেল ৫-৫:৩০ নাগাদ। তারপর? কঠিন প্রয়োজনেও রাজ্য সড়কের আলো বিহীন নিকশ কালো আধারকে মেনে নিতে হয় সাধারণ মানুষকে।
এদিন প্রচার চলাকালীন প্রার্থীর হাতে নিজেদের জমানো টাকা তুলে দেয় ৮ বছরের অদীৎসা রায় এবং ৩ বছরের সায়নী মন্ডল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চরকের জন্য ‘সন্ন্যাস নেওয়া’ খুদেদের দল আশীর্বাদ নিয়েছে ‘সাদি জেঠু’-র কাছে।
একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিজেকে কৃষ্ণনগরের ‘রানিমা’ বা ‘রাজমাতা’ বলে প্রচারে নামা অমৃতা রায়ের প্রতি অসন্তোষ। বিজেপি’র একটি অংশ এই প্রচারে অত্যন্ত বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ।
জনসংযোগ নেই প্রার্থীর। তিনি নিজেকে শুধু রাজমাতা দাবি করেই থেমে থাকেননি। ঐতিহ্যশালী রাজবাড়ির ‘ল্যান্ড পার্সেল’ দখলে নেমেছেন। শহরের পুরনো অংশে রয়েছে রাজ চক। সেখানে নবাবী আমলের দেউড়ি ও তোরণ রয়েছে। অমৃতা রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের গায়ে থাকা নকশা ধ্বংস করে সবটায় কংক্রিটের আস্তরণ লেপে নতুন করে রঙ করেছেন তিনি। ঐতিহ্য ধ্বংস করে মনগড়া ঐতিহাসিক পুনর্নির্মাণের কাজ প্রার্থী হওয়ার আগেই শুরু করেন তিনি। রানীমার এই কীর্তির বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী কার্যত ‘রতন চিনেছেন’।
Comments :0